1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

জার্মানিতে অবসরের বয়স ৭০ করা নিয়ে বিতর্ক

২৯ আগস্ট ২০২২

এক বা দুই বছর নয়, জার্মানিতে চাকরি থেকে অবসরের বয়স পাঁচ বছর বাড়ানোর কথাও বলছেন কেউ কেউ৷ তারা মনে করেন, অবসরের বয়স ৭০ করলে এক ঢিলে দুই পাখি মরবে, নইলে ভবিষ্যতে সমূহ বিপদ হবে৷

https://p.dw.com/p/4GBHr
Symbolfoto Arbeiten im Alter
ছবি: Dwi Anoraganingrum/Geisler-Fotop/picture alliance

বিপদের আলামত অবশ্য ইতিমধ্যে বেশ দেখা যাচ্ছে৷ প্রতি বছরই অবসর নিচ্ছেন অনেকে৷ কিন্তু নতুন নিয়োগ সেই অনুপাতে হচ্ছে না৷ ফলে বাড়ছে শূন্য পদ৷ এ বছরের প্রথম চার মাসে মোট শূন্য পদের সংখ্যা রেকর্ড ছাড়িয়েছে৷ জানা গেছে, গত এপ্রিল শেষে জার্মানিতে মোট শূন্য পদের সংখ্যা ছিল ১৭ লাখ ৪০ হাজার৷ জার্মানির পুনরেকত্রীকরণের পর এই প্রথম সংখ্যাটা এই পর্যায়ে গেল৷

পাশাপাশি বাড়ছে প্রবীণের সংখ্যা আর কমছে তরুণের সংখ্যা৷ কেন্দ্রীয় পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, গত জুলাই মাসে জার্মানির মোট জনসংখ্যার মাত্র ১০ ভাগের বয়স ছিল ১৫ থেকে ২৪ বছর৷ অথচ ৬৫ বা তার বেশি বয়সির ছিল ১৫ থেকে ২৪ বছর বয়সিদের দ্বিগুণ, অর্থাৎ ২০%৷

এভাবে একদিকে শূন্য পদ ক্রমশ বেড়ে চলা এবং বিপরীতে তরুণের সংখ্যা সেই অনুপাতে না বাড়ায় পেনশন সিস্টেমের ওপর চাপ বাড়ছে৷ আর তাই উঠেছে অবসরে যাওয়ার বয়স ৭০ বছর করে এক ঢিলে দুই পাখি মারা, অর্থাৎ, শূন্য পদ এবং পেনশন ব্যবস্থার ওপর চাপ কমানোর প্রস্তাব৷

সাম্প্রতিক সময়ে এই প্রস্তাব প্রথম শোনা গেছে জার্মানির মেটাল  অ্যান্ড ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং ইন্ডাস্ট্রিজ- এর কর্মচারি ইউনিয়নের সভাপতি স্টেফান ভোল্ফ-এর কণ্ঠে৷ চলতি মাসের শুরুর দিকে তিনি চাকরি থেকে অবসরে যাওয়ার বয়স ৭০ করার পক্ষে যুক্তি দেখান৷ জার্মানিতে চাকরি থেকে অবসরে যাওয়ার বয়স ৬৫ থেকে ৬৭ করার প্রস্তাব আগে থেকেই  বিভিন্ন পর্যায়ে আলোচিত হচ্ছে৷ যাদের জন্ম ১৯৬৭ সালের পরে, তাদের ৬৭ বছর পর্যন্ত চাকরিতে রাখার সিদ্ধান্ত পর্যায়ক্রমে চালু করার প্রক্রিয়া ইতিমধ্যে শুরুও হয়েছে৷ তবে অবসরের বয়স ৭০ করার পক্ষে এখনো দৃশ্যত বেশি মানুষ নেই৷ তাই স্টেফান ভোল্ফের প্রস্তাবের তীব্র প্রতিবাদ করেছেন জার্মানির ট্রেড ইউনিয়ন সংগঠন এবং বামপন্থি রাজনৈতিক দলগুলোর নেতারা৷ বাম দলের নেতা ডিটমার বার্ট্শ মনে করেন অবসরের বয়স ৭০ করার প্রস্তাব স্রেফ ‘সমাজবিরোধী আবর্জনা'৷

Infografik Alterspyramide Deutschlands 2022 EN

পেনশন ব্যবস্থায় চাপ বাড়বে কেন?

জার্মানির পেনশন সিস্টেম অনুযায়ী, চাকুরিজীবীরা প্রতি মাসে নিজেদের বেতনের ৯% বয়স্কভাতা খাতে জমা দেন৷ সরকারের পক্ষে থেকেও দেয়া হয় সমপরিমান, অর্থাৎ আরো ৯%৷ এই টাকাটা খরচ যারা কর্মজীবন শেষ করে ইতিমধ্যে অবসর ভাতায় জীবনযাপন শুরু করা মানুষদের পেছনে৷

যেহেতু তরুণ জনগোষ্ঠী বাড়ছে না, অথচ চাকরি ক্ষেত্রে শূন্য পদ বাড়ছে, তাই অবসরে যারা গিয়েছেন, তাদের প্রাপ্য ভাতা দেয়া ধীরে ধীরে কঠিন হয়ে পড়ছে৷

তো পেনশন ব্যবস্থায় এমন সংকট দেখা দেয়ার আশঙ্কায় কিন্তু এবারই প্রথম পড়েনি জার্মানি৷ ১৯৮০-র দশকেও অর্থনীতিবিদরা সরকারকে এ বিষয়ে সতর্ক করেছিলেন৷ কিন্তু সরকার তখন বিষয়টিকে তেমন আমলে নেয়নি৷ তখনকার শ্রম মন্ত্রী নর্বার্ট ব্ল্যুম অর্থনীতিবিদদের আশঙ্কার জবাবে বলেছিলেন, ‘‘আমাদের পেনশন ব্যবস্থা খুব নিরাপদ৷''

১৯৮৬ সালে শ্রম মন্ত্রী ছিলেন সিডিইউ নেতা৷ এখন এ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে রয়েছেন সামাজিক গণতন্ত্রী (এসপিডি) দলের হুবার্টুস হাইল৷ তবে দল ভিন্ন হলেও পেনশন ব্যবস্থার বিষয়ে দুজনের অবস্থানই আপাতত এক৷ তাই জার্মানির বর্তমান শ্রমমন্ত্রীও অবসরের বয়স ৭০ করা ঠিক হবে কিনা- এই বিতর্ককে উড়িয়ে দিয়েছেন ‘ফ্যান্টম বিতর্ক' বলে৷

তবে বিশ্লেষকরা মনে করেন, এভাবে বেশিদিন তরুণদের সংখ্যা কমতে থাকার পাশাপাশি চাকরিতে শূন্যপদ বাড়ার দ্বিমুখী সমস্যাকে অগ্রাহ্য করা যাবে না৷

Infografik Anzahl Menschen im Rentenalter im Ländervergleich EN

মিউনিখ সেন্টার ফর দ্য ইকোনমিক্স অব এজিং-এর ইয়োহানেস রাউশ মনে করেন, ‘‘অবসরের বয়স বাড়ানো সবসময়ই খুব অজনপ্রিয় একটি ভাবনা৷ এ কারণেই ভাবনাটিকে রাজনীতিবিদরা খারিজ করে দেন৷'' কিন্তু ডেনমার্ক, ইতালি এবং এস্তোনিয়ায় ইতিমধ্যে তরুণ কমে যাওয়া এবং শূন্য পদ বাড়তে থাকায় অবসরের বয়স বাড়ানোর প্রক্রিয়া শুরু করছে৷

জার্মানির অর্থনীতি গবেষণা ইন্সটিটিউট-এর উপ-প্রধান ইয়োহানেস গেয়ার মনে করেন, ইউরোপের সর্ববৃহৎ অর্থনীতির দেশটিতেও অবসরের বয়স বাড়ানো উচিত৷ তার মতে, অবসরের বয়স বাড়ালে সমস্যা হবে, তবে তাতে কোনো বিপর্যয় নেমে আসবে না৷ বরং সাময়িক ধাক্কা সামলে নেবে কয়েক বছরের মধ্যে৷

পেনশন ব্যবস্থায় সম্ভাব্য সংকটের বিষয়টি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘‘ ডেমোগ্রাফিক পরিবর্তন যে হচ্ছে তার খরচ কে কতটা বহন করবে, তা একেবারেই বিতরণবিষয়ক প্রশ্ন৷ অবসরের বয়স বাড়ালে কর্মজীবী মানুষদের ওপর তার একটা চাপ অবশ্যই পড়বে৷ বিশেষ করে যাদের বেশিদিন বাঁচার সম্ভাবনা কম এবং যাদের স্বাস্থ্যগত সমস্যা আছে, চাপটা তাদের ওপরই বেশি পড়বে৷ জনসংখ্যার বেশ উল্লেখযোগ্য একটা অংশ তো অবসর জীবন শুরুর আগেই মারা যান৷''

গেয়ার অবশ্য শুধু অবসরের বয়স বাড়ানোকেই সমস্যা সমাধানের একমাত্র উপায় মনে করেন না৷ এর বাইরেও দুটি পদক্ষেপের কথা বলেছেন তিনি, এক, অভিবাসনকে উৎসাহিত করা, দুই, যারা ‘মিনিজব' করছেন, তাদের ধীরে ধীরে পূর্ণ সময়ের কাজের সুযোগ দেয়া৷ তার ভাষায়, ‘‘আমাদের অভিবাসন দরকার৷ জার্মানিতে কাজ করার মতো লোকের সংখ্যা বাড়াতে বাইরে থেকে লোক আনা খুব দরকার৷'' তিনি আরো বলেন, ‘‘আমাদের দেশে অনেক মানুষই মিনিজব করেন৷ তারা খুব কম বেতনে কম কাজ করেন৷ ফলে তারা করের আওতায় আসেন না, সামাজিক নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠায় আর্থিক অবদানও খুব একটা রাখেন না৷ তাদের নিয়মিত কাজে নিয়োজিত করলে সুফল পাওয়া যাবে৷''

হেলেন হুইটল, লিসা হ্যানেল/ এসিবি