‘জার্মানিতে করোনা স্বৈরতন্ত্র চলছে’
৩০ নভেম্বর ২০২০করোনা মহামারির কারণে সমাবেশের উপর সার্বিক নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও জার্মানির চরম দক্ষিণপন্থি এএফডি প্রায় ৫০০ ডেলিগেট নিয়ে দলীয় সম্মেলন আয়োজন করেছে৷ কড়া স্বাস্থ্যবিধি মেনে সপ্তাহান্তে এমন সমাবেশের অনুমতি পেলেও সম্মেলনকে ঘিরে বিতর্কের অভাব হয় নি৷ সম্মেলনে শেষের দিকে অনেককে নাকমুখ ঢাকা দিতে দেখা যায় নি৷ বাইরে প্রায় ৫০০ মানুষ এএফডি-র বিরুদ্ধে প্রতিবাদ-বিক্ষোভ দেখিয়েছে৷
জার্মান সংসদের নিম্ন কক্ষে প্রধান বিরোধী দল হিসেবে এএফডি বেশ কিছুকাল ধরে ঐক্য ধরে রাখতে হিমসিম খাচ্ছে৷ দলের জনপ্রিয়তাও কমে চলেছে৷ একদিকে বাস্তববাদী শিবির জার্মানির প্রতিবাদী ভোটারদের সমর্থন বজায় রাখতে উগ্র দক্ষিণপন্থি ভাবধারা থেকে দলকে দূরে রাখতে চায়৷ অন্যদিকে বিশেষ করে পূর্বাঞ্চলে খোলামেলা চরমপন্থি অংশ আরও মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে৷ রবিবার দলীয় সম্মেলনের শেষে ঐক্যের ডাক সত্ত্বেও বিভাজন দূর করা সম্ভব হয় নি৷ দলের শীর্ষ নেতা টিনো ক্রুপালা কমপক্ষে মতপার্থক্য প্রকাশ্যে তুলে ধরার বদলে দলীয় কাঠামোর মধ্যে আলোচনার আবেদন জানান৷
‘জার্মানির জন্য বিকল্প' নাম নিয়ে যাত্রা শুরু করে অভাবনীয় নির্বিচনি সাফল্য সত্ত্বেও এএফডি এই মুহূর্তে কিছুটা সংকটের মধ্যে রয়েছে৷ পরিস্থিতি অনুযায়ী প্রতিবাদের বিষয় বেছে নিয়ে জনসমর্থন আদায় করতে ওস্তাদ এই দল প্রথমে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও শরণার্থীদের শত্রু হিসেবে তুলে ধরেছিল৷ তারপর ইসলাম বিদ্বেষকে হাতিয়ার করে কিছু সমর্থন আদায় করে এএফডি৷ বর্তমানে করোনা সংকটের সময়ে সরকারের কড়া বিধিনিয়মের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছে দলের একটা অংশ৷ নাগরিকদের ব্যক্তিগত স্বাধীনতার দোহাই তুলে প্রতিবাদী মানুষের সমর্থন আদায় করতে চাইছে এএফডি৷ দেশে ‘করোনা ভাইরাস স্বৈরতন্ত্র’ চলছে বলে দলের কিছু নেতা মন্তব্য করছেন৷ বিভিন্ন শহরে প্রতিবাদ বিক্ষোভে দলের নেতাদের উপস্থিত থাকতেও দেখা যাচ্ছে৷ নব্য নাৎসি ও আরও চরম ভাবধারার প্রতিবাদকারীদের সঙ্গে একযোগে এমন সমাবেশে দলের নেতাদের উপস্থিতি সম্পর্কে অস্বস্তি বাড়লেও এ বিষয়ে কোনো ঐকমত্যে পৌঁছতে পারছে না এএফডি৷ দলীয় সম্মেলনেও বিরোধ মেটানো সম্ভব হয় নি৷
এখনো পর্যন্ত জার্মানির ফেডারেল ও রাজ্য সরকারগুলি করোনা মহামারি নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে যে সব পদক্ষেপ নিচ্ছে, সেগুলির প্রতি মানুষের যথেষ্ট সমর্থন দেখা যাচ্ছে৷ কিছু মানুষ অবশ্য সামাজিক ব্যবধান ও নাকমুখ ঢাকার নিয়ম অবজ্ঞা করে প্রকাশ্যে প্রতিবাদ দেখিয়ে আসছে৷ সরকারের অর্থনৈতিক প্রণোদনা ও সাহায্য সত্ত্বেও যাদের জীবিকা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, তাদের একাংশের মধ্যেও ক্ষোভ বাড়ছে৷ এএফডি জনপ্রিয়তা ফিরে পেতে এমন মানুষের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা চালাচ্ছে৷ উল্লেখ্য, শরণার্থী সংকটের সময় দলের জনপ্রিয়তা প্রায় ১৬ শতাংশ ছুঁলেও বিভিন্ন জনমত সমীক্ষা অনুযায়ী বর্তমানে মাত্র ১০ শতাংশ সমর্থন পাচ্ছে এএফডি৷ সম্প্রতি সংসদে দলের বিতর্কিত ভূমিকার কারণেও কিছু মানুষের সমর্থন হারাচ্ছে দলটি৷
এসবি/কেএম (ডিপিএ, এএফপি)