চীনে বিক্ষোভ শেষ, করোনায় সংক্রমণ ও মৃত্যু শুরু
২৮ ডিসেম্বর ২০২২করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ চীনে প্রথম দেখা দিলেও বিশ্বের অনেক দেশ যখন সংক্রমণ রোধে হিমশিম খেয়েছে বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশ তখন কঠোর লকডাউন এবং বাধ্যতামূলক স্বাস্থ্যবিধির মাধ্যমে পরিস্থিতি দ্রুতই নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসে৷ অথচ বিশ্বের প্রায় সব দেশ যখন করোনা-পূর্ব স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরছে, চীনে আবার শুরু হয়েছে করোনার বিরুদ্ধে কঠিন লড়াই৷
সোমবার করোনা-সম্পৃক্ত কারণে মারা গিয়েছিল একজন, মঙ্গলবার সেই সংখ্যা বেড়ে হয়েছে তিন৷ সংক্রমণের হার যেভাবে বাড়ছে তাতে মৃত্যুর হারও দ্রুত বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে৷ অনেক আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন স্বাস্থ্য-বিশেষজ্ঞ মনে করেন, খুব দ্রুত লকডাউন এবং স্বাস্থ্যবিধি প্রত্যাহার করার কারণে এই পরিস্থিতে পড়েছে চীন৷ সমাজতান্ত্রিক দল শাসিত দেশটির সরকার সম্প্রতি লকডাউন ও স্বাস্থ্যবিধিবিরোধী প্রবল বিক্ষোভের মুখে করোনার বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান থেকে সরে আসে৷ তুলে নেয়া হয় লকডাউন৷ মাস্ক পরা এবং বিভিন্ন স্থানে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার নির্দেশও প্রত্যাহার করা হয়৷ বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, স্বাস্থ্যবিধি না মেনে বিক্ষোভ করতে গিয়ে প্রথমে সংক্রমণের হার বাড়ানো হয় আর সংক্রমিতরা অনেক মানুষের সংস্পর্শে যাওয়ার ফলে সংক্রমণ দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছে৷
মঙ্গলবার চীনের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের শহর চেংদুর এক হাসপাতালের সামনে খুব ভিড় দেখা যায়৷ হাসপাতালের কর্মী হুয়াক্সি বলেন, গত কয়েকদিনে কাজের চাপ অনেক বেড়েছে৷ আরেক কর্মীর দাবি, তার ৩০ বছরের কর্মজীবনে এ হাসপাতালে এত ব্যস্ততা কখনো দেখেননি৷ পাশের এক ক্লিনিকেও ছিল উপচে পড়া ভিড়৷ ক্লিনিকটির জরুরি বিভাগের এক কর্মী বলেন, ‘‘এখানে আসা রোগীদের অধিকাংশই কোভিডে আক্রান্ত৷’’
চীনের সরকার জানিয়েছে, বর্তমান পরিস্থিতিতে শুধু নিউমোনিয়া এবং শ্বাসকষ্টে ভুগে কোভিড-১৯-এ সংক্রমিত কেউ মারা গেলে, তার হিসেবটাা এখন রাখা হচ্ছে৷
মঙ্গলবার ডংগিয়াও-এর কার পার্কের কাছের ফিউনেরাল হোমে প্রচণ্ড ভিড় দেখা যায়৷ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মী বলেন, ‘‘এখন প্রতিদিন অন্তত ২০০ বার এ কাজ (দাহ) করতে হচ্ছে৷ ব্যস্ততা এত বেড়েছে যে আমি খাওয়ার সময়ও পাইনি৷ সব কিছু খুলে দেয়াার পর থেকে এ অবস্থার শুরু৷ তার আগে প্রতিদিন বড় জোর ৩০ থেকে ৫০টি (মৃতদেহ দাহ) হতো৷’’ চোংদু ক্রেমাটোরিয়ামের এক কর্মী জানান, সেখানে নিয়ে আসা মৃতদের বেশির ভাগই করোনায় মৃত৷ তিনি বলেন, এখন কেউ মৃতদেহ সৎকারের জন্য এলে তাকে আগামী ৩ জানুয়ারি পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে, তার আগের দিনগুলো অগ্রিম বুক করা হয়েছে৷
অন্যদিকে বেইজিং চাওয়াং হাসপাতালের কর্মকর্তা ঝ্যাং ইউহুয়া জানান, জরুরি বিভাগে দিনে আগে যেখানে একশ’র মতো রোগী আসতো, সেখানে এখন আসছে ৪৫০ থেকে ৫০০ রোগী৷ তবে তার মতে, এই রোগীদের অধিকাংশই প্রবীন এবং বার্ধক্যজনিত রোগের কারণে এমনিতেই তাদের অবস্থা খুব খারাপ৷
এসিবি/ কেএম (রয়টার্স)