1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

চালকদের জন্য ডোপ টেস্ট

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯

পরিবহণ শ্রমিকদের বিশেষ করে চালকদের মাদকাসক্তি সড়ক দুর্ঘটনার অন্যতম একটি কারণ৷ আর এটা পরিবহণ মালিকদেরও ভাবিয়ে তুলছে৷ তাই তারা চান চালকসহ পরিবহণ শ্রমিকদের মাদকাসক্তি পরীক্ষা বা ডোপ টেস্ট৷  

https://p.dw.com/p/3PjJ2
Bangladesh Bus Unfall
ছবি: Munir Uz Zaman/AFP/GettyImages

যাত্রী কল্যাণ সমিতির মতে চালকদের ৮০ ভাগই মাদকাসক্ত৷ আর ১৬ থেকে ২০ ভাগ চালক অপ্রাপ্ত বয়স্ক৷ এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছ ফিটনেসহীন যানবাহন, চালকদের ভুয়া লাইসেন্স, লাইসেন্স ছাড়া চালক৷ বিআরটিএ যে ৪০ লাখ যানবাহনের লাইসেন্স দিয়েছে তার মধ্যে চার লাখ যানবাহন ফিটনেস ছাড়াই সড়কে চলাচল করছে৷ আর ৪০ লাখ যানবাহনের জন্য লাইসেন্সধারী চালক আছেন ১৮ লাখ৷ ২২ লাখ চালক কম আছে৷ বেসরকারি হিসেবে বাংলাদেশের সড়ক মহাসড়কে চলাচল করে আরো ১৫ লাখ অবৈধ যান্ত্রিক যানবাহন৷ এই ১৫ লাখ অবৈধ যানবাহনের চালকদেরও লাইসেন্স নাই৷ আবার এক লাখের মত চালকের ড্রাইভিং লাইসেন্স ভুয়া৷
বুয়েটের অ্যাক্সিডেন্ট রিসার্চ ইন্সটিউটিউটের(এআরআই) হিসাব মতে ২০১৮ সালে সারা দেশে তিন হাজার হাজার ৫১৩টি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে৷ এতে নিহত হয়েছেন চার হাজার ৭৬ জন৷ আহত হয়েছেন আট হাজার ৭১৩ জন৷
২০১৭ সালে দুর্ঘটনা ছিল গত বছরের তুলনায় কম৷ ওই বছর সারা দেশে দুর্ঘটনা ঘটেছে দুই হাজার ৯১৭টি৷ নিহত হয়েছেন তিন হাজার ৬৭২ জন, আহত হয়েছেন সাত হাজার ৪০০ জন৷
আর চলতি বছরের প্রথম আট মাসে সড়ক দুর্ঘটনা হয়েছে দুই হাজার ৬৬৪টি৷ এতে দুই হাজার ৯৮৩ জন নিহত এবং পাঁচ হাজার এক জন আহত হয়েছেন৷
এআরআই-এর গবেষণা মতে সড়ক দুর্ঘটনার মূল কারণ বেপরোয়া ড্রাইভিং৷ এর পরিচালক অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান জানান, ‘‘আর এই বেপরোয়া ড্রাইভিং-এর মূলে রয়েছে মাদকাসক্তি , অদক্ষতা,  ভুয়া লাইসেন্সধারী এবং অপ্রাপ্ত বয়স্ক চালক৷ সড়ক দুর্ঘটনায় মাদকসক্তির বড় একটি ভূমিকা থাকলেও তা ঠিক কত ভাগ সে গবেষণা আমরা করিনি'' তিনি বলেন, ‘‘এটা জানাও কঠিন ৷ কারণ চালকরা দুর্ঘটনার সময় পালিয়ে যান৷ মারা যান শতকরা ১৯ ভাগ৷ ফলে চালক কি অবস্থায় ছিলেন তা অনেক সময়ই জানা সম্ভব হয় না৷''
