ছবি নকল করাটাও যখন শিল্প
দক্ষিণ চীনের দাফেন এলাকায় মোট হাজার দশেক আঁকিয়ের বাস, যাঁরা বিশ্বের ছবির বাজারে বছরে মোট পঞ্চাশ লাখ ‘আর্ট কপি’ সরবরাহ করে থাকেন– ফান গখ থেকে মোনে, কেউই বাদ যান না৷
মানুষের জন্য আঁকা
বিশ্বের প্রতি পাঁচটি ‘আর্ট কপি’, অর্থাৎ সুবিখ্যাত চিত্রকলার অনুকরণে সৃষ্ট ছবির একটি আসে দক্ষিণ চীনের শেনঝেন শহরের দাফেন ‘পটুয়াপাড়া’ থেকে৷ মাত্র এক বর্গমিটার এলাকার বস্তিটিতে বিশ্বের যাবতীয় নামীদামী চিত্রকরদের ছবির নকল করা হয়৷
একসঙ্গে অনেকগুলো
...আঁকেন এই অসাধারণ নকলনবিশরা৷ পরতের পর পরত রং চড়িয়ে ছবি আঁকা হয়৷ একটা পরতের রং শুকানোর আগে তার উপর আঁকা কিংবা অন্য কিছু করা চলে না৷ তাই যখন একটা ছবির রং শুকাচ্ছে, তখন আরেকটা ছবির কাজ করেন ‘শিল্পীরা’৷
পটুয়াপাড়া
বস্তির মাঝখানের বড় রাস্তায় একটির পর একটি ‘স্টুডিও’৷ বাইরে ফুটপাথের ওপরেও আঁকা চলছে৷ তবে ‘শিল্পীদের’ পারস্পরিক সম্পর্ক বেশ ভালো৷ গরম দেশে সকলে মিলে খোলা আকাশের নীচে ছবি আঁকতে খারাপ লাগবে কেন?
‘মাস্টারপিস’ কেনার মওকা
পাশের সরু গলিঘুঁজিতেও আঁকা চলেছে৷ ছোট্ট একটি টেবিল ফ্যান যতটুকু হাওয়া বা প্রেরণা দিতে পারে! এই সব ‘কপিক্যাট’ আর তাঁদের গ্রাহকদের সবচেয়ে প্রিয় চিত্রকরদের মধ্যে রয়েছেন ফরাসি ইম্প্রেশনিস্ট ক্লদ মোনে৷ তাঁর ১৮৭২ সালে আঁকা ‘সূর্যোদয়’ ছবিটি ডানদিকে দেখা যাচ্ছে৷
ভিনসেন্ট ফান গখ
ওলন্দাজ চিত্রকর ফান গখ ফসল তোলার এই দৃশ্যটি এঁকেছিলেন ১৮৮৮ সালে – আজ যা অমূল্য৷ দাফেনের পটুয়ার আঁকা অনুকৃতিটি কিন্তু ৫০ ইউরো দামেই কেনা যাবে৷ আর ছবির দাম তো কে বড় শিল্পী, কে ছোট শিল্পী, শুধু সে অনুযায়ী নয়৷ ভিয়েনার আর্ট নুভো চিত্রকর গুস্টাফ ক্লিম্ট-এর ছবির দাম বেশি ওঠে, কেননা তাঁর ছবিতে রং বেশি, তাই একাধিকবার রং বসাতে হয়, তাতে সময়ও বেশি লাগে৷
শুধু রংতুলি নয়, সাথে চাই স্মার্টফোন
স্মার্টফোনের কল্যাণে শিল্পীর আসল ছবিটি সবসময় চোখের সামনে রেখে আঁকা যায়৷ এছাড়া বিভিন্ন ‘চ্যাট’ প্রোগ্রামে নিত্যনতুন ফরমায়েশ আসে৷ স্মার্টফোন দিয়ে ছবির কেনাবেচাও চলে৷ খদ্দেররা যে সবাই টুরিস্ট, এমন নয়৷ পশ্চিমের বড় বড় ফার্নিচার কোম্পানি প্রচুর ছবির অর্ডার দিয়ে থাকে – ফ্রেমে বাঁধানো ছবি পশ্চিমে ঘর বা বাড়ি সাজানোর অপরিহার্য অঙ্গ৷
রঙের বন্যা
বছর ত্রিশেক আগে হংকংয়ের এক আর্ট ডিলার দাফেনের পটুয়াদের আবিষ্কার করেন৷ আশির দশকের শেষে দাফেন ছিল শ’দুয়েক মানুষের একটি পল্লী৷ আজ সেই পল্লী দশ হাজার শিল্পীর এক পটুয়াপাড়া, যেখানে আঁকা ছবি বিশ্বের লক্ষ লক্ষ ড্রয়িং রুমে শোভা পাচ্ছে৷
প্রকাশ্যে নগ্নতা?
ছবিতে হলে কোনো আপত্তি নেই৷ পশ্চিমি শিল্পকলায় মানুষের শরীরের সৌন্দর্য একটি উপাস্য ও উপভোগ্য বস্তু৷