ঘুরে দাঁড়াচ্ছে মোগাদিশু
সোমালিয়ার রাজধানী একইসঙ্গে হতাশা এবং আশার প্রতীক৷ প্রায় ত্রিশ বছর ধরে চলা গৃহযুদ্ধে ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল মোগাদিশুর অনেক কিছু৷ এখন একটি ব্যর্থ রাষ্ট্রকে পুর্নগঠনের চেষ্টা করছে শহরটি৷
ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ হামলা
এইতো মাত্র কয়েকদিন আগে সে সোমালিয়ার ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ বোমা হামলার ঘটনা ঘটলো মোগাদিশুতে৷ ১৪ সেপ্টেম্বর দুপুরে সে দেশের রাজধানীর কেন্দ্রে বোমা বিস্ফোরণ ঘটলে তিনশ’র বেশি মানুষ নিহত হয়, আহত আরো কয়েকশত৷ প্রায় ত্রিশ বছর ধরে চলা গৃহযুদ্ধ এবং সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে দেশটির অবস্থা অত্যন্ত নাজুক হয়ে পড়েছে৷
ক্ষুধার বিরুদ্ধে লড়াই: সোমালিয়ার আরেক বাস্তবতা
মোগাদিশুর বানাদির হাসপাতালের নিউট্রিশন বিভাগে দেখা যাচ্ছে সোমালি যাযাবরদের সন্তান জামদিকে৷ অপুষ্টির শিকার এই শিশুকে তার মা চিনাবাদামের এক ধরনের পেস্ট খাওয়াচ্ছেন৷ জামদির বয়স তিন বছর এবং ওজন মাত্র সাত কেজি৷ তার বয়সি অধিকাংশ জার্মান শিশুর ওজন তার চেয়ে অন্তত দ্বিগুণ৷ সোমালিয়ার অন্তত আট লাখ মানুষ অনাহারে ভুগছে৷
ভেঙ্গে পড়া স্বাস্থ্য ব্যবস্থা
হাসপাতালে জামদির পাশের বিছানাতেই রয়েছে এই শিশুটি৷ নিউমোনিয়ার সঙ্গে লড়ছে সে৷ মোগাদিশুর জনাকীর্ন শরণার্থী ক্যাম্পগুলোতে যেসব রোগের প্রকোপ বেশি, তার মধ্যে অন্যতম নিউমোনিয়া৷ তার হাতগুলো কাগজ দিয়ে মুড়িয়ে দেয়া হয়েছে, যাতে সে নাকে লাগানো খাবার খাওয়ানোর টিউব খুলে ফেলতে না পারে৷ বানাদির হচ্ছে রাজধানীর সবচেয়ে বড় সরকারি হাসপাতাল৷ এবং সেটিও ভেঙ্গে পড়েছে৷
মোগাদিশু - শরণার্থীদের শহর
মোগাদিশু শহরের আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে আছে অসংখ্য অস্থায়ী ঘর৷ অনেক যাযাবর এবং প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষ গৃহযুদ্ধ, সন্ত্রাস, সংহিসতা এবং ক্ষুধা থেকে বাঁচতে রাজধানীতে আশ্রয় নিয়েছে৷ শহরের বাসিন্দার সংখ্যা প্রায় ২৫ লাখ, যাদের মধ্যে ছয় লাখ মানুষ দেশের ভেতরেই বাস্তুচ্যুত৷
অন্তহীন অপেক্ষা
ক্যাম্পের মধ্যে কাজের তেমন কোনো সুযোগ নেই৷ ফলে অনেকেই শুয়ে-বসে সময় কাটায়৷ অনেক শিশু স্কুলেও যেতে পারে না৷ অধিকাংশ অস্থায়ী ক্যাম্পে খেলা বা বিনোদনের কোনো ব্যবস্থা নেই৷
সেলফি তোলার সময়
মোগাদিশুর পিস পার্কে সেলফি তুলছে একদল তরুণ৷ তাদের সবাই শিক্ষার্থী এবং পশ্চিমা সমর্থিত প্রেসিডেন্ট মোহামেদের প্রতি অনুগত৷ সেলফি তোলাদের একজন সিভিল অ্যাভিয়েশন ইঞ্জিনিয়ার হতে চান৷
কোনো হ্যান্ডগ্রেনেড নয়
পিস পার্কের প্রবেশ পথে পরিষ্কারভাবে উল্লেখ করা হয়েছে, কালাশনিকভ, ছুরি, হ্যান্ড গ্রেনেড এবং পিস্তল নিয়ে পার্কে প্রবেশ করা যাবে না৷
গ্রিন জোন
মোগাদিশুর এয়ারপোর্ট এলাকা হচ্ছে প্রবাসীদের কেন্দ্র৷ বাগদাদ এবং কাবুলের মতো এই শহরটিরও গ্রিন জোন রয়েছে৷ জাতিসংঘ এবং অন্যান্য অনেক কূটনৈতিক মিশনের অফিস এবং কর্মকর্তাদের আবাসস্থল বিমানবন্দর সংলগ্ন এই গ্রিন জোন৷ এটি চারদিক থেকে ঘেরা এবং আফ্রিকান ইউনিয়নের সেনারা সেখানকার নিরাপত্তার দায়িত্বে রয়েছে৷
অনলাইন শপিং
তবে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটিতে ইন্টারনেটের প্রসারও ঘটছে৷ রাজধানীতে আধুনিক বিভিন্ন বিলবোর্ডের দেখা মেলে, যেখানে অনলাইনে কেনাকাটাকে উৎসাহিত করা হচ্ছে৷
অর্ধেকের বেশি তরুণ
সোমালিয়ার অর্ধেকের বেশি মানুষের বয়স ১৮ বছরের কম৷ এদের অধিকাংশের জন্ম হয়েছে ১৯৯১ সালে মোহামেদ সায়েদ বার ক্ষমতাচ্যুত হওয়া পর৷ তাঁর পতনের পর সোমালিয়া কার্যত এক ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিনত হয়৷ রাজধানীর তরুণরা অর্থপূর্ণ কোনো কাজে তেমন সম্পৃক্ত নেই, ফলে নিজেদের বঞ্চিত মনে করে তারা, যা সোমালিয়াকে আরো দুর্বল করে দিচ্ছে৷