1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

চীনের মহাকাশ গবেষণা

১৮ জুন ২০১২

ঠিকঠাক মতই মহাশূন্যের উদ্দেশ্যে যাত্রা করলো চীনের নভোযান শেনঝু-৯৷ আর প্রথমবারের মত তাতে থাকছেন কোন চীনা নারী নভোচারী৷ এভাবে দিন দিন মহাকাশ গবেষণায় যুক্তরাষ্ট্র আর রাশিয়ার কাছাকাছি চলে আসছে চীন৷

https://p.dw.com/p/15GvJ
ছবি: Reuters

প্রথম নারী নভোচারী

শনিবার চীনের উত্তরপশ্চিমাঞ্চলের গোবি মরুভূমিতে অবস্থিত জিনকুয়ান উৎক্ষেপণ কেন্দ্র থেকে মহাকাশের উদ্দেশ্যে যাত্রা করলো লং মার্চ রকেট৷ আর সেই রকেট বয়ে নিয়ে গেল চীনের নভোযান শেনঝু-৯ কে৷ তাদের পরবর্তী স্টেশন কক্ষপথে ভেসে চলা আরেক নভোযান তিয়ানগং৷ এবারের শেনঝু-৯ নভোযানে রয়েছেন তিনজন তায়কোনাট৷ চীনা ভাষায় নভোযাত্রীদের ডাকা হয় তায়কোনাট নামে৷ তারা হলেন জিং হাইপেং, লিউ ওয়াং এবং লিউ ইয়াং৷ চীনের ইতিহাসে এই প্রথমবারের মত নারী তায়কোনাট মানে নভোচারী হলেন লিউ ইয়াং৷ চীনা বিমান বাহিনীর ৩৩ বছর বয়সি এই পাইলট চীনের মহাকাশ অভিযাত্রার ইতিহাসে চিরদিনের জন্য নাম লেখালেন৷ উল্লেখ্য, এই নিয়ে আটটি দেশের অন্তত অর্ধশত নারী মহাশূন্য পরিভ্রমন করেছেন৷ তবে নিজস্ব প্রযুক্তি নিয়ে মহাশূন্যে নারী নভোযাত্রী পাঠিয়েছে এখন পর্যন্ত কেবল যুক্তরাষ্ট্র এবং রাশিয়া৷ চীনও এখন সেই কাতারে শামিল হলো৷

Die chinesische Astronautin Liu Yang
এবারের শেনঝু-৯ নভোযানে রয়েছেন তিনজন তায়কোনাটছবি: Reuters

ম্যানুয়েল ডকিং

শেনঝু-৯ নভোযানের তিন নভোচারী এবার একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অভিযানে রয়েছেন৷ কারণ এই প্রথমবারের মত নভোচারীর সাহায্যে তিয়ানগং নভোযানে তারা ডকিং পরিচালনা করবেন৷ অর্থাৎ শেনঝু-৯ কে জোড়া লাগানো হবে তিয়ানগং এর সঙ্গে৷ তারপর তার ভেতরে ঢুকবেন দুই তায়কোনাট৷ বাকি একজন থেকে যাবেন শেনঝু-৯ এর ভেতরেই৷ চীনা বার্তা সংস্থা শিনহুয়া জানিয়েছেন, মোট ১৩ দিন চলবে এই অভিযান৷ এর মধ্যে তারা সেখানে নানা ধরণের বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা নিরীক্ষা চালাবেন৷ তিয়ানগং এ একটি ছোট বৈজ্ঞানিক পরীক্ষাগার স্থাপন করা হবে৷ এইসব কাজ করতে তাদের সময় লাগবে ১০ দিন৷ অন্যদিকে নারী নভোচারী লিউ ইয়াং পরীক্ষা করে দেখবেন নভোযানে যেসব যন্ত্রপাতি রয়েছে সেগুলো নারীদের জন্য উপযুক্ত কিনা৷ নভোযানে যন্ত্রপাতি আবার নারীদের জন্য হয় নাকি? হয়, কারণ এটাও প্রযুক্তিগতভাবে একটি বড় চ্যালেঞ্জ মহাকাশ বিজ্ঞানীদের জন্য৷ যেমন, নারী নভোযাত্রীর জন্য আলাদা টয়লেটের ব্যবস্থা করা৷

আশির দশক থেকে যাত্রা

এই নিয়ে চারবার মহাশূন্যে নভোযাত্রী সহ রকেট পাঠালো চীন৷ গত কয়েক বছর ধরে চীন যেভাবে মহাশূন্যে একের পর এক রকেট পাঠাচ্ছে তাতে আর কয়েক বছরের মধ্যে তারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং রাশিয়ার সমকক্ষতা অর্জন করবে৷ সেই ১৯৮০-র দশক থেকেই চীন কৃত্রিম উপগ্রহ তৈরির দিকে মনোযোগ দেয়৷ তখন সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন আর যুক্তরাষ্ট্রের ছিলো মহাকাশ গবেষণায় একচ্ছত্র আধিপত্য৷ ১৯৯৯ সালে চীন প্রথম উৎক্ষেপন করে শেনঝু-১ এর৷ তার মাত্র দুই বছর পর এবার শেনঝু-২ নভোযান উৎক্ষেপিত হয় মহাশূন্যের উদ্দেশ্যে৷ আর তার মধ্যে ছিলো ছোট একাধিক প্রাণী৷ সেই সাফল্যের পর চীন পা বাড়ায় প্রথমবারের মত মানুষ পাঠাতে, যা সেই ছয় দশক আগেই যুক্তরাষ্ট্র আর তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন করে দেখিয়েছে৷

China Raumfahrt
মহাশূন্যের উদ্দেশ্যে যাত্রা করলো চীনের নভোযান শেনঝু-৯ছবি: picture-alliance/dpa

চীনের উচ্চাভিলাষ

অবশেষে তাদের সমকক্ষ হয়ে ওঠে চীন ২০০৩ সালে৷ প্রথমবারের মত নভোচারী সহ নভোযান পাঠানো হয় মহাকাশে৷ এরপর এই নিয়ে আরও তিনবার নভোচারী পাঠালো চীনা কর্তৃপক্ষ৷ তার মধ্যে বিগত ২০০৮ সালের ঘটনা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য৷ কারণ প্রথমবারের মত চীনা নভোচারী মহাশূন্যে হেটে বেড়ান৷ গত বছর নভেম্বরে প্রথমবারের মত মহাশূন্যে নভোযানের সঙ্গে ডকিং করিয়ে আরও সাফল্য অর্জন করে চীন৷ আর এইবার নভোচারীদের সাহায্যেই তারা সেই কাজটি করতে চায়৷ মহাশূন্যে ডকিং করানোর কাজটি অত্যন্ত জটিল৷ কারণ দুটি নভোযানই প্রচণ্ড গতিতে কক্ষপথে ছুটে যাচ্ছে৷ তাদেরকে পাশাপাশি এনে একসঙ্গে জোড়া লাগানোটা অত্যন্ত জটিল কাজ৷ চীনা নভোচারীদের লক্ষ্য এখন সেটাই করে দেখানো৷ উল্লেখ্য, আগামী ২০২০ সালের মধ্যে চীন নিজস্ব মহাকাশ স্টেশন তৈরির দিকে ক্রমেই এগিয়ে যাচ্ছে৷

আরআই / এআই (ডিপিএ, এএফপি, রয়টার্স)