1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

কোনো নেতাকেই কৃষকদের কাছে যেতে দেয়া হলো না

৪ অক্টোবর ২০২১

কৃষক বিক্ষোভ ঘিরে তুলকালামের পর উত্তরপ্রদেশের লখিমপুর খিরিতে কোনও নেতা-কর্মীকে যেতে দিল না পুলিশ।

https://p.dw.com/p/41DwS
প্রতীকী ছবি।ছবি: Adnan Abidi/REUTERS

লখিমপুর খিরিতে কোনো রাজনৈতিক নেতাকেই যেতে দিল না উত্তরপ্রদেশের পুলিশ ও প্রশাসন। পুরো জেলা জুড়ে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। লখিমপুর খিরির দিকে যেতে চাইলেই তাকে আটক করছে পুলিশ।

বিরোধী প্রায় সবকটি দলই লখিমপুর খিরিতে গিয়ে মৃত কৃষকদের পরিবারের পাশে দাঁড়াতে চেয়েছে। প্রিয়ঙ্কা গান্ধী সবচেয়ে আগে যেতে চেয়েছিলেন। তাকে রাতেই আটক করে সীতামারি থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। প্রবল তর্কবিতর্ক করেও প্রিয়ঙ্কা যেতে পারেননি। তাকে ডিটেনশন সেন্টারের গেস্ট হাউসে রাখা হয়। সেই ঘর প্রিয়ঙ্কা ঝাঁট দিয়েছেন নোংরা ছিল বলে।

কৃষক নেতারা

সংযুক্ত কৃষক মোর্চার নেতা রাজেশ টিকায়েত লখিমপুর খেরি যেতে চান। তার সঙ্গে প্রচুর সমর্থকও যেতে পারেন। কৃষক পরিবারগুলি আপাতত মৃত চার কৃষকের শেষ কৃত্য না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ফলে পরিস্থিতি বেশ জটিল। ১৪৪ ধারা জারি বলে কৃষক নেতাদেরও লখিমপুর যেতে দেয়া হবে কি না সন্দেহ।

অখিলেশ আটক

সাবেক মুখ্যমন্ত্রী অখিলেশ যাদব নিজের বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন লখিমপুর খিরি যাবেন বলে। তাকে যেতে দেয়া হয়নি। তিনি রাস্তায় বসে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। তাকে আটক করার পর তার বাড়ির সামনে পুলিশের জিপে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়।

অখিলেশ বলেছেন, ‘‘যোগী আদিত্যনাথ সরকার কোনো রাজনৈতিক নেতাকে লখিমপুরে যেতে দিচ্ছে না। তার প্রশ্ন, ''সরকার কী লুকোতে চাইছে? কৃষকদের বিরুদ্ধে বিজেপি সরকার যে অন্যায় করছে, তা ব্রিটিশ আমলেও হতো না।'' তার দাবি, মৃতদের পরিবারকে ২ কোটি টাকা করে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।

বিমানবন্দরে নামতে দেয়া হলো না

ছত্তিশগড়ের মুখ্যমন্ত্রী ভূপেশ বাঘেল এবং পাঞ্জাবের উপ মুখ্যমন্ত্রী  এস এস রনধাওয়ার বিমান লখনউ বিমানবন্দরেই নামতে দেয়া হয়নি। তারা লখিমপুর খিরি যাবেন বলে লখনউ আসতে চেয়েছিলেন। বাঘেল টুইট করে জানিয়েছেন, রাজ্য সরকারের নির্দেশে তার বিমান বিমানবন্দরে নামার অনুমতি দেয়া হয়নি। এরপরই কংগ্রেস জানায়, ছত্তিশগড়ের মানুষদের, কৃষকদের অপমান করছে যোগী সরকার।

পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী চরণজিৎ সিং চান্নিও লখিমপুর যেতে চান। তিনি তার হেলিকপ্টার ওঠা ও নামার অনুমতি চেয়েছেন যোগী সরকারের কাছ থেকে। সেটাও দেয়া হয়নি।

আপ ও তৃণমূল

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৃণমূল এবং অরবিন্দ কেজরিওয়ালের আপ লখিমপুর খেরিতে প্রতিনিধিদল পাঠাবে বলে জানিয়েছে। কিন্তু তাদের প্রতিনিধিরাও পৌঁছতে পারবেন, এমন আশা নেই। কারণ, কাউকেই সেখানে যেতে দেয়া হচ্ছে না।

বিজেপি-র বক্তব্য

উত্তরপ্রদেশের মন্ত্রী সিদ্ধার্থ নাথ সিং বলেছেন, ভোট আসছে। তাই বিরোধী দলগুলি রাজনৈতিক পর্যটনে যেতে চাইছে। সরকার খুবই গুরুত্ব দিয়ে বিষয়টি দেখছে। মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, বিস্তারিত তদন্ত হবে। তারপর সরকার ব্যবস্থা নেবে।

উত্তরপ্রদেশে কোনো বড় ঘটনা ঘটলে রাজনৈতিক নেতাদের সেখানে যেতে দেয়া হয় না। অভিযোগ করা হয়, বিরোধীরা রাজনৈতিক পর্যটন করতে সেখানে যেতে চায়। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি।

কেন এই বাধা

প্রবীণ সংবাদিক জয়ন্ত ভট্টাচার্য ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, এইভাবে আইনশৃঙ্খলার কথা বলে আসলে বিরোধীদের আটকানো হচ্ছে, যাতে তারা ভোটের আগে রাজনৈতিক সুবিধা পেতে না পারে। তারা যে কৃষকদের পাশে দাঁড়াচ্ছে, এটা সরকার দেখাতে দিতে চায় না। তবে এর ফলে উল্টো প্রতিক্রিয়া হতে পারে। এখন তো আর এভাবে কোনো কথা চেপে রাখা যায় না। বিরোধীরা বেশি মাইলেজ পেতেই পারে।

আরেক প্রবীণ সংবাদিক ও উত্তরপ্রদেশ বিশেষজ্ঞ শরদ গুপ্তার মতে, উত্তরপ্রদেশ সরকার জানে, যত বেশি মানুষ লখিমপুর যাবেন, ততই ঘটনা ছড়াবে। তা আরো বেশি করে প্রচারে আসবে। তাই যেতেই দেয়া হচ্ছে না। ডয়চে ভেলেকে শরদ বলেছেন, ''এখন যদি বিরোধীশাসিত রাজ্যগুলিতে এইভাবে আটকে দেয়, তাহলে কী হবে? এটা যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর বিরুদ্ধে। এটা গণতন্ত্রের পক্ষে ঠিক নয়।''  শরদ মনে করেন, ''কৃষক নেতারা পৌঁছালে পরিস্থিতি আরো উত্তেজক হতে পারে।''

আরেক প্রবীণ সাংবাদিক আশিস গুপ্ত ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, ''উত্তরপ্রদেশের পরিস্থিতি তো অঘোষিত জরুরি অবস্থার নামান্তর মাত্র।''

জিএইচ/এসজি(পিটিআই)