জলহস্তির বিষয়আশয়
ইংরেজি নাম হিপোপটেমাস, বাংলায় যাদের বলা হয় জলহস্তি৷ এদের বাস শুধুমাত্র আফ্রিকায়, তাই উপমহাদেশের মানুষদের কাছে এরা চিড়িয়াখানা ও কিংবদন্তির জীব৷ কিন্তু জীবটি যে অদ্ভুত, তeতে কোনো সন্দেহ নেই!
জলেই জন্ম
জল বলতে জলের নীচে! চিন্তার কিছু নেই, বাচ্চা হিপ্পোরা জন্মেই সাঁতরাতে পারে৷ এছাড়া তারা জলের নীচেই মায়ের দুধ খেতে পারে৷ জলের ওপরে থাকতে একবার বুক ভরে নিঃশ্বাস নিয়ে, তারপর ডুব দেবার সময় কান আর নাকের ফুটোগুলো বন্ধ রাখতে পারলেই হলো৷
দাঁত বটে!
এ দাঁত আবার কাজে লাগে শুধু ঝগড়া-কাজিয়ার সময়৷ দাঁতগুলো সুবিশাল ও কোদালে হলে কি হবে, দাঁতে দাঁত ঘষে শান দিয়ে একেবারে ছুরির ফলার মতো ধার৷
যার গোবর যতো বড়...
জলহস্তিদের মধ্যে শক্তিপ্রদর্শনের পন্থাই হলো একগাদা গোবর সৃষ্টি করে৷ ভাবটা: আমার গোবরের পরিমাণটা দেখেছো তো? তাহলে এবার শক্তির পরিমাণটা ভাবো...
নিরামিষাশী
নিরামিষ খেয়েই হিপ্পোদের ওজন সাড়ে চার টন – মানে সাড়ে চার হাজার কিলোগ্রাম – হতে পারে৷ আফ্রিকার রোদ আর গরমে বেচারাদের কষ্ট হয় বলে হিপ্পোরা খাস খেতে জল থেকে ডাঙায় ওঠে সূর্য ডুবলে৷ ভোরবেলা সূর্য ওঠার আগে তারা জলে ফেরে৷ মজার কথা, হিপ্পোরা জলজ লতাপাতা খেতে পছন্দ করে না৷
নিজস্ব সান মিল্ক
জলহস্তিদের গা থেকে এক ধরনের লাল-কমলা রঙের তরল পদার্থ বেরোয়, যা সানট্যান লোশানের মতো তাদের ত্বককে তীব্র রৌদ্রকিরণে পুড়ে যাওয়ার হাত থেকে রক্ষা করে৷ লাল পিগমেন্টটি অতিবেগুনি রশ্মিকে ঢুকতে দেয় না এবং জীবাণুনাশক হিসেবে কাজ করে৷
মানুষের পক্ষে বিপজ্জনক জীব
আফ্রিকায় হাতি কিংবা সিংহের আক্রমণে যত লোক প্রাণ হারায়, তার চেয়ে অনেক বেশি মানুষ মারা যান জলহস্তির আক্রমণে – সম্ভবত মানুষ জলে নামলেই হিপ্পোরা সেটাকে আগ্রাসন বলে ধরে নেয় বলে৷ হিপ্পোর হাঁ এক মিটারের চেয়ে বেশি বড় আর ঐ দাঁত দিয়ে পাথর ভাঙা যায়৷
ঘাম নেই, স্বস্তি শুধু পানিতে
ঘাম বা তেল বার করে দেবার জন্য জলহস্তিদের শরীরে কোনো গ্ল্যান্ড নেই৷ তাই তাদের ঠান্ডা হওয়ার একমাত্র পন্থা হলো জলে নামা৷
শুধু চামড়ার ওজন ২৭০ কিলো!
জলহস্তিদের চামড়ায় তিনটে পরত থাকে৷ সব মিলিয়ে একটি দেড় টন ওজনের জলহস্তির চামড়াটার ওজন হবে ২৭০ কিলোগ্রাম৷ তা সত্ত্বেও তারা এই চামড়ার ভিতর দিয়ে অনেক কিছু অনুভব করতে পারে৷
দৌড়তে পারে, কিন্তু লাফ দিতে পারে না
হাতি আর গণ্ডারের পরে জলহস্তিরাই হলো পৃথিবীর তৃতীয় বৃহত্তম স্থলচর জীব৷ দেখতে অত মোটা হলে কি হবে, তারা ঘণ্টায় ৩০ কিলোমিটার গতিতে দৌড়তে পারে – তবে লাফ দিতে পারে না৷ কেন বলুন তো?
অসামাজিক
৫০টি অবধি জলহস্তি মিলে একসঙ্গে বাস করলেও, পরস্পরের মধ্যে বিশেষ ভাবসাবের লক্ষণ দেখা যায় না৷ দঙ্গলে কে এলো আর কে গেল, তাতেও কারো কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই৷ মা আর বাচ্চা ততক্ষণই একসঙ্গে থাকে, যতক্ষণ বাচ্চাটা না বড় হয়৷