1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

নারী মুক্তিযোদ্ধাদের কাহিনি

হোসাইন আব্দুল হাই৭ নভেম্বর ২০১২

মাত্র ১৪ বছরের বালিকা হয়েও নারী নেত্রীদের উৎসাহে মুক্তিযুদ্ধের কাজে নিজেকে উৎসর্গ করেছেন তাহরীমা চৌধুরী৷ হাসপাতালে আহত মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষত-বিক্ষত ও রক্তাক্ত দেহের ছবি এখনও ভেসে ওঠে তাঁর চোখে৷

https://p.dw.com/p/16dr6
Bildunterschrift:  Freiheitskämpferin Tahrima Chowdhury in Preisverleihung Veranstaltung Text: Freiheitskämpferin Tahrima Chowdhury in Preisverleihung Veranstaltung, Dhaka, Bangladesch Datum: 28.12.2011 Eigentumsrecht: Md Alauddin, Dhaka, Bangladesch Rechte geklärt. Zulieferer: Ahm Abdul Hai
ছবি: Md Alauddin

ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়ায় ১৯৫৬ সালের ২০শে অক্টোবর জন্ম গ্রহণ করেন তাহরীমা চৌধুরী৷ বাবা শহীদুল ইসলাম চৌধুরী ছিলেন একজন বিদ্যালয় শিক্ষক৷ আর মা আমেনা খাতুন৷ ১৯৭১ সালে যখন মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়, তখন নবম শ্রেণির ছাত্রী ছিলেন তাহরীমা৷

২৫শে মার্চ রাতে পাক বাহিনীর হত্যা-নির্যাতন শুরু হওয়ার পর ধীরে ধীরে পরিস্থিতির আরো অবনতি হতে থাকে৷ যুদ্ধের সময়ের ভয়ঙ্কর দিনগুলোর কথা বলতে গিয়ে তাহরীমা ডিডাব্লিউ'কে বলেন, ‘‘গ্রামের বাড়িতে যখন ছিলাম তখন দেখেছি – বৃষ্টির মতো আকাশ থেকে গুলিবর্ষণ করা হতো৷ বাড়ির চালগুলোতে ছোট ছোট ছিদ্র হয়ে হয়ে ছিন্ন-ভিন্ন হয়ে যেত৷ এরপর একদিন আমাদের গ্রামে পাক বাহিনী এসে গোটা গ্রাম আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেয়৷ আর পিপিলিকার মতো লাইন ধরে হাজার হাজার নারী-পুরুষ, শিশু সবাই গ্রামের দিকে কিংবা ভারত সীমান্তের দিকে ছুটতো৷ কিংবা এক গ্রাম থেকে আরেক গ্রামের দিকে ছুটতো এমন দৃশ্য দেখতে পেতাম৷ আমাদের এমন অনেক দিন গেছে যে, ভাত খেতে বসেছি....এমন সময় পাক সেনারা গ্রামে আসছে খবর পেয়ে খাওয়া ফেলে পালিয়ে গিয়ে হয়ত অন্য বাড়িতে অথবা অন্য গ্রামে গিয়ে চৌকির নীচে লুকিয়ে থেকেছি৷ তবুও আমরা দেশের মধ্যে থাকার জন্য অনেক চেষ্টা করেছি৷ কিন্তু শেষ পর্যন্ত আমাদের দেশ ছেড়ে পালাতেই হয়৷''

Week 45 12 Women 1: Tahrima Chowdhury (Part 1) - MP3-Mono

শেষ পর্যন্ত পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের সাথে কীভাবে আগরতলা যান সে সম্পর্কে তাহরীমা জানান, ‘‘২৫শে মার্চ রাতের ঘটনা জানার পর আমাদের শহর একদম নীরব হয়ে যায়৷ শহর ছেড়ে সবাই গ্রামের দিকে পালিয়ে যেতে থাকে৷ তখন আমার বাবাও আমাদের নিয়ে আখাউড়া উপজেলার গঙ্গাসাগর গ্রামে চলে যান৷ কিন্তু সেখানে গিয়েও দেখি গঙ্গাসাগর, আখাউড়া, কসবা এলাকাগুলোতে তখন প্রচণ্ড যুদ্ধ চলছে৷ সে সময় আগুনের লেলিহান শিখা, বুলেট এবং গোলার প্রচণ্ড আওয়াজ....সে সব কিছু ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়৷ এ অবস্থায় বাবা আমাদের নিয়ে আগরতলা চলে যান৷ সন্ধ্যা ছয়টার দিকে আমতলী নামে একটি গ্রামে পৌঁছাই৷ সেখানে এক হিন্দু বাড়িতে গিয়ে আশ্রয় চাইলে, একটি মহিলা এসে বলেন, আপনারা যদি রাতে থাকতে চান, তাহলে এই গোয়াল ঘরে থাকতে পারেন৷ গোয়ালের একদিকে তিনটি গরু ছিল৷ আর অন্যদিকে কিছু জায়গা ফাঁকা ছিল৷ সেখানে আমি, আমার তিন বোন, ছোট ভাই এবং বাবা-মা ঐ গোয়াল ঘরে রাত কাটাই৷ পরের দিন আমরা আগরতলা হাঁপানিয়া শিবিরে গিয়ে উঠি৷''

এই শিবিরে থাকতে থাকতেই একদিন নারী নেত্রী ফোরকান বেগম এবং মিনারা বেগমের সাথে দেখা হয় তাহরীমা চৌধুরীর৷ ফোরকান এবং মিনারা বেগম ঐ শিবিরে গিয়ে তাহরীমা এবং তাঁর সঙ্গীদের মুক্তিযুদ্ধের জন্য কাজ করতে উদ্বুদ্ধ করেন৷ এ প্রসঙ্গে তাহরীমা জানান, ‘‘মহিলা নেত্রী ফোরকান আপা এবং ঝুনু আপাকে আমি দেখলাম যে, উনারা শিবিরে শিবিরে ঘুরে তরুণ-তরুণীদেরকে উৎসাহ দিচ্ছেন৷ তিনি আমাদের বললেন যে, আমাদের দেশের জন্য অনেক ছেলে মারা যাচ্ছে, যুদ্ধে আহত হচ্ছে৷ তোমরাও দেশের জন্য কিছু করো৷ তোমরা সেবিকা হিসেবে কাজ করলে হয়ত আমাদের ছেলেরা আবার সুস্থ হয়ে দেশ স্বাধীন করার জন্য লড়তে পারবে৷ ফোরকান আপার কথাগুলো আমার এত ভালো লাগে যে, আমি তখন ঘরে ফিরে আমার বাবাকে আমার ইচ্ছার কথা জানাই৷ পরদিনই বাবার অনুমতি নিয়ে আমি ফোরকান আপার দেওয়া ঠিকানায় গিয়ে হাজির হই৷''

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য