1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

খুশিহীন এক বিবর্ণ ঈদ

সমীর কুমার দে ঢাকা
২৫ মে ২০২০

ঈদের নামাজের পর হাসিমুখে কোলাকুলির চিরচেনা দৃশ্য এবার দেখা যায়নি। দূর থেকে সালাম বিনিময় হলেও মানুষের মুখে ছিল না হাসি। মসজিদগুলোর ভেতরে সামাজিক দূরত্ব মানা হলেও বাইরে ছিল মানুষের ভীড়।

https://p.dw.com/p/3ciWn
করোনা ভাইরাসের সময় ঈদ
ছবি: picture-alliance/ZumaPress/S.M. Mukut

নামাজ শেষে ঠেলাঠেলি করে বের হয়েছেন অনেকেই। ঈদের নামাজের পর খুশির বদলে মানুষের চোখে মুখে ছিল আতঙ্ক আর দুঃশ্চিন্তার ছাপ। ঢাকা থেকে যারা গ্রামে ফিরেছেন তারাও ছিলেন গ্রামবাসীর জন্য আতঙ্কের কারণ। করোনার মধ্যে আমফান যে ক্ষতচিহ্ন রেখে গেছে, তা নিয়েই কেটেছে উপকূলবাসীর বিবর্ণ ঈদ।

বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের সিনিয়র পেশ ইমাম হাফেজ মুফতি মাওলানা মিজানুর রহমান ডয়চে ভেলেকে বলেন, সকাল ৭টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত বায়তুল মোকাররমে ৫টি ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রথম জামাতে ইমামতি করেন তিনি নিজেই। সবাইকে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার জন্য বারবার মাইকে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। তবে মুসল্লিদের ভীড়ের কারণে অনেক সময়ই সেই দূরত্ব মানা সম্ভব হয়নি। ইসলাম ধর্ম মানুষের কল্যাণের জন্য। মানুষের কল্যাণের কথা চিন্তা করেই এবার কোলাকুলি থেকে বিরত থাকতে বলা হয় সবাইকেই। মুসল্লিরা যথেষ্ট সচেতন থাকায় শান্তিপূর্ণভাবেই শেষ হয়েছে ঈদের জামাত।

মুফতি মাওলানা মিজানুর রহমান

বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের বাইরে দায়িত্ব পালন করেছেন ফটোসাংবাদিক শামসুল হায়দার বাদশা। ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, গেটে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কড়া তৎপরতা ছিল। ফলে ভেতরে সামাজিক দূরত্ব মেনে নামাজ আদায় হলেও বাইরের চিত্র ছিল পুরো ভিন্ন। হাজার হাজার মানুষ বাইরে জড়ো হয়ে নামাজের জন্য অপেক্ষা করেছেন। ফলে এখানে সামাজিক দূরত্ব মেনে অবস্থান করার কোন সুযোগ ছিল না।

করোনার এই দুর্যোগের মধ্যে গত বুধবার বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় আঘাত হানে ঘুর্ণিঝড় আমফান। সাতক্ষীরা, বাগেরহাটসহ উপকূলের বেশ কয়েকটি জেলা ব্যপকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। কাঁচা, আধা পাকা ঘরবাড়ি ঝড়ে উড়ে গেছে। সংকটকালীন এই সময়ে উপকূলের মানুষ কিভাবে উৎযাপন করেছে ঈদ?

জানতে চাইলে সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলা চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম লাল্টু ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘করোনা নিয়ে এমনিতেই আমরা আতঙ্কের মধ্যে আছি। তার মধ্যে আমফানের আঘাতে বহু ঘড়বাড়ি ভেঙে গেছে। টিন ও টালির কোন ঘরই দাঁড়িয়ে নেই। অনেক ঘের ভেসে গেছে। সরকারি যে ত্রাণ এসেছে তাতে প্রতি পরিবারে ১০ কেজি করে চাল দিতে পেরেছি। এর সঙ্গে সবচেয়ে বড় আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে ঢাকা ফেরত আমাদের স্বজনেরা। ভয়-আতঙ্ক নিয়েই তাদের সাথে আমরা মসজিদে একত্রে নামাজ পড়েছি। কলারোয়ায় এ পর্যন্ত চারজন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। তারা সবাই ঢাকা থেকে এলাকায় ফিরেছেন।

