1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান
রাজনীতিলেবানন

গাজার লড়াই কি এবার লেবাননেও ছড়াবে?

৫ জানুয়ারি ২০২৪

হামাস নেতার মৃত্যুর প্রতিশোধ নেয়ার কথা বলেছেন লেবাননের শক্তিশালী মিলিশিয়া গোষ্ঠীর নেতা। যুদ্ধ কি এবার ছড়াবে?

https://p.dw.com/p/4asLC
ড্রোন হামলার পর বাড়ির সামনে জমায়েত হয়েছেন প্রচুর মানুষ।
বৈরুতে এই অ্য়াপার্টমেন্টে ড্রোন হামলায় মারা গেছেন হামাস নেতা। ছবি: Bilal Hussein/AP Photo/picture alliance

বৈরুতের ৫৫ বছর বয়সি ব্যক্তির মতে, লেবাননের রাজধানীতে নিরাপত্তা বিষয়টিই আপেক্ষিক।

''এই সপ্তাহে যে আক্রমণ হয়েছে, তার আগে থেকেই ইসরায়েলের বিমান মাথার উপর দিয়ে গেছে। কিন্তু মঙ্গলবারের আক্রমণ অনেক জোরালো মনে হয়েছে, কারণ, সেটা আবাসিক এলাকায় হয়েছে।'' এই ব্যক্তি যে ঘটনার কথা বলছেন, সেটি হলো একটি ড্রোন আক্রমণ, যার ফলে হামাসের শীর্ষস্থানীয় নেতা সালেহ আল-আরৌরি মারা গেছেন। ইসরয়েল এখনো সরাসরি এই আক্রমণের দায় স্বীকার করেনি। তারা শুধু বলেছে, হামাস নেতারা যেখানেই থাকুক না কেন, তাদের মারা হবে।

৩০ বছর বয়সি এক শিক্ষক বলেছেন, ''এই মুহূর্তে আমরা নিরাপদ আছি। কিন্তু পরের মুহূর্তে যে বোমা পড়বে না, তার কোনো গ্য়ারান্টি নেই।''

তবে এরপরেও বৈরুতের যে বাসিন্দাদের সঙ্গে ডিডাব্লিউ কথা বলেছে, তারা কেউই চান না, হেজবোল্লাহ ইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধ শুরু করুক। নিরাপত্তার খাতিরে তারা সকলেই নিজের নাম গোপন রেখেছেন। তাদের বক্তব্য, তারা আঞ্চলিক যুদ্ধের পক্ষে নন।

বৈরুতে ৪৫ বছর বয়সি খুচরা ব্যবসায় সহকারীর কাজ করা এক ব্যক্তি জানিয়েছেন, ''হেজবোল্লাহ ডেটারেন্ট হিসাবে কাজ করে। যার ফলে ইসরায়েল লেবাননে ঢুকতে পারে না।'' ডিডাব্লিউকে তিনি বলেছেন, ''হেজবোল্লাহই তাদের সুরক্ষা দিতে পারে।''

কিন্তু একইসঙ্গে তিনি বলেছেন, ''কেউই যুদ্ধ চায় না। আমি চাই হেজবোল্লাহ আরো সতর্ক থাকুক।''

জরুরি ভাষণ

হেজবোল্লাহ নেতা হাসান নাসরাল্লাহের ভাষণের দিকে সকলের নজর পড়েছে। বুধবার তিনি জানিয়েছিলেন, ইসরায়েল একটা ভয়ংকর ও বিপজ্জনক অপরাধ করেছে। 

নাসরাল্লাহের মন্তব্যের ব্যাখ্যা করা কঠিন। হেজবোল্লাহনিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছেন এমন পর্যবেক্ষকদের মত হলো, ''আগের ভাষণের তুলনায় তার কথার ভঙ্গি ছিল খুবই আগ্রাসী।'' আবার লেবাননের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদাল্লাহ হাবিব মনে করেন, ''হেজবোল্লাহ এখনই ইসরায়েলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করবে না।''

তিনি মার্কিন চ্যানেল সিএনএনকে বলেছেন, ''আমরা আশা করতে পারি, হেজবোল্লাহ নিজেদের কোনো বড় যুদ্ধে জড়াবে না। এর পিছনে প্রচুর কারণ হয়েছে। লেবাননে কেউই এখন যুদ্ধ চাইছে না।''

২০০৬ সালে ইসরায়েলের সেনা ও হেজবোল্লাহ ৩৪ দিন ধরে লড়েছিল। প্রচুর ইসরায়েলি সেনাকে হেজবোল্লাহ অপহরণ করেছিল। লাখ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যূত হয়েছিলেন। এক হাজার মানুষ মারা যান। লেবাননের পরিকাঠামো খুবই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পরে ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহারের মধ্যে দিয়ে লড়াই শেষ হয়।

