জার্মানিতে অবৈধ শিকার : ছোট করে দেখা বড় সমস্যা
৮ ফেব্রুয়ারি ২০২২ভিলি হাইমেসের শখ বন্য প্রাণী পোষা৷ কোলনের বার্গিশেস লান্ডে ৪০ বছর ধরে লাল হরিণ পুষছেন তিনি৷ ৩৮টি হরিণ আছে তার৷ এখন তার অবসর জীবন৷ হরিণদের সঙ্গেই কাটে দিনের বেশিরভাগ সময়৷
গত জানুয়ারির ঘটনা৷ হরিণদের খাওয়াচ্ছেন ভিলি, হঠাৎ পাশেই চোখে পড়লো রক্তের ধারা৷ আতঙ্কে কেঁপে উঠলো বুক৷ একটু পরেই কয়েকজন হাইকার ছুটে এসে জানালেন, বেড়ার ওপারে এক জায়গায় তারা একটা হরিণের মৃতদেহ দেখেছেন৷ ভিলি গিয়ে অবশ্য দেহ পাননি, পেয়েছেন শুধু এমন কিছু অংশ যা মানুষ খেতে পারে না৷ ডয়চে ভেলের কাছে ভিলি তাই খুব বিস্ময় নিয়ে জানতে চান, ‘‘এমন কাজ করে কেন মানুষ? শুধু টাকার জন্য? ওইটুকু মাংস বিক্রির টাকার জন্য?’’
ঘটনার সঙ্গে জড়িত কেউ এখনো ধরা পড়েনি৷ ভিলি হাইমেসের আশা কেউ হয়ত অচিরেরই ধরা পড়বে৷ আশা করার কারণও আছে৷ কয়েকদিন আগে রাতের আঁধারে একজনের ঘুরে বেড়ানোর দৃশ্য ধরা পড়েছে ক্যামেরায়৷ তবু ভিলির মনে শান্তি নেই, আছে শুধু আতঙ্ক, ‘‘সে কি আবার আসবে? আবার এসে গুলি চালাবে? আর্থিক ক্ষতির বিষয়ে আমি মোটেই চিন্তিত নই, আমি শুধু ভাবি, একটা লোক অস্ত্র হাতে আমার চারপাশে ঘুরে বেড়াচ্ছে!’’
অস্ত্রধারীরা এখন আর শুধু বন্য প্রাণীই শিকার করে না৷ মানুষের ওপরও গুলি চালায়৷
রাইনলান্ড-পালাটিনেটে অস্ত্রধারীর গুলিতে মারা যান দুই পুলিশ সদস্য৷ তদন্তকারীদের সন্দেহ, ঘটনার সঙ্গে বন্য প্রাণীর মাংসের অবৈধ ব্যবসার সম্পর্ক রয়েছে৷ ঘটনার পর স্থানীয় এক বাসা থেকে কয়েক টন বন্য প্রাণীর মাংস উদ্ধার করেছে পুলিশ৷
পশু শিকারের ধরন ও হার
জার্মানিতে বৈধভাবে পশু শিকারের সুযোগ রয়েছে৷ পরিসংখ্যান বলছে, প্রতিবছর দশ লাখেরও বেশি হরিণ এবং নয় লাখের বেশি বুনো শূকর বৈধভাবেই শিকার করা হয় জার্মানিতে৷ সেই তুলনায় অবৈধভাবে পশু শিকারের ঘটনা অনেক কম- পুলিশের হিসেব অনুযায়ী বছরে এক হাজারের চেয়ে একটু বেশি৷ বিশেষজ্ঞেরা অবশ্য মনে করেন, প্রকৃত হিসেবটা তার চেয়ে অনেক বেশি৷
তাছাড়া পুলিশের কাছে অভিযোগ করা মামলাগুলোর অধিকাংশই রাস্তায় কোনো বন্য প্রাণীর গাড়ির চাকায় চাপা পড়ার৷ হ্যাঁ, জার্মানির আইন অনুযায়ী, বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে বন্য প্রাণীর এমন মৃত্যুও অবৈধ পশু শিকার৷ প্রতি বছর সারা দেশে এভাবে ২৫০০-র মতো হরিণের মৃত্যু হয়৷ তার মধ্যে মাত্র হাজার খানেক ঘটনা অবৈধ শিকার হিসেবে পুলিশের কাছে নথিভুক্ত হয়৷
লঘু শাস্তি
অবৈধ শিকারের শাস্তি নির্ধারণ করা আছে জার্মানিতে৷ তবে সেই শাস্তি খুব কঠোর নয়৷ রাইনলান্ড-পালাটিনেটের ওই ব্যক্তির মতো কারো কাছে প্রচুর অবৈধ মাংস পাওয়া গেলে তার বড়জোর পাঁচ বছরের কারাদণ্ড হতে পারে৷
এসিবি কেএম (এএফপি, ইএফই, ডিপিএ)