কেন ইউরোপ থেকে টাকা ‘কেনে’ আফ্রিকা?
লিবিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট গাদ্দাফি এ কারণে মহাবিপদে পড়েছিলেন৷ গাম্বিয়া এখনো ভুগছে৷ তারপরও নিজেদের মুদ্রার বিষয়েও ইউরোপ-নির্ভরতা থেকে বেরিয়ে আসতে পারছে না আফ্রিকার দেশগুলো৷ বিস্তারিত ছবিঘরে...
গাম্বিয়ার বিড়ম্বনা
গাম্বিয়ার মুদ্রার নাম দাসালি৷ গত বছর দাসালি প্রায় শেষ হয়ে যাওয়ায় বিপদে পড়েছিল ওয়েস্ট আফ্রিকান এই দেশটি৷ গত জুলাইয়ে তাই টাকা ছাপানোর ব্যবস্থা করতে প্রতিবেশী দেশ নাইজেরিয়ায় ছুটে গিয়েছিল এক প্রতিনিধি দল৷ কিন্তু নাইজেরিয়ার সেন্ট্রাল ব্যাংক তাৎক্ষণিকভাবে এ বিষয়ে কোনো সহযোগিতা করতে পারেনি৷
ক্ষমতায় পরিবর্তন মানে যখন টাকা-সংকট
গাম্বিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া জামেহ দেশের সব মুদ্রায় নিজের ছবি জুড়ে দিয়েছিলেন৷ ১৯৯৪ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় ছিলেন তিনি৷২০১৬ সালে নির্বাচনে পরাজয় মানতে না পারায় দেশ ছাড়তে বাধ্য হলেন৷ নতুন সরকার এসে বদলে দিলো মুদ্রার ছবি৷নতুন প্রেসিডেন্ট আদামা বারো অবশ্য ইয়াহিয়ার পথ ধরেননি৷ গাম্বিয়ার নতুন মুদ্রায় তাই এসেছে জেলে, কৃষক আর পাখির ছবি৷ ওপরের ছবিতে গাম্বিয়ার বর্তমান প্রেসিডেন্ট আদামা বারো৷
নিষেধাজ্ঞাও ডেকে আনে বিপদ
মুদ্রার বিষয়ে পরমুখাপেক্ষিতায় অনেক ধরনের ঝুঁকি থাকে৷ অনেক সময় সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি চূড়ান্ত থাকার পরও মুদ্রা সরবরাহ বন্ধ হয়ে যেতে পারে৷ ২০১১ সালে সেরকম পরিস্থিতিতেই পড়েছিল লিবিয়া৷ সেই বছর লিবিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট মোয়াম্মার গাদ্দাফির বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে জাতিসংঘ৷ নিষেধাজ্ঞা মেনে সঙ্গে সঙ্গেই লিবিয়ার দিনার ছাপা বন্ধ করে দেয় ব্রিটেনের ডে লা রু কোম্পানি৷
টাকা তৈরিতে ইউরোপ-নির্ভর আফ্রিকা
আফ্রিকার ৫৪টির মধ্যে ৪০টিরও বেশি দেশের টাকা তৈরি হয় ইউরোপের তিন দেশ ব্রিটেন, ফ্রান্স এবং জার্মানিতে৷ ব্রিটেনের মুদ্রা ছাপানোর প্রতিষ্ঠানের নাম দে লা রু, ফ্রান্সের প্রতিষ্ঠানের নাম ওবারথুর ফিদুচিয়াইর, এবং জার্মানির কোম্পানিটির নাম গিজেকে+ডেফ্রিয়েন্ট৷এর বাইরে মুদ্রা ছাপানোয় সুইডেনভিত্তিক কোম্পানি ক্রেন-এরও বিশ্বব্যাপী সুনাম রয়েছে৷ ওপরের ছবিতে ব্রিটেনের পতাকা হাতে এক তরুণী (প্রতীকী ছবি)৷
ব্রিটেন যাদের টাকার উৎস