২০০৬-এর পর থেকে হেজবোল্লাহ তাদের অস্ত্রভাণ্ডার বহুগুণে বাড়িয়েছে। তারা অত্যাধুনিক অস্ত্র জোগাড় করেছে। মার্কিন থিংক ট্যাংক ব্রুকিংস ইনস্টিটিউটের পররাষ্ট্র নীতি বিশেষজ্ঞ জেফরি ফেল্টম্যান বলেছেন, ''হেজবোল্লাহের কাছে এক লাখ ৫০ হাজার রকেট আছে। এর জন্যই ইসরায়েল ইরানের উপর সরাসরি আক্রমণ করতে পারে না। অথবা বলা যায়, ইরান আক্রান্ত হলে বড় ধরনের প্রত্যাঘাত করার ক্ষমতা তাদের আছে।''

হেজবোল্লাহ-র 'রেড লাইন'

২০০৬-এর পর থেকে লেবাননের উত্তর সীমান্তে মাঝেমধ্যে রকেট আক্রমণ হয়। কারণ, দুই পক্ষই 'টিট ফর ট্যাট' বা 'ঢিল মারলে পাটকেল খেতে হবে' এই নীতি নিয়ে চলছে।

বেশ কয়েকমাস আগে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু হামাস নেতা আল-আরৌরিকে হত্যার হুমকি দিয়েছিলেন। হমাসকে যুক্তরাষ্ট্র, ইইউ, জার্মানি, ইসরায়েল জঙ্গি সংগঠন বলে ঘোষণা করেছে। এর প্রতিক্রিয়ায় নাসরাল্লাহ বলেছিলেন, এই ধরনের হত্যাকে রেড লাইন হিসাবেই দেখা হবে। সীমান্তের একশ কিলোমিটার ভিতরে ঢুকে হামাসের শক্ত ঘাঁটি বলে পরিচিত আবাসিক এলাকায় যেভাবে আল-আরৌরিকে মারা হয়েছে, তাতে ওই রেড লাইন অতিক্রম করা হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।

যুক্তরাজ্যের কার্ডিফ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আমাল সাদ বলেছেন, ''সম্প্রতি যে ঘটনা ঘটেছে, তাতে ডেটারেন্স সংক্রান্ত ভারসাম্য নষ্ট হয়েছে।''

তিনি মনে করেন, ''সেই ভারসাম্য পুনরুদ্ধার করতে হেজবোল্লাহকে দ্রুত কিছু ব্যবস্থা নিতে হবে। তারা ইসরায়েলকে খুব বেশি জায়গা দিতে পারবে না। কারণ, ইতিমধ্যেই ইসরায়েল ঘোষণা করেছে, তারা হামাস নেতাদের যেখানে সম্ভব মারবে।''

যদিও ইসরায়েল বলেছে, কাতার বা তুরস্কে গিয়েও তারা এই কাজ করতে পারে, তবে এটা হবে বলে মনে হয় না। কাতার পণবন্দিদের মুক্ত করার বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছে। আর তুরস্কের সঙ্গে সম্পর্ক আর খারাপ হোক, তা ইসরায়েল চাইবে না। তারা খুব সম্ভবত লেবাননেই এই কাজ করতে চাইবে।

আমাল সাদ বলেছেন, ''হেজবোল্লাহ খুব ভালো করে জানে, তারা যদি প্রত্যাঘাত না করে, তাহলে ইসরায়েল লেবানেন আরেকটি ফিলিস্তিনি টার্গেটে আঘাত করবে। দ্বিতীয়ত, তারা এটাও মনে করতে পারে, হেজবোল্লাহ দুর্বল হয়ে গেছে। তার মতে, হেজবোল্লাহকে খুব সতর্ক হয়ে এমনভবে আক্রমণ করতে হবে, যার ফলে ইসরায়েল যেন খুব বেশি বিব্রত না হয় এবং আরো বেশি করে প্রত্যাঘাত করে।''

লেবাননের সংবাদপত্রের সম্পাদক অ্যান্টনি সামরানি সম্পাদকীয় নিবন্ধে লিখেছেন, ''৮ অক্টোবরের পর থেকে হেজবোল্লাহ এরকম অবস্থায় আর পড়েনি। তারা কিছু না করলে ইসরায়েল আরো বেশি করে আক্রমণ করতে পারে। আর তারা যদি খুব জোরালো প্রতিক্রিয়া দেখায়, তাহলে সর্বাত্মক যুদ্ধ শুরু হয়ে ষেতে পারে।''

ক্যাথরিন শায়ের/জিএইচ/ডিডাব্লিউ