1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

গণপিটুনির ঘটনায় ওসিকে সরাসরি মামলা নিতে হবে

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২২

গণপিটুনি ও গুজব প্রতিরোধে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পুলিশকে আইনি দায়বদ্ধতার মধ্যে এনে পুলিশের করণীয় ঠিক করে দিয়েছে হাইকোর্ট৷ এই পদক্ষেপ গুজব ও গণপিটুনি প্রতিরোধে সহায়ক হবে বলে মনে করেন আইনজীবী এবং ভুক্তভোগীরা৷

https://p.dw.com/p/477E5
ছবি: Bdnews24.com

২০১৯ সালের ২০ জুলাই ছেলে ধরা গুজবে ঢাকার উত্তর বাড্ডার একটি স্কুলে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করা হয় দুই সন্তানের জননী তসলিমা বেগম রেনুকে৷ এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় তখন সারাদেশের মানুষ প্রতিবাদী হন৷ তারা গুজব ও গণপিটুনি বন্ধে সরকারের কঠোর পদক্ষেপ দাবি করেন৷ ওই ঘটনায় মামলা হলেও বিচার এখনো শেষ হয়নি৷ আর এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে কোনো গণপিটুনির মামলায়ই কেউ শাস্তি পাননি৷

ওই ঘটনার পর আইনজীবী ইশরাত হাসান গণপিটুনি ও গুজব বন্ধ এবং নাগরিকদের জীবন রক্ষায় হাইকোর্টে একটি রিট আবেদন করেন৷ শুনানির পর সেই রিটের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ হয়েছে মঙ্গলবার৷
বিচারপতি এনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রাহমানের সেই রায়ে বলা হয়েছে কোনো গণপিটুনির ঘটনা ঘটলে সংশ্লিষ্ট থানার ওসিকে নিজ উদ্যোগেই মামলা করতে হবে এবং তা দ্রুত সার্কেল এএসপিকে জানাতে হবে৷ সার্কেল এএসপি মামলার তদারকি করবেন৷ মামলার তদন্ত তিন মাসের মধ্যে শেষ করতে হবে৷

আগে গণপিটুনির ঘটনায় কোনো বিচারই পাওয়া যেত না: ইশরাত হাসান

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যেকোনো ধরনের অডিও, ভিডিও, খুদে বার্তা- যা গুজব সৃষ্টি যা গণপিটুনিতে মানুষকে উত্তেজিত করতে পারে, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তা বন্ধের ব্যবস্থা গ্রহণ করবে৷ যারা এ কাজে জড়িত, তাদের চিহ্নিত করে আইনগত ব্যবস্থা নিতে হবে৷

গুজব ও গণপিটুনি প্রতিরোধে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে গণমাধ্যমসহ সব ধরনের মাধ্যমে সচেতনতামূলক প্রচার অব্যাহত রাখতে হবে৷

আর তসলিমা আক্তার রেনুকে যেহেতু স্কুলের প্রধান শিক্ষকের হেফাজতে থাকা অবস্থায় পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে তাই তিনি প্রধান শিক্ষক পদে থাকার যোগ্য কী না তা দেখতে বলা হয়েছে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা৷

রিটকারী আইনজীবী অ্যাডভোকেট ইশরাত হাসান বলেন, ‘‘আগে তো গণপিটুনির ঘটনায় কোনো বিচারই পাওয়া যেত না৷ এখন এরকম  ঘটনা ঘটলে  আদালতের কাছে গিয়ে জানতে চাওয়া  যাবে যে ওই ব্যবস্থাগুলো নেয়া হয়েছে কী না৷ কার কী দায়িত্ব তা আদালত সুনির্দিষ্ট করে বলে দিয়েছেন৷ তাই এখন আর কেউ দায়িত্ব এড়াতে পারবেন না৷ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পুলিশকে সুনির্দিষ্ট দায়িত্বের মধ্যে আনা হলো৷’’

তিনি আরো বলেন, ‘‘পদ্মা সেতু ও  চীনা নাগরিক নিয়ে গুজব আগে থেকেই চলছিলো৷ পুলিশ ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যদি ওই গুজব প্রতিরোধে তখন ব্যবস্থা নিতো তাহলে এইসব দুঃখজনক ঘটনা ঘটতো না৷ যা তাদের দায়িত্ব ছিলো৷’’

এদিকে নিহত রেনুর ভাগ্নে সৈয়দ নাসির উদ্দিন টিটো বলেন, ‘‘দেশে এখন যে গুজব ও কুসংস্কারের জোয়ার চলছে তা বন্ধে হাইকোর্টের এই রায়টি কার্যকর ভূমিকা রাখবে বলে আমার মনে হয়৷ আমার দাবি এই রায়ে যে নির্দেশ দেয়া হয়েছে তা যেন কার্যকর হয়৷ তাহলে অনেকের জীবন রক্ষা পাবে৷’’

রেনু হত্যা মামলা প্রসঙ্গে তিনি  জানান, মামলার বিচার এখানো শেষ হয়নি৷ মোট ১৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিলো তাদের মধ্যে আটজন জামিন পেয়েছেন৷ পাঁচজনের সাক্ষ্য নেয়া হয়েছেন৷ তিনি তিনি অভিযোগ করেন, ‘‘বিচার কাজ এখন ধীর গতিতে হচ্ছে৷ এটা আমারদের বিচার ব্যবস্থার ত্রুটি বলে আমি মনে করি৷’’

থামেনি গণপিটুনিতে হত্যা:

এদিকে রেনু হত্যার পরও বাংলাদেশে গণপিটুনিতে হত্যা কমেনি৷ তাকে হত্যার বছর ২০১৯ সাল থেকে এপর্যন্ত বাংলাদেশে গণপিটুনিতে ১২৩ জন নিহত হয়েছে বলে আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) তথ্য বলছে৷

তাদের তথ্য মতে, চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে বাংলাদেশে গণপিটুনিতে পাঁচজন নিহত হয়েছেন৷ ২০২১ সালে নিহত হয়েছেন ২৮ জন৷ যারা মধ্যে সার্বোচ্চ ১৩ জন ঢাকায়৷ এরপরে চট্টগ্রাম বিভাগের নিহত হয়েছেন আট জন৷ ২০২০ সালে নিহত হয়েছেন ৩৫ জন৷ ঢাকায় ১৪ জন এবং খুলনায় ১০ জন৷ ২০১৯ সালে ৬৫ জন৷  ২০১৮ সালে ৩৯ জন৷ ২০১৭ সালে ৫০ জন৷ ২০১৬ সালে ৫১ জন নিহত হয়েছেন গণপিটুনিতে৷