জর্ডানে পানি সংকট কাটাতে উদ্যোগ
৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৯পানি সরবরাহের অবনতি
জর্ডানের আন-নুজার গ্রামের মানুষ উদ্বেগের সঙ্গে পানির ট্যাংকের দিকে তাকিয়ে থাকতে অভ্যস্ত৷ ইব্রাহিম ইউসেফ আবুরোওয়ার পুরানো দিনের কথা মনে আছে, যখন কাছের এক নদী থেকে গ্রামে পানি আসতো৷ সে প্রায় ৩০ বছর আগের কথা৷ তিনি বলেন, ‘‘ষাটের দশকে এখানে সবসময়ে যথেষ্ট পানি থাকতো৷ তখন নদী থেকে প্রায় ৩০ সেন্টিমিটার ব্যাসের নল এখানে পানি আনতো৷ নদীর পানি কমতে থাকায় ১৯৮৪ সালে সেই সংযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয়৷’’
বৃদ্ধ মানুষটি যে ওয়াদি আলওয়ালা সংযোগের কথা বলেন, আজ সেখান থেকে ফোঁটা ফোঁটা পানি পড়ে৷ জর্ডানের বেশিরভাগ অঞ্চলেই একই রকম পরিস্থিতি দেখা যায়৷ বছরে ২০০ মিলিমিটারেরও কম বৃষ্টির কারণে দেশটি বিশ্বের সবচেয়ে শুকনা জায়গাগুলির অন্যতম হিসেবে পরিচিত৷ একইসঙ্গে জনসংখ্যা বেড়ে চলেছে৷ বিশেষ করে শহরের মানুষ আরও বেশি করে পানি খরচ করছে৷ মাদাবার পরিস্থিতিও সে রকম৷
পুরানো, ব্যয়বহুল প্রযুক্তি
সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৮০০ মিটার উচ্চতার এই অঞ্চলে প্রায় ২ লক্ষ মানুষ বসবাস করে৷ কয়েক'শ কিলোমিটার দূরে দেশের নীচু এলাকা থেকে পাম্পের মাধ্যমে সেখানে পানীয় জল সরবরাহ করা হয়৷ মানুষের চাহিদা পূরণ করতে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়৷ সেই প্রক্রিয়াও অত্যন্ত ব্যয়বহুল৷ সেই প্লান্ট ডর্ডানের মোট বিদ্যুতের প্রায় ১৫ শতাংশ ব্যবহার করে৷ পুরানো প্লান্টের কারণে মূল্যবান পানির অপচয় হয়৷
বাসাম হায়েক এই পরিস্থিতি বদলাতে চান৷ ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে তিনি জার্মানির আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা জিআইজেড-এর হয়ে কাজ করেন৷ তিনি মাদাবায় পানি সরবরাহ ব্যবস্থা ঘুরে দেখেছেন৷ পুরানো পাম্প চালাতে কত পরিমাণ বিদ্যুৎ লাগে, তিনি তা দেখিয়ে দিচ্ছেন৷ আধুনিক এক প্লান্টের মাধ্যমে হায়েক এক তৃতীয়াংশ বিদ্যুৎ সাশ্রয় করতে চান৷ বাসাম বলেন, ‘‘এভাবে সমাজে পানির সরবরাহ টেকসই করে তোলা সম্ভব হবে৷ তাছাড়া জ্বালানি সাশ্রয়ের অর্থ দিয়ে এই প্লান্ট ও নেটওয়ার্কের রক্ষণাবেক্ষণ করা যাবে৷ সব মিলিয়ে এই ইতিবাচক প্রভাব গোটা সমাজের উপরও পড়বে৷’’
মুশকিল আসান আধুনিক প্লান্ট
