জলবায়ু পরিবর্তনে উদ্বাস্তু বাড়ছে বাংলাদেশে
৩০ অক্টোবর ২০২১পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম সম্প্রতি এক ভার্চুয়াল সেমিনারে বলেছেন, ‘‘বাংলাদেশের এক কোটি মানুষ এরইমধ্যে জলবায়ু উদ্বাস্তুতে পরিণত হয়েছেন৷ সমূদ্রের পানির উচ্চতা বৃদ্ধি, নদীর পানির লবণাক্ততা বাড়া, নদী ভাঙ্গন এবং ঝড়, জলোচ্ছ্বাসের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ বেড়ে যাওয়ার অভিঘাতে এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হচ্ছে৷’’
বিশ্বব্যাংকের হিসাব জানাচ্ছে, বাংলাদেশে এখন প্রতিবছর চার লাখ মানুষ গ্রাম ছেড়ে শহরে চলে আসছেন স্থায়ীভাবে৷ এই সংখ্যা প্রতিদিন দুই হাজারের মতো৷ তাদের মধ্যে শতকরা ৭০ ভাগ জলবায়ু উদ্বাস্তু৷
বাংলাদেশের দক্ষিণের জেলা বাগেরহাটের মোংলা উপজেলার বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) আহ্বায়ক নুর আলম শেখ বলেন, ‘‘লবনাক্ততা বাড়ছে৷ বাড়ছে নদী ভাঙন৷ যা প্রাণ ও প্রকৃতির ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে৷ কৃষি নির্ভর এলাকার মানুষ কাজ হারিয়ে শহরে যাচ্ছেন কাজের খোঁজে৷ কেউ যাচ্ছেন একা আবার কেউ সপরিবারে৷ তারা শুধু ঢাকা নয় অন্য শহরেও যাচ্ছেন কাজের খোঁজে৷’’
তিনি বলেন, ‘‘শুধু গরিব মানুষ নন, ধনীরাও এর শিকার হচ্ছেন৷ খাবার পানির সংকট সবাইকে বিপর্যস্ত করছে৷ লবণ পানির কারণে এই এলাকায় প্রতি তিনজনে একজন উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন৷ জলবায়ু উদ্বাস্তু হয়ে মানুষ এলাকা ছাড়তে বাধ্য হচ্ছেন৷’’
এমন বাস্তবতায় রোববার স্কটল্যান্ডের গ্লাসগোতে শুরু হতে যাওয়া কপ সম্মেলনে বাংলাদেশ জলবায়ু তহবিলের ওপর জোর দেবে৷
বাংলাদেশের প্রতিবেদন
বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে একটি প্রতিবেদন তুলে ধরা হবে জাতিসংঘের জলবায়ু সম্মেলন কপ-২৬ এ৷ তাতে বলা হয়েছে, ২০২১-২২ অর্থ বছরে জলবায়ু সংশ্লিষ্ট খাতে বাংলাদেশের বরাদ্দের পরিমাণ দুই হাজার ১৮৫ কোটি ৫৩ লাখ টাকা৷ তবে করোনার কারণে আগের চেয়ে এই বরাদ্দ কমেছে৷ জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মেকাবিলায় বাংলাদেশ নিজস্ব অর্থে জলবায়ু ট্রাস্ট ফান্ড গঠন করেছে৷ জলবায়ু এবং এর তহবিল নিয়ে কাজ করছে ২৫টি মন্ত্রণালয়৷
বাংলাদশে এ পর্যন্ত গ্লোবাল এনভায়রনমেন্ট ফ্যাসিলিটি থেকে ৪৩টি প্রকল্পে ১৬ কোটি মার্কিন ডলার অনুদান পেয়েছে৷ গ্রিন ক্লাইমেট ফান্ড থেকে নয় কোটি ৪৭ লাখ ডলার, ক্লাইমেন্ট ইনভেস্টমেন্ট ফান্ড থেকে ১১ কোটি ডলার অর্থ পেয়েছে৷ এর বাইরে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন উৎস থেকে ১০৩ কোটি ৭০ লাখ ডলার অনুদান পেয়েছে৷ আর সরকার প্রতি বছর জলবায়ু পরিবর্তন অভিযোজনে ১০০ কোটি ডলার ব্যয় করছে রাজস্ব খাত থেকে৷
তহবিলের উপর জোর দেয়া হবে
খ্যাতিমান পরিবেশবিদ ও জলবায়ু গবেষক ড. আতিক রহমান মনে করেন, বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় সঠিক পথেই আছে৷ বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েও নিজেদের উদ্যোগে প্রভাব মোকাবিলার চেষ্টা করছে৷ খাদ্য নিরাপত্তার জন্য কাজ করছে,কৃষি উৎপাদন বাড়াচ্ছে৷ কারিগরি দিকেও কাজ হচ্ছে৷ বাংলাদেশ তার উৎপাদনের সাথে রপ্তানি বাড়াচ্ছে৷
তিনি বলেন, ‘‘যারা জলবাযুর এই ক্ষতির জন্য দায়ী তাদের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে৷ ফান্ড দিতে হবে৷ এই জায়গায় আমাদের শক্ত অবস্থান নিতে হবে৷ এটা বাংলাদেশের একার কাজ নয়৷ সবাইকে সঙ্গে নিয়ে করতে হবে৷’’
তার মতে এজন্য সরকার, এনজিও ও সাধারণ মানুষকে একযোগে কাজ করতে হবে৷
বাংলাদেশের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরির্তন বিষয়ক মন্ত্রী মো. সাহাবুদ্দিন বলেন, ‘‘এবার আমরা ফান্ড ভালো পাবো বলে আশা করি৷ বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর নেতৃত্ব দিচ্ছেন৷ যারা পরিবেশের ক্ষতি করছে সেই দেশগুলোর প্রতি বছর এক লাখ মিলিয়ন ডলার করে দেয়ার কথা৷ এইবার আশা করছি তারা এটা দিতে সম্মত হবেন৷’’
আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘বাংলাদেশ জলবায়ু ট্রাস্ট ফান্ডের মাধ্যমে নিজস্ব অর্থায়নে কাজ করে যাচ্ছে৷ অনেক মানুষ জলবায়ু উদ্বাস্তু হচ্ছেন৷ এই সংখ্যা বাড়ছে৷ যারা ঘরবাড়ি হারাচ্ছেন, কৃষি জমি হারাচ্ছেন তাদের জন্য সরকার কাজ করছে৷ তাদের পুনর্বাসন করা হচ্ছে৷’’
পরিসংখ্যান অনুযায়ী, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ২০৫০ সাল নাগাদ দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বেশ কিছু দেশের প্রবৃদ্ধি চার শতাংশ কমে যেতে পারে৷