1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘ছাত্র সমাজ'-এর নবান্ন অভিযান ঘিরে সাজ সাজ রব

২৬ আগস্ট ২০২৪

আরজি কর ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ডে দোষীদের শাস্তির দাবিতে আন্দোলন এখনো চলছে৷ এ পর্যায়ে মঙ্গলবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পদত্যাগের দাবিতে নবান্ন অভিযানের ডাক দিয়েছে ‘পশ্চিমবঙ্গ ছাত্র সমাজ'।

https://p.dw.com/p/4jvC9
পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য সচিবালয় নবান্ন। এখানেই মুখ্যমন্ত্রীর অফিস।
পশ্চিমবঙ্গে রাজ্য সচিবালয় নবান্ন অভিযানের ডাক দিয়েছে 'ছাত্র সমাজ' নামে একটি সংগঠন। ছবি: Satyajit Shaw/DW

পশ্চিমবঙ্গ ছাত্র সমাজ এই ডাক দিয়েছে সামাজিক মাধ্যমে। আরজি করে চিকিৎসকের ধর্ষণ ও হত্যার পর সামাজিক মাধ্যমেই মেয়েদের রাত দখলের ডাক দেয়া হয়েছিল। সেই আন্দোলন অভাবিত সাফল্য পায়। সমাজের সব শ্রেণি, পেশার মানুষ অংশ নেয় সেই আন্দোলনে৷

কারা এই আন্দোলনের পিছনে?

তিনজন ছাত্র এই ডাক দেয়ার পিছনে। তারা হলেন সায়ন লাহিড়ি, প্রবীর দাস ও শুভঙ্কর হালদার। প্রবীর বীরভূমের ছেলে, কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের এমএ। মৌলানা আজাদ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিএ করছেন সায়ন। শুভঙ্কর কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ে বিএড পড়েন।

সম্প্রতি কলকাতা প্রেস ক্লাবে সাংবাদিক বৈঠক করে তারা দাবি করেছেন, সামাজিক মাধ্যমেই তাদের পরিচয়। তাদের দাবি, নির্যাতিতার বিচার, দোষীদের শাস্তি ও মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ।

কেন মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ চাওয়া হচ্ছে, জানতে চাওয়া হলে সায়ন বলেছেন, ''মুখ্যমন্ত্রীর হাতেই স্বাস্থ্য এবং পুলিশ দপ্তর আছে। ফলে তাকেই পদত্যাগ করতে হবে। তার দলে কি অন্য কেউ নেই? নিজে সরে গিয়ে তাকে তো দায়িত্ব দিতে পারেন।''

বিরোধীরা কী বলছে?

নবান্ন অভিযানের আয়োজক শুভঙ্কর হালদার বলেছেন, তারা চান, রাজ্যের সব মানুষ তাদের অভিযানে শামিল হোন। সবার কাছে যাতে বার্তা যায়, সেজন্য রাস্তায় নেমে প্রচার করা হচ্ছে।

প্রস্তুত রাখা হয়েছে জল-কামান। প্রচুর পুলিশ নামানো হচ্ছে। নবান্নর কাছের ছবি।
নবান্ন অভিয়ান আটকাতে পুলিশ নানান ব্যবস্থা নিয়েছে। ছবি: Satyajit Shaw/DW

প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর রঞ্জন চৌধুরী ইতিমধ্যে ছাত্রদের এই আন্দোলনকে সমর্থন করেছেন। ছাত্ররা দাবি করেছেন, অধীর আন্দোলনে যোগ দেবেন। কিন্তু অধীর বলেছেন, তিনি যোগ দেয়ার কথা একবারের জন্যও বলেননি। অধীর বলেছেন, তাকে যখন এই বিষয়ে প্রশ্ন করা হয়, তখন এর পিছনে বিজেপি আছে, এমন কথা শোনা যায়নি।

বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বলেছেন, একটা অরাজনৈতিক সংগঠন এই অভিযানের ডাক দিয়েছে। ফলে ব্যক্তিগতভাবে যে কেউ যেতে পারেন। যদি পুলিশি বাড়াবাড়ি হয়, বিজেপি ছাত্রদের পাশে থাকবে। বিরোধী নেতা শুভেন্দু অধিকারী বলেছেন, পতাকা ছাড়া কর্মসূচি হবে। ফলে বিজেপি সদস্য, সমর্থকরা চাইলে সেখানে যোগ দিতে পারবেন।