ইথিওপিয়া, লিবিয়া, অ্যাঙ্গোলাসহ আফ্রিকার মোট ১৪টি দেশের টাকা ছেপে দেয় ব্রিটেনের দে লা রু কোম্পানি৷
জার্মানিতে আফ্রিকার দেশের টাকা
সাউথ সুদান, তানজানিয়া, মৌরিতানিয়ার মতো আফ্রিকার ছয়-সাতটি দেশের মুদ্রা তৈরি হয় জার্মানিতে৷
ফ্রান্সে আফ্রিকার যেসব দেশের মুদ্রা
আফ্রিকার ফরাসি ভাষাভাষী প্রায় সব দেশের মুদ্রাই ছাপা হয় ফ্রান্সে, অর্থাৎ সেসব দেশে টাকা যায় ফ্রান্সের ওবারথুর ফিদুচিয়াইরে কোম্পানি থেকে৷
টাকা ছাপানোর খরচ
নিরাপত্তার স্বার্থে বিশ্বের কোনো দেশই টাকা ছাপানোর বিষয়ের তথ্য সংবাদমাধ্যমকে জানাতে চায় না৷আফ্রিকার দেশগুলোর সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেও তাই ডয়চে ভেলে বিশেষ কিছু জানতে পারেনি৷ তবে আফ্রিকার দেশগুলোকে যে যুক্তরাষ্ট্রের ডলার এবং ব্রিটেনের পাউন্ডের চেয়ে বেশি খরচ দিয়ে নিজেদের মুদ্রা ছাপাতে হয়, তাতে কোনো সন্দেহ নেই৷ জানা যায়, প্রতিটি ইউএস ডলার তৈরিতে খরচ হয় ছয় থেকে ১৪ সেন্টের মতো৷
শুধু আফ্রিকার দেশ নয়
বিশ্বের অনেক দেশই নিজেদের মুদ্রা অন্য দেশে ছাপায়৷ ফিনল্যান্ড এবং ডেনমার্কের মতো দেশও আছে সেই তালিকায়৷ ছবিতে ফিনল্যান্ডের পতাকা৷
যে নোট বেশি দেশে চলে
আফ্রিকান্স সেন্টার ফর ইকোনমিক রিসার্চের মমো আমারা একেরুচ ডয়চে ভেলেকে বলেন, কোনো দেশের মুদ্রার চাহিদা যুক্তরাষ্ট্রের ডলার, ব্রিটেনের পাউন্ডের মতো বা তার কাছাকাছি না হলে, সে দেশে টাকা তৈরি করে অনেক ক্ষেত্রে লাভের চেয়ে ক্ষতিই বেশি৷
ছোট দেশে টাকা তৈরি অলাভজনক
মমো আমারা একেরুচের মতে, যেসব দেশের জনসংখ্যা খুব কম সেসব দেশ নিজেদের মুদ্রা নিজেরা ছাপলে লাভের চেয়ে ক্ষতির আশঙ্কাই বেশি৷ গা্ম্বিয়া, সোমালিয়ার মতো দেশগুলোর কথা উল্লেখ করে ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, ‘‘এমন দেশগুলো যদি নিজেরা ব্যাংকনোট তৈরি করে দেখে, যে পরিমাণ ব্যাংকনোটে ১০ ইউরো খরচ হচ্ছে সেই পরিমান ব্যাংকনোট আট ইউরোয় বিদেশে ছাপানো যায়, তাহলে কেন তারা বেশি খরচ করে টাকা ছাপাবে?’’
টাকা তৈরির কাঁচামালের অভাব
নাইজেরিয়া, মরক্কো, কেনিয়ার মতো গুটিকয় দেশ বাদে আফ্রিকার অধিকাংশ দেশেরই টাকা তৈরির প্রয়োজনীয় রসদ নেই৷ আফ্রিকায় এমন দেশও আছে যেখানে কোনো ছাপাখানাই নেই৷ লাইবেরিয়া সে কারণেই মুদ্রা ছাপানোর কথা ভাবতেও পারে না৷ অন্যদিকে ইউরোপের দেশের মুদ্রা ছাপানোর প্রতিষ্ঠানগুলো বহু বছর ধরে সুনামের সঙ্গে কাজ করে আসছে৷ ব্রিটেনের দে লা রু টাকা তৈরিতে যে পলিমার ব্যবহার করে তা সবচেয়ে স্বচ্ছ, পরিষ্কার এবং টেকসই৷