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্লাহ ডয়চে ভেলেকে বলেন,‘‘এটা অস্বীকার করার উপায় নেই যে যত বৈধ যানবাহন তার অর্ধেকও বৈধ চালক নেই৷ আবার যাদের বৈধ লাইসেন্স আছে তারাও কতটুকু ফিট তা নিয়ে প্রশ্ন আছে৷ তাদের মধ্যে অপ্রাপ্ত বয়স্ক চালক যেমন আছেন৷ মাদকাসক্ত চালকও আছেন৷ মাদকাসক্ত চালক আমাদের জন্য বড় সমস্যা৷ ঢাকা শহরের বাইরের কথা আমি জানিনা৷ তবে ঢাকায় আমরা নানাভাবে তথ্য নিয়ে দেখেছি চালকদের শতকরা ৫০ ভাগ মাদকাসক্ত৷''
তিনি বলেন,‘‘আমরা গাড়িতে মাদকাসক্ত চালক রাখতে চাই না৷ এজন্য চালকদের ডোপ টেস্ট বা তারা মাদকাসক্ত কিনা তা পরীক্ষার বিধান চাই৷ আগামীকাল(১৮ সেপ্টেম্বর) ঢাকায় মালিক শ্রমিকদের বৈঠক আছে৷ সেই বৈঠকে বিস্তারিত মাদকাসক্তি পরীক্ষার পরিকল্পনা তুলে ধরা হবে৷''
জানা গেছে, চালকদের স্বাস্থ্য পরীক্ষার প্রস্তাবের মধ্যেই মাদকাসক্ত কিনা তা পরীক্ষার কথা বলা হচ্ছে৷ আর শুধু লাইসেন্স ও নিয়োগের সময় নয়, সড়কেও চলাচলের সময় ঝটিকা মাদকাসক্তির পরীক্ষা যাতে করা হয় তারও প্রস্তাব দেয়া হচেছ৷ মালিক শ্রমিকরা এক হতে পারলে এনিয়ে সরকারের কাছে প্রস্তাব দেয়া হবে৷ আর এই মাদক পরীক্ষা শুধু চালকদের জন্য নয় সব ধরনের পরিবহণ শ্রমিকদের জন্যই প্রস্তাব করা হবে৷ এই কাজে চিকিৎসক ও নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেটের সমন্বয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালতেরও প্রস্তাব করা হচ্ছে মালিকদের পক্ষ থেকে৷
কিন্তু বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ওসমান আলী বলেন,‘‘অবিশ্বাসের কারণে যদি মাদক পরীক্ষা করা হয় তাহলে আমাদের আপত্তি আছে৷ আমাদের বিশ্বাস করতে হবে৷ আর নিয়োগপত্রসহ সব সুবিধা দিতে হবে৷ এসব না দিয়ে এইসব পরীক্ষা করা হবে হয়রানীর সামিল৷''
এআরআই-এর পরিচালক অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান বলেন,‘‘ডোপ টেস্টের উদ্যোগ নিলে কিছুটা সুফল  পাওয়া যাবে৷ তবে পরিবহণ শ্রমিকদের জীবন মান উন্নত করাসহ সচেতনতার ব্যবস্থা করতে হবে৷ কারণ তাদের যে জীবন মান, কাজের পরিবেশ ও থাকার পরিবেশ তাতে মাদকাসক্ত হওয়ার কারণ আছে৷ তারা কেন মাদকাসক্ত হন তা চিহ্নিত করে দূর করতে হবে৷''
তার মতে,‘‘গাড়ি চালানোর সময়তো বটেই অন্য সময়ও চালকরা মাদক গ্রহণ করলে তা দুর্ঘটনার কারণ হতে পারে৷''
এদিকে বিআরটিএর পরিচালক শেখ মোহাম্মদ মাহবুব-ই-রব্বানী বলেন,‘‘চালকদের লাইসেন্স দেয়ার সময় স্বাস্থ্য পরীক্ষার বিধান আছে৷ তবে ডোপ টেস্ট বা মাদকাসক্তি পরীক্ষার কোনো ব্যবস্থা নেই৷''

খন্দকার এনায়েতুল্লাহ

মিজানুর রহমান

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য