জার্মানির কসাইখানায় শ্রমিকদের ‘আধুনিক দাসত্ব’
১৩ মে ২০২০ডর্মের অবস্থা দেখতে সেখানে যাওয়া ডয়চে ভেলের একজন প্রতিনিধি এক শ্রমিকের সঙ্গে কথা বলেছেন৷ যদিও ওই শ্রমিক নিজের নাম প্রকাশ করতে রাজি হননি৷
নর্থ রাইন-ওয়েস্টফালিয়া অঙ্গরাজ্যের ছোট্ট গ্রাম রোজেনডায় ইটের তৈরি দোতলা একটি ডর্মে বসবাস করেন ৫০ বছরের এই ব্যক্তি৷ যিনি রোমানিয়া থেকে জার্মানিতে এসেছেন৷ ইংরেজি বা জার্মান কোনো ভাষাতেই তিনি ঠিকঠাক কথা বলতে পারেন না৷
ওই ব্যক্তি ডয়চে ভেলেকে জানান, করোনা ভাইরাসের কারণে তাদের ডর্মটি লকডাউন করা হয়েছে৷
বাড়ি লকডাউন করার অর্থ যে বাড়ির সবাইকে কোয়ারান্টিনে থাকতে হবে এবং অবশ্যই বাড়ি থেকে বের হওয়া যাবে না- তা তিনি জানেন না বলেই মনে হয়েছে ডয়চে ভেলের প্রতিনিধির৷ ওই ব্যক্তি কাগজের তৈরি একটি মাস্ক পরে ছিলেন৷ যেটির ফিতা তাঁর ঘাড়ের উপর আলগা ভাবে ঝুলছিল৷
তিনি ওয়েস্টফ্লাইস নামে একটি কসাইখানায় কাজ করেন৷ যেখানে তার সঙ্গে রোমানিয়া, বুলগেরিয়া এবং পোল্যান্ডের আরো কয়েকশ শ্রমিক আছেন৷ সেখানে কয়েকজন শ্রমিকের করোনা ভাইরাস সংক্রমণ ধরা পড়ার খবর প্রকাশের পর কর্তৃপক্ষ কসাইখানাটি আপাতত বন্ধ করে দিয়েছে৷
পরে সোমবার বিকালে জানা যায়, কসাইখানাটির অন্তত ২৪৯ জন কর্মীর কোভিড-১৯ ‘পজেটিভ’৷ আক্রান্তদের অনেকেই বিদেশি শ্রমিক৷ করোনা ভাইরাস পরীক্ষার জন্য ওয়েস্টফ্লেইসের ৯৩০ জন কর্মীর নমুনা সংগ্রহ করা হয়৷
রোমানিয়ার ওই ব্যক্তি জানেন না, তিনি যে ডর্মে থাকেন সেখানে রোমানিয়ার কতজন আছেন৷ কিছুটা হিসাব করে তিনি বলেন, ১২ জন বা তার বেশি হতে পারে৷ ভবনের মেইলবক্সে থাকা নাম দেখলে বোঝা যায় সংখ্যাটা এর বেশি৷ কিন্তু ভবনের কোথাও ভাইরাসের কারণে সেটি লকডাউন করার চিহ্ন নেই৷ না কোনো সরকারি নোটিস, না হাতে লেখা কোনো চিঠি৷
প্রতিনিধি যখন ওই ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলছিলেন, তখন আরো কয়েকজন রোমানীয় শ্রমিক কাছের একটি সুপারমার্কেট থেকে বাড়ি ফেরেন৷
কোনো মালিক বিদেশ থেকে আনা নিজেদের এসব শ্রমিকদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও নিরাপত্তার দায়িত্ব নিচ্ছেন না বলে মনে করেন কোসফেল্ড গ্রিন পার্টির মুখপাত্র অ্যান-মনিকা৷
তিনি বলেন, ‘‘স্থানীয় পৌরসভা, অঞ্চল এবং রাজ্য কর্তৃপক্ষ এ সংকট সমাধানের চেষ্টা না করে বরং সমস্যাটাকে একজন আরেকজনের দিকে ঠেলে দিচ্ছেন৷ কেউই দায়িত্ব নিতে চাচ্ছে না৷
‘‘তার একটা কারণ হতে পারে, ওয়েস্টফ্লেইস সাবকনট্রাক্টরের মাধ্যমে পূর্ব ও দক্ষিণপূর্ব ইউরোপের দেশগুলো থেকে কর্মীদের নিয়োগ দেয়৷ সেক্ষেত্রে শ্রমিকদের কেউ আক্রান্ত হলেই কেবল জার্মানির সরকারি স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা তাদের বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে পারেন৷ কর্মীদের ডর্মে করোনা ভাইরাস সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়া নিয়ে ওই সাবকনট্রাক্টররা আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন বলেও আমার মনে হয় না৷’’
বিদেশ থেকে আসা এসব শ্রমিকদের সঙ্গে এমন অমানবিক ব্যবহার এলাকার স্থানীয় বাসিন্দাদের কষ্ট দেয়৷ কসাইখানার শ্রমিকদের ডর্মের কাছেই বসবাস করা এক নারী বলেন, ‘‘তারা গরীব মানুষ৷ তাদের অস্বাস্থ্যকর অবস্থায় সংক্রমিত হওয়ার জন্য ছেড়ে দেওয়া হয়েছে৷’’
স্থানীয় অনেকে এখন সংক্রমিত হওয়ার ভয়ে ওই ডর্মের কাছের সুপারমার্কেটে যাওয়া বাদ দিয়েছেন, যেখানে সাধারণত শ্রমিকরা যায়৷
ডর্ম থেকে ১৫ মিনিট গাড়ি চালিয়ে গেলেই ওয়েস্টফ্লেইস কসাইখানার প্রধান প্রবেশ দ্বার৷ সেখানে পেটার কোসেন নামে এক ব্যক্তি ও তার বন্ধুরা রোমানীয় ওই শ্রমিকদের পক্ষে প্লাকার্ড হাতে দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ জানাচ্ছেন৷ প্লাকার্ডে লেখা ‘আধুনিক দাসত্বের অবসান চাই’৷
তিনি বলেন, ‘‘কয়েক সপ্তাহ ধরে বিপর্যয় চূড়ান্ত রূপ নিয়েছে৷ অনেক শ্রমিক স্যাঁতস্যাতে ডর্ম বা জরাজীর্ণ বাড়িতে বসবাস করেন৷ সেখানে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে বসবাস অসম্ভব৷ তারা যে বাসে করে কসাইখানায় যাতায়াত করেন সেটাতেও গাদাগাদি করে বসতে হয়৷’’
এ ঘটনায় স্থানীয় পৌরসভার কাজের ধরন ও সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে৷ যেখানে সোমবার থেকে নর্থ রাইন-ওয়েস্টফালিয়া অঙ্গরাজ্যে লকডাউনের বেশ কিছু বিধিনিষেধ শিথিল করা হয়েছে৷ সেখানে, এ ঘটনার কারণে কোসফেল্ড পৌরসভাকে আগামী অন্তত ১৮ মে পর্যন্ত লকডাউনের কঠোর বিধিনিষেধ মানতে হবে৷
মিওড্রাগ সরিচ/এসএনএন