ছবিতে ফুটবল হৃদয়সম্রাট পেলে
এডসন আরান্তেস ডো নাসিমেন্তো বা পেলেকে সর্বকালের অন্যতম সেরা ফুটবলার বলা হয়। তার জীবনের কিছু দিক নিয়ে এই ছবিঘর।
প্রথম ক্লাব
পেলের প্রথম ক্লাব ছিল সান্তোস। এখানেই তিনি সবচেয়ে বেশি বছর খেলেছেন। মাত্র ১৫ বছর বয়সে পেশাদার ফুটবলার হিসাবে এই ক্লাবে খেলা শুরু করেন তিনি। ক্লাবের হয়ে ইউরোপ ও অ্য়ামেরিকা সফরে গেছেন। ছবিতে ১৯৭০ সালে ক্লাবের হয়ে ওয়াশিংটন ডার্টসের হয়ে একটি ফ্রেন্ডলি ম্যাচ খেলতে দেখা যাচ্ছে।
বিশ্বকাপে প্রথম খেলা
১৯৫৮ সালে সুইডেন বিশ্বকাপে সোভিয়েত ইউনিয়নের বিরুদ্ধে দলের তৃতীয় ম্যাচ খেলেন পেলে। এই মহান ফুটবলারের বিশ্বকাপ অভিযানের সেই শুরু। তখন তার বয়স ১৭ বছর। বিশ্বের তরুণতম ফুটবলার হিসাবে বিশ্বকাপ খেললেন পেলে। সেমিফাইনালে হ্য়াটট্রিক করলেন ফ্রান্সের বিরুদ্ধে। ফাইনালে সুইডেনকে দুই গোল দিলেন। সবমিলিয়ে ওই বিশ্বকাপে ছয় গোল দেন পেলে।
অসাধারণ দক্ষতা
পেলে বলতেন, ফুটবল হলো সুন্দর খেলা। তিনিও সেভাবেই খেলার চেষ্টা করতেন। আর মাঠে ছড়িয়ে পড়ত তার পায়ের শিল্পসুষমা। তিনি খেলতেন মূলত স্ট্রাইকার পজিশনে। তার গতি, সৃষ্টিশীলতা ও অনন্য দক্ষতার সাহায্যে প্রতিপক্ষের ডিফেন্স ছারখার করে দিতেন। তার ড্রিবলে ছিটকে পড়তেন প্রতিপক্ষের ফুটবলাররা। তার বাইসাইকেল কিক ছিল দৃষ্টিনন্দন। এই কিকটি তিনি ১৯৬৮-তে মেরেছিলেন।
১৯৬৬ সালে যা হলো
পরপর দুইবার বিশ্বকাপ জেতার পর ১৯৬৬ সালে ইংল্যান্ডে অনেক আশা নিয়ে গিয়েছিল ব্রাজিল। বুলগেরিয়ার বিপক্ষে ফ্রিকিক থেকে গোল করেন তিনি। পরপর তিনটি বিশ্বকাপে গোল করলেন এই মহান ফুটবলার। কিন্তু বুলগেরিয়া ও পর্তুগালের ডিফেন্ডাররা পেলের বিরুদ্ধে সমানে ভয়ংকর ফাউল করতে থাকলেন। প্রথম রাউন্ড থেকে বিদায় নিল ব্রাজিল।
তৃতীয় বিশ্বকাপ জয়
১৯৭০ সালের বিশ্বকাপ ছিল পেলের ফুটবল জীবনের শেষ বিশ্বকাপ। ফাইনালে ইটালিকে ৪-১ গোলে হারালো ব্রাজিল। সতীর্থদের কাঁধে চেপে মাঠ ছাড়লেন পেলে। তৃতীয়বার বিশ্বকাপ জেতার অর্থ হলো, জুলে রিমে ট্রফি বরাবরের মতো ব্রাজিলের কাছে থেকে গেল। চারটে গোল দিয়েছিলেন পেলে। সেরা ফুটবলার হিসাবে গোল্ডেন বুটও পেলেন।
দেশের হয়ে শেষ খেলা
