ক্রিস্টোর নতুন সৃষ্টি: ‘ভাসন্ত পাটাতন’
ইটালির ইসিও হ্রদের উপর ‘দ্য ফ্লোটিং পিয়ার্স’ বানিয়েছেন মার্কিন শিল্পী ক্রিস্টো৷ ক্রিস্টোর এই ভাসন্ত পাটাতন বহু মাসের প্রস্তুতি আর দলগত প্রচেষ্টার ফল৷
ক্ষণিকের অতিথি
প্রদর্শনী চলাকালীন প্রতিবার প্রায় বিশ হাজার দর্শক ক্রিস্টোর ভাসন্ত পাটাতনের ওপর দিয়ে যেতে পারবেন, উপভোগ করতে পারবেন জলের ওপর দিয়ে হাঁটার অনুভূতি৷
সুলজানো
সুলজানো গ্রামের মেয়র ফিওরেল্লা তুর্লা খুবই খুশি৷ ১৮ই জুন থেকে তেসরা জুলাইয়ের মধ্যে উত্তর ইটালির এই ছোট্ট গ্রামটিতে প্রায় আট লাখ অতিথির সমাগম হবে বলে মনে করা হচ্ছে৷ সকলেই আসবেন ক্রিস্টোর ‘দ্য ফ্লোটিং পিয়ার্স’ দেখতে৷ তিন কিলোমিটার পাটাতন দিয়ে সুলজানোকে ইসিও লেকের আরো দু’টি দ্বীপের সঙ্গে জুড়ে দিয়েছেন ক্রিস্টো৷
‘ক্রিস্টোর ভেলকি’
সুলজানোর প্রধান ফিওরেল্লা তুর্লা ভাসন্ত পাটাতনগুলির নাম দিয়েছেন ‘ত্রিস্টোর ভেলকি’৷ ১৬ মিটার বা ৫২ ফুট চওড়া পাটাতনগুলি ভাসন্ত পন্টুন বা ফাঁকা ধাতব কাঠামোর ওপর বসানো হয়েছে৷ এর ফলে দর্শকরা সুলজানো থেকে মন্তে ইসোলা ও সাও পাওলো দ্বীপ দু’টি পর্যন্ত পায়ে হেঁটে যেতে পারবেন৷ নয়তো মন্তে ইসোলা থেকে তীর অবধি একটি ফেরি চলাচল করে থাকে৷
ক্রিস্টো আর জিন-ক্লদ
ক্রিস্টো এই প্রকল্পটির পরিকল্পনা করেন তাঁর স্ত্রী জিন-ক্লদ-এর সঙ্গে৷ ২০০৯ সালে জিন-ক্লদ পরলোকগমন করেন৷ ক্রিস্টো নিজেও চেয়েছিলেন আর্জেন্টিনা কিংবা জাপানে তাঁদের যৌথ পরিকল্পনাটিকে বাস্তবায়িত করতে, কিন্তু অনুমতি পাননি৷
‘মেড ইন জার্মানি’
জার্মানির হামিঙ্কেলন শহরের সেটেক্স টেক্সটাইল কোম্পানি জ্বলজ্বলে নাইলন কাপড়টি তৈরি করেছে, যা দিয়ে পাটাতনগুলো ঢাকা হয়েছে৷ প্রায় ৯০ বর্গকিলোমিটার কাপড় দিয়ে শুধু তিন কিলোমিটার পাটাতনই নয়, সেই সঙ্গে সুলজানো ও তার কাছাকাছি গ্রামগুলির পথঘাট ঢেকে দেওয়া হয়েছে৷
নাইলনের কাপড়
জার্মানির ল্যুবেক শহরের ‘জিও - দি লুফ্টভের্কার’ কোম্পানিকে পাঁচ মিটার লম্বা কাপড়ের রোলগুলো তৈরি করার জন্য এক বছর সময় দেওয়া হয়েছিল৷ প্রতিটি রোলের ওজন ছিল দু’শ কিলোগ্রাম৷ সেগুলো পরিবহণের জন্য বিশেষ মোটা ব্যাগের প্রয়োজন পড়েছিল৷ সেরকম দু’শ ব্যাগ ট্রাকে করে সুলজানোতে পাঠানো হয়৷
সুবিশাল সেলাই কল
কাপড়টা এতটাই ভারী যে, সেগুলো সেলাই করার জন্য প্রতিটি সেলাই কলে দু’জন করে লোক রাখতে হয়েছে৷ একটি আল্ট্রাসাউন্ড লেজার ব্যবহার করে কাপড়টাকে নিখুঁতভাবে কাটা হয়েছে৷ পন্টুনগুলোয় একটি বিশেষ যন্ত্র ব্যবহার করে কাটা কাপড়ের টুকরোগুলোকে জোড়া দেওয়া হয়েছে৷
পাটাতন ভাসে কিভাবে
ক্রিস্টোর এই সুবিশাল ইনস্টলেশন শুধু শিল্পকলা নয়, একটা লজিস্টিক্যাল চ্যালেঞ্জও বটে৷ পলিইথিলিনের দু’ লাখ বিশ হাজার ভাসন্ত কিউব তৈরি করাতে হয়েছে, যা দিয়ে তিন কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের পন্টুন ব্রিজগুলি বানিয়ে তা কমলা রঙের কাপড় দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়েছে৷
জলের ওপর হাঁটতে পারেন ক্রিস্টো
২০১৫ সালের অক্টোবর মাসে তাঁর ভাসন্ত পাটাতনের উপর দাঁড়িয়ে ক্রিস্টো৷ তাঁকে খুব খুশি দেখা যাচ্ছে, কেননা, এখানে দাঁড়িয়েও জলের নড়াচড়া অনুভব করতে পারছেন তিনি৷