সিপিএমের যুব নেত্রী মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায় বলেছেন, নবান্ন অভিযানের সঙ্গে তারা বা বামপন্থী কোনো ছাত্র, যুব, মহিলা সংগঠন যুক্ত নেই। ওই দিন তারা গোটা বাংলায় নির্যাতিতার খুনের বিচার চাইতে রাস্তায় নামবেন।

তৃণমূলের বক্তব্য

সোমবার সাংবাদিক সম্মেলন করে রাজ্যের মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য ও তৃমমূল নেতা কুণাল ঘোষ বলেছেন, বিজেপি চক্রান্ত করছে। তারা মৃতদেহের উপর রাজনীতি করতে চায়।

কুণাল বলেছেন, ''যদি দাবি ওঠে, জাস্টিস ফর আরজি কর, তাহলে আমরাও আছি। যদি দাবি করেন, মুখ্যমন্ত্রীকে পদত্যাগ করতে হবে, তাহলে বলবো, ময়দানে বুঝে নেবে বাংলার জনতা।''

তার দাবি, মিছিলে রাজ্যের বাইরে থেকে মানুষ আনা হতে পারে, পুলিশের নকল পোশাক পরিয়ে গুলি চালানো হতে পারে।

নবান্নর সামনে ব্যারিকেড করা হচ্ছে।
নবান্নকে ঘিরে গড়ে তোলা হবে তিন স্তরের সুরক্ষা বলয়। ছবি: Satyajit Shaw/DW

পুলিশের ব্যবস্থা

রাজ্য পুলিশের এডি়জি মনোজ ভার্মা জানিয়েছেন, ''নবান্ন একটা সুরক্ষিত এলাকা। এখানে কোনো আন্দোলন করতে গেলে অনুমতি নিতে হয়। পশ্চিমবঙ্গ ছাত্রসমাজ কোনো অনুমতি নেয়নি। পশ্চিমবঙ্গ ছাত্রসমাজ নামে স্বীকৃত কোনো সংগঠনও নেই।''

পুলিশের দাবি, এই অভিযানের মধ্যে  কিছু  দুষ্কৃতী ঢুকে গোলমাল পাকাবার চেষ্টা করবে।

পুলিশ জানিয়েছে, মঙ্গলবার নেট পরীক্ষা আছে। প্রচুর ছাত্র-ছাত্রী নেট পরীক্ষা দেবেন। সকাল সাড়ে নয়টা থেকে দুপুর সাড়ে বারোটা এবং আবার বেলা তিনটে থেকে সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত নেট পরীক্ষা হবে। আন্দোলনের জন্য ছাত্র-ছাত্রীরা অসুবিধায় পড়তে পারেন। তবে রাস্তায় পর্যাপ্ত পুলিশি ব্যবস্থা থাকবে।

উদ্যোক্তারা বেলা একটায় কলেজ স্ট্রিট ও হাওড়ার সাঁতরাগাছিতে সবাইকে জমায়েত হতে বলেছে। পুলিশ সাতটি জায়গায় ব্যারিকেড করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তিনটি বলয় থাকবে সেখানে। প্রথমে গার্ডরেল। সেটা টপকে আসতে পারলে বাঁশের সিজার ব্যারিকেডের মুখে পড়তে হবে। তারপর থাকবে ইস্পাতের গার্ড ওয়াল। প্রতিটি ব্যারিকেডে প্রায় ছয়শ পুলিশ কর্মী থাকবেন। এই বলয় ভেঙে বেরোতে গেলে রবার বুলেট ও জলকামান ব্যবহার করা হবে। উচ্চপদস্থ পুলিশ অফিসাররা প্রতিটি ব্যারিকেডের কাছে থাকবেন।

কলকাতার একাধিক রাস্তায় ভোর চারটে থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত কোনো পণ্যবাহী গাড়ি চলতে পারবে না। পুলিশ জানিয়েছে, গণপরিবহন চালু থাকবে।

জিএইচ/এসিবি(পিটিআই, এএনআই)