চলে গেলেন সাহিত্যিক ও শিক্ষাবিদ রাজিয়া খান
২৯ ডিসেম্বর ২০১১১৯৩৬ সালে জন্ম নেন রাজিয়া খান আমিন৷ মাত্র ৮ বছর বয়স থেকে সাহিত্য চর্চা শুরু করেন৷ লেখক হিসাবে তিনি রাজিয়া খান নামেই পরিচিত ছিলেন৷ জীবদ্দশায় তিনি উপন্যাস, নাটক, কবিতাসহ ১২টির বেশি বই লিখেছেন৷ তাঁর প্রথম সাহিত্যকর্ম ‘বট তলার উপন্যাস' প্রকাশিত হয় ১৯৫৮ সালে৷ বাংলা সাহিত্যে বিশেষ অবদানের জন্য ১৯৭৫ সালে তিনি বাংলা একাডেমী পুরস্কার পান৷ এছাড়া একুশে পদক, শিল্পকলা একাডেমী পদক এবং অনন্যা সাহিত্য পুরস্কারসহ তিনি বিভিন্ন পুরস্কার ও স্বীকৃতি লাভ করেছেন৷
সাহিত্যিক ও শিক্ষাবিদ রাজিয়া খানের জীবন ও কর্ম নিয়ে স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে সাহিত্যিক সেলিনা হোসেন বললেন, ‘‘আমরা এমন একজনকে হারিয়েছি যিনি আমাদের সাহিত্যের সূচনা লগ্নে অর্থাৎ পঞ্চাশের দশকে যখন বাংলাদেশের সাহিত্যের একটি গতি নির্দিষ্ট হচ্ছিল, সেই সময়ের একজন প্রতিভাধর লেখক তিনি৷ তাঁর লেখা ‘বটতলার উপন্যাস' পড়ে যে কেউ বুঝতে পারবেন যে তিনি কতোটা আধুনিক মনস্ক ছিলেন৷ তিনি সাহিত্যকে মনস্তাত্ত্বিক বিশ্লেষণে এবং গল্প নির্মাণে একটি ভিন্নতা দিতে পেরেছিলেন৷ তাঁর সঙ্গে আমার অসংখ্যবার দেখা হয়েছে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ও বিভিন্ন জায়গায়৷ বিশেষ করে আমি যখন বাংলা একাডেমীতে ছিলাম তখন তাঁর সাথে বেশি কথা হয়েছে৷ তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্যের শিক্ষক ছিলেন৷ তাঁর মাধ্যমে আমি বহুভাবে উপকৃত হয়েছি৷ তিনি দেখা হলে বলতেন, ‘এটা পড়েছিস, ওটা পড়েছিস? বই না থাকলে বলিস আমি সংগ্রহ করে দেব৷' এমনই আন্তরিক ছিলেন রাজিয়া আপা৷ এছাড়া তিনি ইংরেজি যেমন জানতেন, বাংলা ভাষাও তেমনি জানতেন৷ এই দুই ভাষা জানার ক্ষেত্রে তাঁর কোন ত্রুটি কিংবা দ্বিধা ছিল না৷ আমরা অনেক সময় ভালো ইংরেজি জানলে হয়তো বাংলা বলতে চাই না৷ আবার জানলেও এমন ভাব করি যেন বাংলা আমাদের মাতৃভাষা নয়৷ কিন্তু রাজিয়া আপার মধ্যে এমন কিছু কখনই ছিল না৷ আমি মনে করি, তাঁর সাহিত্যকর্মের মূল্যায়ন করে তাঁকে বাংলা সাহিত্যের নির্দিষ্ট জায়গায় যদি আমরা স্থাপন করতে পারি, তাঁর কাজকে যদি আমরা পরবর্তী প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দিতে পারি তাহলে সেটি হবে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় সংযোজন৷ আমি তাঁকে আবারও গভীর শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি৷''
মৃত্যুকালে শিক্ষাবিদ রাজিয়া খানের বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর৷
সাক্ষাৎকার: হোসাইন আব্দুল হাই
সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক