1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

চুড়িহাট্টা অগ্নিকাণ্ডে ৭১ জনের মৃত্যুর জন্য দায়ী আটজন

২১ ফেব্রুয়ারি ২০২২

পুরান ঢাকার চুড়িহাট্টায় অগ্নিকাণ্ডে ৭১ জনের মৃত্যুর জন্য ওয়াহেদ ম্যানশনের মালিক, প্রসাধনী সামগ্রীর গুদামের ভাড়াটেসহ আটজনের দায় পেয়েছে পুলিশ৷

https://p.dw.com/p/47KyL
ছবি: bdnews24.com

ডয়চে ভেলের কনটেন্ট পার্টনার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম জানায়, পুলিশের তিন বছরের তদন্তে প্রসাধনী সামগ্রীর গুদামে থাকা দাহ্য পদার্থই ভবনটিকে অগ্নিকুণ্ড করে তোলার কথা উঠে এসেছে৷

২০১৯ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি পুরান ঢাকার চকবাজারের চুড়িহাট্টায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে  ৭১ জনের মৃত্যু হয়, আহত হন অনেকে৷ চার তলা ভবন ওয়াহিদ ম্যানশন থেকে আগুনের সূত্রপাত হওয়ার পর তা ছড়িয়ে পড়লে আশপাশের পাঁচটি ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়৷ গায়ে গায়ে লেগে থাকা ভবনগুলোতে থাকা রাসায়নিক দ্রব্য, প্লাস্টিক ও পারফিউমের দোকান-গুদাম থাকায় মুহূর্তেই গোটা এলাকা অগ্নিকুণ্ডে পরিণত হয়৷ আগুনের প্রচণ্ডতায় দুমড়ে-মুচড়ে ছাই হয়ে যায় দোকান-পাট, রিকশা-গাড়ি৷

ফায়ার সার্ভিসের ৩৭টি ইউনিট ১৪ ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার পর ৬৭ জনের পোড়া লাশ উদ্ধার করা হয় এবং পরে মৃতের সংখ্যা দাঁড়ায় ৭১৷ 

অগ্নিকাণ্ডে নিহত মো. জুম্মনের ছেলে মো. আসিফ একটি মামলা করেন৷ তিন বছর তদন্তের পর গত ১৫ ফেব্রুয়ারি হাসান সুলতান, হোসেন সুলতান সোহেল, ইমতিয়াজ আহমেদ, মোজাম্মেল ইকবাল, মোজাফফর উদ্দিন, জাওয়াদ আতিক, মোহাম্মদ নাবিল ও মোহাম্মদ কাশিফক মোট আটজনকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র দেন চকবাজার থানার ওসি আবদুল কাইয়ুম৷

এদের মধ্যে হাসান সুলতান ও হোসেন সুলতান দুই ভাই ওয়াহেদ ম্যানশনের মালিক৷ ১০ কাঠা জমিতে নির্মিত ভবনটির দোতলার পুরোটা জুড়েই ছিল গুদাম৷ অন্যান্য তলায় ছিল বিভিন্ন দোকান৷ বাকি আসমিরা সবাই পার্ল ইন্টারন্যাশনাল নামে একটি প্রতিষ্ঠানে মালিক-কর্মকর্তা-কর্মচারী৷ পার্লের গুদাম থেকেইআগুন ছড়ায়৷ আসামিদের মধ্যে ইমতিয়াজ পার্ল ইন্টারন্যাশনালের মালিক, ইকবাল পরিচালক এবং মোজাফফর ব্যবস্থাপক৷ জাওয়াদ আতিক, নাবিল ও কাশিফ পার্ল ইন্টারন্যাশনালের কর্মী৷

অভিযোগপত্রে বলা হয়, অবৈধ জেনেও ‘পার্ল ইন্টারন্যাশনাল'কে আবাসিক ভবনে রাসায়নিকের গুদাম ভাড়া দিয়েছিলেন হাসান ও হোসেন দুই ভাই৷ আর সেই প্রতিষ্ঠানের মালিক-কর্মীরা জান-মালের ক্ষতির কথা জেনেও দাহ্য পদার্থের মজুত, সংমিশ্রণের কাজ করতেন৷ তাদের অবহেলাই এতগুলো মানুষের করুণ মৃত্যুর কারণ৷  

বাড়িওয়ালা হাসান সুলতান আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে বলেন, পার্ল ইন্টারন্যাশনাল ভাড়া নেওয়ার সময় জানিয়েছিল তারা বিভিন্ন প্রকার পারফিউম, বডি লোশন, অলিভ ওয়েল, বেবি পাউডার, বেবি লোশন, কটন বাড, ডায়াপার ইত্যাদির ব্যবসা করে৷ প্রতিষ্ঠানের ‘বিহারি' মালিক গুদামে তেমন আসতেন না৷ ‘বিহারি' দুই ভাই নাবিল ও কাশিফ কোম্পানিতে সেলসম্যানের কাজ করতেন৷