জর্ডানে ওয়াটার প্লান্টের জন্য বিদ্যুতের মূল্য ৪০ শতাংশ বেড়ে যাবার ফলে বাস্তবে পানির মূল্যও সম্ভবত বাড়তে চলেছে৷ কিন্তু সাশ্রয়ী এই পাম্প মূল্য কম রাখতে সাহায্য করছে৷ একইসঙ্গে গোটা অঞ্চলে পানি সরবরাহ আরও নির্ভরযোগ্য করে তোলার উদ্যোগ চলছে৷
নতুন পাম্প সবে বিমানবন্দরে শুল্কের ছাড়পত্র পেয়েছে৷ তার পরেই ট্রাক এসে গেছে৷ পাম্পগুলির মূল্য প্রায় আড়াই লক্ষ ইউরো৷ জার্মানির জিআইজেড সেই ব্যয় বহন করেছে৷ বাসাম হায়েক মনে করেন, বিশেষ করে পরিবেশ সংরক্ষণের লক্ষ্যে এটা ভালো বিনিয়োগ৷ কারণ এতকাল বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য লক্ষ লক্ষ টন কার্বন-ডাই-অক্সাইড নির্গমন করা হয়েছে, যা পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর৷ বাসাম হায়েক বলেন, ‘‘বছরে প্রায় ৮ লক্ষ কিলো সিওটু কমানো সম্ভব হবে৷ শুধু জুলাই মাসে এই একটি স্টেশনেই তা সম্ভব হয়েছে৷ গোটা মাদাবা অঞ্চল, সেখানকার পানির সরবরাহ ব্যবস্থার কারণে বছরে প্রায় ২ লক্ষ ৮০ হাজার কিলোগ্রাম কার্বন-ডাই-অক্সাইড নির্গমন ঘটে৷ আরও এমন স্টেশন আছে৷ আমরা তাই সার্বিকভাবে গোটা প্রণালীর ক্ষেত্রে এই প্রযুক্তি প্রয়োগের কথা ভাবছি৷’’
পানির গুরুত্ব
এই অঞ্চলে অস্তিত্বের লড়াইয়ে পরিবেশ ও পানি চিরকাল গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল৷ মাদাবার এই গির্জার মেঝের মোজাইকে জর্ডান নদী ফুটিয়ে তোলা হয়েছে, যা ডেড সি-তে গিয়ে পড়ে৷ ষষ্ঠ খ্রিষ্টাব্দে সৃষ্ট এই শিল্পকর্ম তা আরও স্পষ্ট করে দিচ্ছে৷ কয়েক বছর আগে কাছের এক জায়গায় মিশরের ইঞ্জিনিয়ার জাকি শাহেম এক নার্সারি খোলেন৷ সেখানে গ্রিনহাউস, কয়েকটি বিট গাছ আছে৷ অবশ্যই নিজস্ব পানির আধারও রয়েছে৷ জাকি বলেন, ‘‘সমস্যা হলো, পর্যাপ্ত পানি নেই৷ সে কারণে আমাকে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বর্জ্য পানি পরিশোধন করতে হয়৷ অল্প খরচে ভালোভাবেই তা করা যায় বটে, কিন্তু সে তো বর্জ্য পানি৷ কখনো পানি সরবরাহ বন্ধ হলে এখানে সব গাছ লোপ পাবে৷ সবকিছু নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে৷’’
মাদাবার আশেপাশে গ্রামগুলিতে বাসাম হায়েক একই রকম কথা শোনেন৷ তিনি বলেন, ‘‘ভবিষ্যৎ প্রজন্মও এই প্রভাব টের পাবে বলে আমাদের বিশ্বাস৷ আরও ভালো পরিষেবা, আরও ভালো রক্ষণাবেক্ষণ হবে৷ এবং পানির সরবরাহ অব্যাহত থাকবে৷’’
গ্রামবাসীর জন্য নির্ভরযোগ্য সরবরাহ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ৷ নতুন পাম্পের কল্যাণে ঠিক সময় কলে পানি এলে ইব্রাহিম খুব খুশি হবেন৷
ডান হিয়র্শফেল্ড/এসবি