ঈদের দিন নামাজ শেষেই স্বজনদের নিয়ে ঘোরাঘুরি, দাওয়াত খেতে যাওয়া, ছোট বাচ্চাদের নিয়ে পার্কে যাওয়া- এমন কোন দৃশ্যই এবার চোখে পড়েনি। পার্কগুলো যথারীতি বন্ধ। তবে অলিগলিতে উড়তি বয়সের তরুণদের আড্ডা দিতে দেখা গেছে। কেউ কাউকে বাড়িতে দাওয়াত করে খাওয়াননি। তবে শেওড়াপাড়ার বাসিন্দা বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা রুমানা আহমেদ বলেন, আত্মীয় স্বজনদের কাউকে দাওয়াত করিনি, কিন্তু রান্না করা খাবার ছোট বোনসহ কয়েকজনের বাসায় পাঠিয়েছি। আবার স্বজনদের কাছ থেকে রান্না করা খাবারও তিনি পেয়েছেন।

আমিনুল ইসলাম লাল্টু

বেসরকারি প্রাইম ব্যাংকের সাবেক সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট কাজী আজহারুল ইসলাম ডয়চে ভেলেকে বলেন, প্রতি বছর ঈদে গ্রামের বাড়ি গেলেও এবার পরিবার নিয়ে ঢাকাতেই ঈদ করছেন। মোহাম্মদপুরের বাসিন্দা তিনি। ঈদের নামাজ আদায় করতে গিয়েছিলেন পাশের মসজিদে। সেখানে সামাজিক দূরত্ব মেনে নামাজ আদায় হলেও বের হওয়ার সময় ভীড়ের মধ্যে পড়েন। তিনি বলেন, মসজিদে গেলাম কিন্তু কারো মুখে হাসি দেখলাম না। দূর থেকে শুভেচ্ছা বিনিময় হলেও কারো মধ্যে ঈদের আমেজ নেই।

জনাব ইসলাম বলছিলেন, তার সঙ্গে একই মসজিদে নামাজ পড়তে আসা প্রতিবেশী সত্তোরোর্ধ রফিকুল ইসলাম তাকে বলেছেন, যুদ্ধ, দুর্ভিক্ষ সবই তিনি দেখেছেন। কিন্তু এমন দৃশ্য তিনি দেখেননি। যেখানে কোন যুদ্ধ নেই, দুর্ভিক্ষও নেই তারপরও মানুষের মুখে হাসি নেই। আনন্দ নেই। অচেনা শত্রুর ভয়ে তটস্থ সবাই। তাই দেশ ও জাতির মহামারি থেকে মুক্তিসহ কল্যাণ, সুখ-শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করে মোনাজাত করেছেন।

প্রতি বছর ঢাকায় জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে রাষ্ট্রপতিসহ দেশের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা অংশ নেন। এবার রাষ্ট্রপতি ঈদের নামাজ আদায় করেছেন বঙ্গভবনের দরবার হলে। এদিকে ২৭০ বছরের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ঈদের দিনে নির্জনতা দেখাল উপমহাদেশের সবচেয়ে বড় ঈদগাহ কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ময়দান। এমন নির্জনতা কেউ দেখেনি আগে। ঈদের দিন যেখানে লাখো মানুষের পদচারণায় মুখর থাকত। নানা দুর্যোগ-দুর্বিপাকে বন্ধ হয়নি শোলাকিয়ার ঈদের জামাত। এমনকি জামাত শুরুর আগে জঙ্গি হামলার সময়েও হয়েছে ঈদের জামাত। একদিকে পুলিশের সঙ্গে জঙ্গিদের বন্দুকযুদ্ধ চলছে, অন্যদিকে অনুষ্ঠিত হয়েছে ঈদের নামাজ। এবার সেই ময়দানে পুরোপুরি নিস্তব্ধতা।