ক্রিকেট ঈশ্বরের বিদায়
১৫ নভেম্বর ২০১৩গত দুই যুগে পৃথিবীটা পাল্টে গেছে৷ কিন্তু আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ২৪ বছর কেটে গেলেও তাঁকে নিয়ে কমেনি ভক্তদের মাতামাতি৷ ভবিষ্যতেও হয়ত তাঁকে নিয়ে এই উন্মাদনা এমনই থাকবে৷ কিন্তু ক্রিকেট ব্যাট হাতে আর দেখা যাবে না শচীন রমেশ টেন্ডুলকারকে৷
১৯৭৩ সালের ২৪ এপ্রিল মুম্বইতে জন্ম শচীন টেন্ডুলকারের৷ আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তাঁর পথচলা শুরু মাত্র ১৬ বছর বয়সে৷ ১৯৮৯ সালের ১৫ নভেম্বর চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তানের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজে খেলতে নামেন তিনি৷ অভিষেক ইনিংসে সংগ্রহ মাত্র ১৫ রান৷ এরপর ১৯৯৪ সালে ক্রিকেট জীবনের প্রথম শতকের পর আর ফিরে তাকাতে হয়নি তাঁকে৷
দীর্ঘ ২৪ বছরে টেন্ডুলকার কত রেকর্ড গড়েছেন বা ভেঙেছেন তার হিসাব দেয়া মুশকিল৷ তিনিই প্রথম ক্রিকেটার যিনি ২০০তম টেস্ট খেলছেন৷ টেস্টে ১৫ হাজারের বেশি রান করে সর্বোচ্চ রানের মালিক তিনি৷ ৪৬৩টি ওয়ানডেতে ১৮ হাজারেরও বেশি রানের রেকর্ডও তাঁর৷ সবচেয়ে বেশি ম্যাচ ও অর্ধশতকের রেকর্ডগুলোও তাঁর দখলে৷ আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ১০০টি শতক এবং সর্বপ্রথম ওয়ানডেতে দ্বিশতক হাকানোর রেকর্ডটিও ক্রিকেট মহানায়কের৷ গত বছর ডিসেম্বরে আন্তর্জাতিক ওয়ানডে ক্রিকেট থেকে অবসর নেন এই কিংবদন্তি৷
শুধু মাঠের ভেতর নয়, বাইরেও তিনি অনন্য সাধারণ এক ব্যক্তিত্ব৷ সতীর্থদের কাছে বরাবরই প্রিয় বন্ধু এবং শ্রদ্ধাভাজন ব্যক্তি শচীন৷ অভিষেকের সময় অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার কপিল দেব ছিলেন সতীর্থ৷ কপিল থেকে শুরু করে ভারতীয় দলের বর্তমান নবীনতম সদস্যটি পর্যন্ত শচীনের গুণমুগ্ধ৷ তাঁকে নিয়ে বিতর্ক নেই বললেই চলে৷ পুরো ক্রিকেট জীবনেই আম্পায়ারের যে কোনো সিদ্ধান্ত মেনে নেয়ার মানসিকতা দেখা গেছে টেন্ডুলকারের মধ্যে৷
ভারতীয়দের কাছে তিনি যেমন ক্রিকেটের ঈশ্বর, দেশের বাইরেও তাঁর তেমনি অসম্ভব জনপ্রিয়তা৷ যেখানেই খেলতে গেছেন পেয়েছেন মানুষের প্রাণঢালা ভালোবাসা৷ সর্বকালের সেরা ব্যাটসম্যান স্যার ডন ব্র্যাডম্যানের ভীষণ প্রিয় ছিলেন তিনি৷ বলতেন, শচীনের খেলার ধরন ঠিক তাঁরই মতো৷ ইতিহাসের সেরা ক্রিকেটার হিসেবে শচীন টেন্ডুলকারকে আখ্যায়িত করেছেন ক্রিকেটের বরপুত্র ব্রায়ান লারা৷ বলেছেন, শচীন ক্রিকেটের মোহাম্মদ আলী৷
টেন্ডুলকার তাঁর দেশকে যেমন সম্মান এনে দিয়েছেন, তেমনি দেশেও পেয়েছেন অজস্র সম্মান৷ ভারতের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার পদ্মবিভূষণ, সর্বোচ্চ ক্রীড়া পুরস্কার রাজীব গান্ধী খেল রত্ন, ভারতীয় রাজ্যসভার সম্মানসূচক সদস্য পদসহ অসংখ্য পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন তিনি৷
১৯৯৫ সালে চিকিৎসক অঞ্জলি মেহতাকে বিয়ে করেন ‘লিটল মাস্টার'৷ অঞ্জলি বরাবরই ক্রিকেটে অনুপ্রেরণা দিয়েছেন তাঁকে৷ শচীন-অঞ্জলির দুই সন্তান সারা এবং অর্জুন টেন্ডুলকার৷
কেবল ভারত নয়, পুরো ক্রিকেট বিশ্বই যেন কিছুদিন ধরে দুঃখ ভারাক্রান্ত৷ একটা টেস্ট সিরিজের অন্য সবকিছু বাদ দিয়ে শচীনকে বিদায় দেয়াই মূখ্য হয়ে উঠেছে মুম্বইয়ের ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে৷ আমির খান, কপিল দেব, গাভাস্কারসহ সব সেলিব্রেটিরা তাই স্টেডিয়ামে উপস্থিত ‘লিটিল মাস্টার'-কে বিদায় জানাতে৷
ভারত-ওয়েস্ট ইন্ডিজ দ্বিতীয় টেস্ট খেলে ঘরের মাঠ মুম্বই থেকেই বিদায় এই ক্রিকেট মহানায়কের৷ তাঁর অসাধারণ কাভার ড্রাইভ, নিখুঁত স্কয়ার কাট, ছক্কা মারা দৃষ্টিনন্দন দৃশ্যগুলো আর দেখা যাবে না কখনো৷ শচীন রমেশ টেন্ডুলকারের অবসর তাই ক্রিকেটের এক উজ্জ্বল অধ্যায়ের সমাপ্তি৷ জয়তু শচীন৷