গ্রাহকরাই হচ্ছেন মোবাইল ফোন নাম্বারের মালিক
৮ নভেম্বর ২০১৭মোবাইল ফোন নাম্বার ঠিক রেখে অপারেটর বদল করার যে সুবিধা, তাকে বলা হয়, ‘মোবাইল নাম্বার পোর্টাবিলিটি', সংক্ষেপে এমএনপি৷ আর এই এমএনপি সেবা চালু করার অনুমতি পেয়েছে বাংলাদেশ ও স্লোভেনিয়ার যৌথ কনসোর্টিয়াম ইনফোজিলিয়ন টেলিটেক বিডি৷ মোবাইল ফোন অপারেটরগুলোর সহযোগিতা পেলে এই কনসোর্টিয়াম আগামী মার্চ-এপ্রিল নাগাদ এমএনপি সেবা চালু করতে পারবে বলে জানা গেছে৷ তবে বিটিআরসি আগামী মে মাস পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছে৷
মোটামুটি আগামী ছয় মাসের মধ্যে এই সেবার আওতায় আসছেন বাংলাদেশের মেবাইল ফোন গ্রাহকরা৷ এই সেবা চালু হলে মোবাইলফোন ব্যবহারকারীরা ‘সংশ্লিষ্ট অপারেটর' মানসম্মত সেবা দিতে না পারলে সেই অপারেটর বদলে অন্য অপারেটরে চলে যেতে পারবেন৷জানা গেছে, এই সেবা নিতে হলে গ্রাহককে অপারেটর পরিবর্তন করতে হলে প্রত্যেকবার ৩০ টাকা দিয়ে আবেদন করতে হবে৷ আবেদনের পর সর্বোচ্চ ৭২ ঘণ্টার মধ্যে সেবাটি চালু হয়ে যাবে৷ তবে আগের অপারেটরে ফিরতে হলে গ্রাহককে ৯০ দিন অপেক্ষা করতে হবে৷
ভয়েস কল ও ইন্টারনেটের উচ্চমূল্য, দুর্বল নেটওয়ার্ক কাভারেজ, নেটওয়ার্ক সমস্যা, ভয়েস কলের নিম্নমান, গ্রাহক সেবার অসন্তুষ্টি দূর করবে এই এমএনপি সেবা৷ এই সেবা চালু হলে কোনো অপারেটরের সেবায় গ্রাহক সন্তুষ্ট না হলে তার পছন্দের আরেক অপারেটারে চলে যেতে পারবেন৷ কিন্তু ফোন নাম্বার একই থাকবে৷ এতে মোবাইল ফোন অপারেটরদের মধ্যে গ্রাহকদের ভালো সেবা দেয়ার প্রতিযোগিতা বাড়বে বলে আশা করা যায়৷
বিটিআরসি চেয়ারম্যান ড. শাহজাহান মাহমুদ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এখন একজন গ্রাহক যদি অপারেটর পরিবর্তন করেন, তাহলে তাঁর ফোন নাম্বারটিও পরিবর্তন হয়ে যায়৷ ফলে গ্রাহককে আবার নতুন করে তাঁর নেটওয়ার্কে তাঁর নতুন নাম্বার ছড়িয়ে দিতে হয়৷ এটা কষ্টসাধ্য এবং সময় সাপেক্ষ৷ বিদেশে একজন গ্রাহক জম্মের পর একটি নির্দিষ্ট মোবাইল ফোন নাম্বার নেয়৷ এবং সেই নাম্বার নিয়েই মৃত্যুবরণ করেন৷ এর মানে হলো গ্রাহকই হবেন ফোন নাম্বারের মালিক৷ অপারেটর নয়৷ আর গ্রাহক তার ইচ্ছামতো অপারেটর পরিবর্তন করতে পারবেন৷''
বিটিআরসি জানায়, এতে করে অপারেটরগুলোর মধ্যে সেবার মান বাড়ানোর প্রতিযোগিতা শুরু হবে৷ যেসব অপারেটর সেবার মান বাড়াতে পারবে না, গ্রাহক তাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে৷ কোনও অপারেটর এতে করে ক্ষতিগ্রস্ত হবে কিনা জানতে চাইলে বিটিআরসি চেয়ারম্যান বলেন, ‘‘ক্ষতির কোনো সুযোগ নেই৷ ভালো সেবা দিতে না পারলে গ্রাহক থাকবে না৷ ফলে ভালো সেবা দিয়েই অপারেটরগুলোকে টিকে থাকতে হবে৷ তবে মোবাইলফোন অপারেটরগুলোর চালু করা যে অন নেট (একই অপারেটরে) এবং অফ নেটের (অন্য অপারেটরের নাম্বারে) মধ্যে যে বৈষম্য আছে, এমএনপি চালু হলে তা আরও সমস্যা তৈরি করতে পারে৷ বিটিআরসি এমএনপি সেবা চালুর আগেই দু’টি সেবার মধ্যে বর্তমানে যে পার্থক্য রয়েছে তা কমিয়ে এনে সমস্যার সমাধান করবে৷''
বাংলাদেশে মোট মোবাইল ফোন অপারেটর পাঁচটি৷ গ্রামীণফোন, রবি, এয়ারটেল, বাংলালিংক ও টেলিটক৷ বিটিআরসি'র গত ৩১ আগস্ট জানিয়েছিল, দেশে এখন মোট গ্রাহক সংখ্যা ১৩ কোটি ৯৩ লাখ৷ এরমধ্যে সেই সংখ্যা ১৪ কোটি হয়ে গেছে বলে মনে করা হয়৷ তবে শুধু গ্রামীন ফোনের গ্রাহকই দুই তৃতীয়াংশ৷
মোবাইল ফোন অপারেটর, বিশেষ করে যাদের গ্রাহক বেশি, তাদের এক ধরনের অনীহার কারণে এতদিন এই এমএনপি সুবিধা চালু করা যায়নি বলে সংশ্লিষ্টরা জানায়৷
২০১৩ সালের ১৩ জুন বিটিআরসির দেওয়া এক নির্দেশনায় মোবাইল ফোন অপারেটরগুলোকে পরবর্তী সাত মাসের মধ্যে এমএনপি চালু করতে বলা হয়৷ নির্দেশনায় এমএনপি চালুর জন্য তিন মাসের মধ্যে সব অপারেটরকে একটি কনসোর্টিয়াম গঠন করতে বলা হয়৷ কিন্তু তারা তখন জানায়, এমএনপি চালু করতে পাঁচ বছর সময় লাগবে৷
প্রসঙ্গত, বর্তমানে বিশ্বের ৭২ টি দেশে এমএনপি সেবা চালু রয়েছে৷ প্রতিবেশী দেশ ভারতে ২০১১ সাল এবং পাকিস্তানে এই সেবা ২০০৭ সাল থেকে চালু রয়েছে৷