পুলিশ অভিযোগপত্রে মোট ১৪১ জনকে সাক্ষী করেছে৷ অভিযোগপত্রটি আদালত আমলে নেওয়ার পর অভিযোগ গঠন হলে তবেই আসামিদের বিরুদ্ধে বিচার শুরু হবে৷ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের পর পুলিশ আসামিদের আটজনকেই গ্রেপ্তার করলেও পরে কয়েকজন জামিনে ছাড়া পেয়ে যান৷

অভিযোগপত্র দাখিলকারী কর্মকর্তা ওসি কাইয়ুম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "আমরা তদন্তে পাওয়া আমাদের অনুসন্ধান দাখিল করেছি৷ সব আসামিই এখন আদালতের এখতিয়ারে৷”তবে কতজন আসামি এখন বন্দি সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট করে বলতে পারেননি তিনি৷

ভবনটিতে পার্লের ৩টি গুদাম ছিল

প্রতিষ্ঠানটি নানা রকম প্রসাধনীর ব্যবসা করে৷ ওয়াহেদ ম্যানশনের দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ তলায় পার্ল ইন্টারন্যাশনালের গুদাম ছিল৷

অভিযোগপত্রে ফায়ার সার্ভিসের প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে বলা হয়েছে, ভবনটির গুদামে বিপুল পরিমাণ বডি স্প্রে, অ্যারোসল, গ্যাস লাইটারের ফুয়েল মজুদ ছিল৷ পুলিশের অভিযোগপত্রে বিস্ফোরক অধিদপ্তরের প্রতিবেদনের আলোকে পার্ল ইন্টারন্যাশনালের গুদামকেই অগ্নিকাণ্ডের উৎসস্থল বলে চিহ্নিত করে হয়েছে৷

অতিদাহ্য সুগন্ধী

অভিযোগপত্রে বলা হয়, অগ্নিকান্ডের ঘটনার পর পুলিশ চার ধরনের ৪৯টি আলামত সংগ্রহ করে৷ সুগন্ধিগুলো থেকে আট রকমের উচ্চ মাত্রার দাহ্য বস্তুর উপস্থিতি পাওয়া যায় বলে সিআইডির পরীক্ষাগার থেকে জানানো হয়৷ অভিযোগপত্রে আগুনের বিস্তারের কারণ হিসেবে অতি দাহ্য সেই রাসায়নিককে দায়ী করা হয়েছে, যা ১০ রকমের (ব্রান্ডের) সুগন্ধির ক্যানিস্টার ও বোতলে ছিল৷

সেসময়ে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান,আগুন লাগার পর ওয়াহিদ ম্যানশনে সশব্দে ক্যানগুলো বিস্ফোরিত হয় এবং বিস্ফোরিত জ্বলন্ত ক্যান উড়ে এসে রাস্তায়ও পড়ে৷ সুগন্ধী তৈরিতে ব্যবহৃত অতি দাহ্য রাসায়নিকগুলোর মধ্যে রয়েছে, ইথাইল অ্যালকোহল, বিউটেন, আইসো বিউটেন, প্রোপেইন, বুটোক্সি ইথানল, গ্লাইকল ইথার, ডাইইথাইল থালেট ও প্রোপিলিন৷ 

স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান, এসব রাসায়নিক নানাভাবে সুগন্ধি তৈরিতে ব্যবহার করে সুগন্ধির রং ও গন্ধের তারতম্য  আনা হয়৷ চকবাজার বাংলাদেশের প্রসাধন শিল্পের অন্যতম বৃহৎ পাইকারি বাজার৷ তবে চকবাজারে নকল প্রসাধনী তৈরি ও বিক্রির কুখ্যাতিও রয়েছে৷

চকবাজারে দীর্ঘদিনের ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিডিনিউজকে বলেন, এখানকার অনেক ব্যবসায়ী চীন থেকে সস্তায় নামী-দামী ব্রান্ডের বোতল বা ক্যান বানিয়ে এনে সেগুলোতে বিভিন্ন ধরনের সুগন্ধি রাসায়নিক ভরেন৷ ওয়াহেদ ম্যানশনেও মূলত এমন সুগন্ধি তৈরি হত৷

বিডিনিউজকে পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের সম্পাদক ফেরদৌস আহমেদ উজ্জল বলেন, ‘‘সেই নিমতলীর আগুনের পর থেকেই পুরান ঢাকা থেকে রাসায়নিকের গুদাম ও কারখানাগুলো সরিয়ে নিতে সরকারকে চাপ দেওয়া হচ্ছে ৷ কিন্তু এখনো সেটার বাস্তবায়ন হচ্ছে না ৷ পুরান ঢাকার বাড়ি মালিকেরাও লোভে পড়ে বসতবাড়িতে কারখানা বা গুদাম ভাড়া দিচ্ছেন ৷’’ পুরান ঢাকার পরিস্থিতি না বদলালে আবারও এরকম প্রাণহানি হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেন ফেরদৌস আহমেদ উজ্জল৷

এনএস/এসিবি (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম) 

২০১৯ সালের ছবিঘরটি দেখুন