সিপ্রাস-এর দ্বিতীয় সনদ
২১ সেপ্টেম্বর ২০১৫গত জানুয়ারি মাসেই গ্রিসের ভোটারদের একটি বড় অংশ সিরিজা জোটের নেতাকে ভোট দিয়েছিলেন এই আস্থায় যে, বিগত পাঁচ বছরের ব্যয়সংকোচ নীতির সামাজিক ফলশ্রুতি তিনি কিছুটা সহনীয় করে তুলতে পারবেন৷ বস্তুত সিপ্রাস তখন সাশ্রয় নীতির অন্ত ঘোষণা করেন৷ কিন্তু বাস্তবে তার কিছুই হয়নি৷ বেশ কয়েক মাস ধরে টানাপোড়েনের পর সিপ্রাসকে শেষ মুহূর্তে আন্তর্জাতিক দাতাবর্গের সঙ্গে একটি তৃতীয় আর্থিক সাহায্যের চুক্তি করতে হয় – এবং সেই পন্থায় ইউরোজোন থেকে গ্রিসের অসময়ে বিদায় নেওয়া রোখা সম্ভব হয়৷
এবার সিপ্রাস জনগণের কাছ থেকে একটি দ্বিতীয় সনদ পেলেন৷ গ্রিকদের একটি সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ দৃশ্যত সিপ্রাসের বাস্তববোধে সম্মত এবং তিনি যে সামাজিক দুঃখকষ্ট ন্যূনতম পর্যায়ে রেখে প্রয়োজনীয় সংস্কার সাধনে সক্ষম, এই বিশ্বাস রাখেন৷ ওদিকে সিরিজা (বানানভেদে সিরিসা) থেকে যে দলছুট বামপন্থিরা বেরিয়ে গেছেন, তারা সংসদে আসনগ্রহণের জন্য প্রয়োজনীয় ভোটের বেড়া পর্যন্ত পার হতে পারেননি৷
প্রথম সিপ্রাস = দ্বিতীয় সিপ্রাস?
তবুও প্রশ্ন উঠতে পারে, সিপ্রাস ও তার চরম বামপন্থি ভারমুক্ত সিরিজা দল গ্রিসের আধুনিকীকরণ ঘটাতে সমর্থ কিনা৷ বিগত পাঁচ বছরে পাঁচ-পাঁচটি বিভিন্ন রাজনীতি ও জোটের সরকার সেই অসাধ্যসাধন করতে গিয়ে ঘায়েল হয়েছেন৷ ওদিকে ঋণদাতাদের দাবির কোনো নড়চড় নেই: কার্যক্ষম পাবলিক সেক্টর, প্রতিযোগিতার উপযোগী বেসরকারি অর্থনীতি, দুর্নীতি ও কর ফাঁকি দেওয়ার বিরুদ্ধে অভিযান৷ প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দলগুলি তা করতে পারেনি এবং সিরিজা-ও ক্ষমতায় আসার পর তাদের প্রথম সাত মাসে এ সব ক্ষেত্রে বিশেষ সাফল্য দেখাতে পারেনি৷ বরং প্রথম সিরিজা সরকার খানিকটা অতীতমুখো মনোভাব প্রদর্শন করে যেখানে পেরেছেন, দরাজ হাতে ভরতুকি বিলিয়েছেন৷
দ্বিতীয় সিপ্রাস সরকারের নীতি কি আলাদা হবে? সম্ভবত নয়৷ নির্বাচনের দিন সন্ধ্যাতেই স্পষ্ট হয়ে যায়, সিপ্রাস কিভাবে তাঁর সরকারের সংসদীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতার ব্যবস্থা করবেন৷ পূর্বাপর তাঁর জোট সহযোগী হবে পানোস কামেনোস-এর দক্ষিণপন্থি ‘‘স্বাধীন গ্রিক’’ গণদল৷ দৃশ্যত সিপ্রাস সামাজিক গণতন্ত্রী পাসক বা মধ্যমপন্থি ‘তো পোতামি’-র মতো ইউরোপীয় ইউনিয়নের পক্ষপাতী দলগুলিকে সরকারে আনার কথা বিবেচনা পর্যন্ত করেননি৷ সিপ্রাস দৃশ্যত দেশের পরিস্থিতির টেকসই উন্নতির জন্য কোনো প্রশস্ত রাজনৈতিক ভিত্তির খোঁজ করছেন না৷ একদিকে তিনি বামপন্থিদের নৈতিক ও রাজনৈতিক সততার সাফাই গাইছেন; অন্যদিকে তিনি দক্ষিণপন্থিদের সঙ্গে জোট বাঁধছেন৷
পুরনো কাসুন্দি
সাম্প্রতিক একটি সাক্ষাৎকারে সিপ্রাস স্বীকার করেছেন যে, আন্তর্জাতিক ঋণদাতাদের সঙ্গে মাসের পর মাস আলোচনায় তিনি ‘‘অর্থের ক্ষমতা’’ উপলব্ধি করতে পেরেছেন৷ ‘ক্যারিসম্যাটিক’ কিন্তু অনভিজ্ঞ সিপ্রাস ইউরোপীয় ইউনিয়নের কাঠামোয় গ্রিসের আধুনিকীকরণের প্রয়োজনীয়তা ঠিকমতো উপলব্ধি করতে পেরেছেন কিনা, তা নিয়ে সন্দেহ থাকতে পারে৷ তাঁর মান্ধাতার আমলের বামপন্থি বাগাড়ম্বর, গ্রিসের পুরনো পোড় এবং মার খাওয়া রাজনৈতিক দলগুলির কায়দায় যেন-তেন-প্রকারেণ ক্ষমতা আঁকড়ে থাকা, যেভাবে তিনি অবলীলাক্রমে জনগণের একটি বড় অংশের জীবনযাত্রার মান বিপন্ন করতে চলেছেন – এ সব দেখে ভবিষ্যৎ সম্পর্কে বিশেষ আশার উদ্রেক হয় না৷ গ্রিসের ইতিহাসে এই প্রথম যে ৪৫ শতাংশ ভোটার আদৌ ভোট দিতে যাননি, সেটাও একটা লক্ষণ বটে৷