জার্মানির এক নন্দনকানন
মধ্য জার্মানির ডেসাও-ভ্যোরলিৎস গার্ডেন রিয়েলম ব্রিটিশদের বাগানের মতো৷ অষ্টাদশ শতকে এক যুবরাজ এটি নির্মাণ করেন৷ ইউরোপের অন্যতম বড় ইংলিশ পার্কগুলোর মধ্যে এটি একটি৷
যুবরাজ এবং তাঁর বাগান
মধ্য জার্মানির ‘ডেসাও-ভ্যোরলিৎস গার্ডেন রিয়েলম’ বাগানটি ১৪২ বর্গকিলোমিটার এলাকা জুড়ে গড়ে তোলা হয়েছে৷ আনহাল্ট-ডেসাও এর যুবরাজ লেওপোল্ড ফ্রানৎস এটি নির্মাণ করেন৷ সপ্তদশ শতকের শেষের দিকে শুরু হওয়া বাগানটির নির্মাণকাজ শেষ হতে সময় লাগে ৪০ বছর৷
স্বাধীনতার আস্বাদ
ইউরোপে শিক্ষা সফরের সময় এই বাগানটি গড়ে তোলার কথা ভেবেছিলেন যুবরাজ৷ বিভিন্ন স্থান থেকে এই ভাবনাগুলো জড়ো করেছিলেন তিনি৷ তবে তাঁর ভাবনার স্বতন্ত্র প্রতিফলন ঘটে বাগান নির্মাণে৷ বাগানটিতে কোনো বেড়া নেই৷ অর্থাৎ যুবরাজ বোঝাতে চেয়েছেন প্রত্যেকের জন্য এটা মুক্ত৷
নদীর ধারে
এলবে নদীর তীরে গড়ে উঠেছে এই নন্দনকানন৷ এ কারণে প্রতি বছর লাখো পর্যটক আসেন পার্কটি দেখতে৷
দার্শনিক দিক
ফরাসি দর্শনের ছাপ আপনি দেখতে পাবেন এই পার্কে গিয়ে৷ পার্কের বৈশিষ্ট্য দেখেই বোঝা যায় যুবরাজ ফরাসি দর্শনের প্রতি অনুরাগী ছিলেন৷ পার্কে একদিকে আছে একটি গির্জা অন্যদিকে আছে ইহুদি উপাসনালয়৷
ওয়াটার ওয়ান্ডারল্যান্ড
যুবরাজ ফ্রানৎস এলবে নদীর ধার ঘেষে এমনভাবে পার্কটি নির্মাণ করেছেন যে পার্কের সৌন্দর্য্য এতে আরো বেড়েছে৷ সৌন্দর্য বাড়ানোর জন্য তিনি এতে কিছু ঝর্ণা, লেক তৈরি করেছেন৷ পুরো পার্কটি ঘুরে দেখতে তাই আপনি একটি গন্ডোলায় উঠে ঘুরতে পারেন৷ এতে সময় লাগবে ৪৫ মিনিট৷
ব্রিজের ভিন্নতা
পুরো পার্ক জুড়ে রয়েছে ১৯টি সেতু বা ব্রিজ৷ ঝর্ণার ধার ঘেঁষে ঐ ব্রিজগুলো তৈরি করা হয়েছে৷ কিন্তু প্রতিটি সেতুই স্বতন্ত্র, অর্থাৎ বৈশিষ্ট্যের দিক থেকে ভিন্ন৷
গার্ডেনের প্রধান আকর্ষণ
পার্কের প্রথম ভবন এটি৷ নাম -ভ্যোরলিৎস প্যালেস৷ ১৭৭৩ সালে এর নির্মাণকাজ শেষ হয়৷ এ ভবনের নকশা করেছিলেন প্রিন্সের বন্ধু স্থপতি ফ্রিডরিশ ভিলহেল্ম ফন এর্ডমানসডোর্ফ৷
লুইসে নামের দুই স্ত্রী
এই গ্যোথিক বাড়িটি প্রিন্স নিজেই নকশা করেছিলেন৷ এই বাড়িতে তিনি তাঁর দুই স্ত্রী ও তিন সন্তানের সাথে থাকতেন৷ দ্বিতীয় স্ত্রী ছিলেন বাগানের মালির মেয়ে এবং দুই স্ত্রীরই নামের প্রথম অংশ লুইসে৷
বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় স্থান
২০০০ সালে ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় স্থান পায় পার্কটি৷
চারপাশেই প্রকৃতির অসীম সৌন্দর্য্য
এই পার্কটির মূল আকর্ষণই হলো প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য৷ যা এটি নির্মাণের শুরু থেকেই পর্যটককে আকর্ষণ করেছে৷ পার্কের মূল বৈশিষ্ট্য হলো, এর মাধ্যমে বোঝা যায় সৌন্দর্য্যকে কোনো কিছুর মধ্যে বেঁধে রাখা যায় না৷ যুবরাজের এই ভাবনা এতটাই জনপ্রিয়তা পায় যে জার্মানিসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে এই ধরনের বাগান নির্মাণ শুরু হয়৷
সবার জন্য বাগান
এই পার্কে ঢুকতে কিন্তু কোনো টিকেট লাগে না৷ অর্থাৎ সবার জন্য উন্মুক্ত এবং বছরের প্রায় পুরোটা সময় এটি খোলা থাকে৷ ২০০ বছরের এই বাগান তাই সবার বাগান হিসেবে পরিচিত হয়ে আসছে৷