১৯৭১ সালের ১৮ জুলাই। ব্রাজিলের হয়ে তার ৯৭তম ও শেষ ম্য়াচটি খেললেন পেলে। যুগোস্লাভিয়ার বিরুদ্ধে। রিও ডি জেনেইরোর মারকানা স্টেডিয়ামে এক লাখেরও বেশি সমর্থকদের সামনে। তখন পেলের বয়স ৩০। তারপরেও অনেকদিন ক্লাব ফুটবলে খেলেছেন। কিন্তু সেরা ফর্মে থাকতে থাকতে তিনি তিনি দেশের হয়ে খেলা থেকে অবসর নিয়েছিলেন।
নিউ ইয়র্ক কসমস
১৯৭৪ সালে পেলে ক্লাব ফুটবল থেকেও অবসরের কথা ঘোষণা করেন। কিন্তু এক বছর পর তিনি অবসর ভেঙে নিউ ইয়র্ক কসমসে খেলার কথা জানান। পেলের মিশন ছিল বেসবলে আসক্ত একটি দেশে ফুটবলের জনপ্রিয়তা বাড়ানো। তিনি ১৯৭৭ সালে নর্থ অ্যামেরিকা সকার লিগ জিততে কসমসকে প্রভূত সাহায্য করেন।
বিদায় ফুটবল
১৯৭৭ সালের ১ অক্টোবর। তার পুরনো ক্লাব সান্তোসের বিরুদ্ধে কসমসের ম্যাচ খেলে অবসর নিলেন পেলে। ছবিতে দেখা যাচ্ছে তার ক্লাবের টিমমেট বেকেনবাওয়ার এবং দেশের হয়ে খেলা সতীর্থ ফুটবলার কার্লোস অ্যালবের্টোকে। আছেন বক্সার মহম্মদ আলিও।
ফিল্ম স্টার
১৯৮১ সালে পেলে অভিনয় করলেন এসকেপ টু ভিক্টরি ছবিতে। নাৎসি টিমের বিরুদ্ধে যুদ্ধবন্দি অ্যালায়েড ফোর্সের ফুটবলারদের নিয়ে ম্যাচকে ঘিরে ছবি। হলিউড অভিনেতাদের সঙ্গে অভিনয় করলেন পেলেও।
ব্রাজিলের ক্রীড়ামন্ত্রী
ফুটবল থেকে অবসর নেয়ার পরেও নানা ধরনের কাজের সঙ্গে নিজেকে যুক্ত করেছেন পেলে। ১৯৯৪ সালে ইউনেস্কো তাকে গুডউইল অ্যাম্বাসেডর করে। একবছর পর ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট তাকে এক্সট্রাঅর্ডিনারি মিনিস্টার অফ স্পোর্টস করেন। পেলে তখন ব্রাজিলে খেলার আসর থেকে দুর্নীতি দূর করতে একটি আইন প্রস্তাব করেন। এই আইনের নাম পেলে ল।
ফুটবলার ছেলে
পেলে তিনবার বিয়ে করেন। অনেকগুলি সন্তানের জলক তিনি। এর মধ্যে তার ছেলে এডিনহো পেশাদার ফুটবল খেলতেন। তিনি গোলকিপার ছিলেন। স্যান্টোসেও খেলেছেন। কিন্তু মাদক ও অর্থ পাচারের অভিযোগে তাকে দীর্ঘ কারাদণ্ড দণ্ডিত করে আদালত।
স্বাস্থ্য খারাপ হলো
পরের দিকে তার শরীর খারাপ হয়। ২০১২-তে তার কোমরে অস্ত্রোপচার হয়। ২০১৮ সালে রাশিয়ায় বিশ্বকাপে তাকে হুইলচেয়ারে দেখা যায়। ছবিতে আরেক মহান ফুটবলার ম্যারাডোনা এবং রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুটিনের সঙ্গে দেখা যাচ্ছে পেলেকে। এর একমাস পরেই কিডনি থেকে পাথর বের করার জন্য তিনি হাসপাতালে ভর্তি হন। ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছিলেন তিনি।