গুরুগ্রামে প্রকাশ্যে নামাজ নিয়ে বিতর্ক
হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্রী জানিয়ে দিয়েছেন, সরকারি জমিতে কোনো ধর্মীয় প্রার্থনা করা যাবে না। উৎসবের ক্ষেত্রে শুধু অনুমতি দেয়া হবে। গুরুগ্রামে বিতর্ক তুঙ্গে।
বিতর্কের সূচনা
গুরুগ্রামে ৩৭ নম্বর সেক্টরে থানার ঠিক উল্টোদিকের সরকারি জমিতে আগে শুক্রবারে নামাজ পড়া হতো। সম্প্রতি কিছু কট্টর হিন্দু সংগঠন জানিয়ে দেয়, সরকারি জমিতে প্রকাশ্যে নামাজ পড়া যাবে না। ৩৭ নম্বর সেক্টরে নামাজ পড়া শুরু হলেই সেখানে ওই সংগঠনের কিছু সমর্থক জড়ো হয়ে প্রতিবাদ জানাতো।
হচ্ছে পুজো, ভজন, লঙ্গর
গুরুগ্রামের ৩৭ নম্বর সেক্টরে গত শুক্রবারের ছবি। নামাজ হচ্ছে না। হচ্ছে পুজো, ভজন, লঙ্গর বা প্রসাদ খাওয়ানো। মাঠের অনেকটা ঘেরা। সেখানে পুজো হচ্ছে। গানও। মাঝে মাঝে ভাষণ। একদিকে রান্না হচ্ছে। একদিকে প্রসাদ খাওয়ার ব্যবস্থা।
সেই মাঠে নামাজ বন্ধ
গত কয়েক শুক্রবার ৩৭ নম্বর সেক্টরের মাঠে আর নামাজ পড়া হচ্ছে না। গুরুগ্রামের অনেক জায়গা, যেখানে আগে নামাজ পড়া হতো, সেখানেও এখন নামাজ পড়া বন্ধ। কর্তৃপক্ষের সঙ্গে মুসলিম প্রতিনিধিদের বৈঠকে ঠিক হয়েছে, ১৪টি মসজিদ ছাড়াও আপাতত ছয়টি মাঠে নামাজ পড়া যাবে।
লঙ্গরের ছবি
আয়োজকদের দাবি, তারা এখানে সাধারণ মানুষকে প্রসাদ খাওয়াচ্ছেন। প্রচুর মানুষ মাঠে বসেন। তাদের পুরি, সবজি দেয়া হচ্ছে।
আয়োজকদের দাবি
আয়োজকদের মধ্যে অন্যতম কুলভূষণ ভরদ্বাজের দাবি, তারা গুরুগ্রামে কোথাও প্রকাশ্যে সরকারি জমিতে নামাজ পড়তে দেবেন না। মসজিদে নামাজ পড়লে তাদের কোনো আপত্তি নেই। আপত্তি প্রকাশ্যে সরকারি জমিতে নামাজ পড়া নিয়ে।
সরকারি জমিতে কেন?
সরকারি জমিতে যদি নামাজ পড়া না যায়, তাহলে পুজো, ভজন, লঙ্গরই বা কেন হবে? কুলভূষণের জবাব, তারা প্রশাসনকে জানিয়ে এসেছেন। প্রশাসন আপত্তি করেনি। তাদের উদ্দেশ্য লঙ্গর বিতরণ।
সেক্টর ২৭-এ নামাজ
গত শুক্রবার গুরুগ্রামের ২৭ নম্বর সেক্টরে নামাজ পড়ার অনুমতি ছিল। বেশ কিছু পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছিল। বেশ বড় মাঠ। সেখানে গাড়ি, অটো, মোটর সাইকেল করে বা হেঁটে মানুষ এসেছেন নামাজ পড়তে। প্রশাসন এখন যে কয়টি জায়গায় নামাজ পড়তে দিচ্ছে, তার মধ্যে একটি হলো ২৭ নম্বর সেক্টরের মাঠ।
কেন এভাবে নামাজ?
যে মুসলিম সংগঠনগুলি সরকরি জমিতে নামাজ না পড়ার আদেশের বিরুদ্ধে লড়ছে, তাদের এক নেতা হলেন সাবের কাশমি। তার বক্তব্য, শুক্রবার জুমার নামাজ একসঙ্গে পড়তে হয়। সেজন্যই কিছু মানুষ মিলিত হন এবং একসঙ্গে নামাজ পড়েন। শুক্রবার ছাড়া অন্য কোনো দিন এভাবে নামাজ পড়া হয় না।
কেন সরকারি জমিতে নামাজ
সাবের কাশমি সহ অন্যদের বক্তব্য, গুরুগ্রাম এখন সাইবার হাব। তাছাড়াও প্রচুর অফিস এখানে রয়েছে। বাইরে থেকে প্রচুর মানুষ আসেন। কিন্তু সেই তুলনায় মসজিদ নেই। তারা বারবার মসজিদের জমি চেয়ে আবেদন করেছেন। পাননি। একমাত্র চৌটালা যখন মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন, তখন একটা জমি মসজিদের জন্য দিয়েছেন। মসজিদ কম বলে তাদের সরকারি জমিতে নামাজ পড়তে হয়।
সাবেক সাংসদের দাবি
মহম্মদ আদিব সাবেক সাংসদ। তিনি সুপ্রিম কোর্টে একটা আবেদন জানিয়েছিলেন। সেখানে তিনি বলেছেন, কিছু মানুষ গুণ্ডামি করছে, কিন্তু কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। তবে তিনি মনে করেন, উত্তরপ্রদেশের নির্বাচনের জন্য বিজেপি ও অন্য দিন্দু সংগঠনগুলি নামাজ নিয়ে বিতর্ক তৈরি করছে। তারা ভোটের মেরুকরণ চায়। নাহলে তারা উত্তরপ্রদেশ জিততে পারবে না।
মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য
হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্রী মনোহর লাল খাট্টার মঙ্গলবার বিধানসভায় বলেছেন, হরিয়ানায় কোনো সম্প্রদায়ের মানুষকেই সরকারি জমিতে ধর্মীয় প্রার্থনা করতে দেয়া হবে না। মন্দির, মসজিদ, চার্চ, গুরুদ্বারে বা ধর্মীয় স্থানের চত্বরে প্রার্থনা করা যাবে। বড় ধর্মীয় উৎসবের ক্ষেত্রে সরকার অনুমতি দেবে। কেউ যদি শক্তি দেখিয়ে অন্য সম্প্রদায়ের ভাবাবেগ উসকে দিতে চান, তাহলে সেটা ঠিক হবে না।