1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান
পরিবেশকেনিয়া

কেনিয়ায় ম্যানগ্রোভ ও কাঁকড়া সংরক্ষণের উদ্যোগ

১৪ জুন ২০২৩

বাংলাদেশ-ভারতে সুন্দরবন অঞ্চলের ম্যানগ্রোভ অরণ্য এবং সেখানকার মৎসসম্পদ ঝুঁকির মুখে৷ সুদূর কেনিয়ায় এক অভিনব উদ্যোগের মাধ্যমে ম্যানগ্রোভ সংরক্ষণ এবং কাঁকড়ার সংখ্যা বাড়ানোর চেষ্টা চলছে৷

https://p.dw.com/p/4SZ8u
কাঁকড়া
ছবি: Lanzellotto-A/Bildagentur-online/picture alliance

ভাটা এলেই সাইদি গুইয়ো কিলিফি জেলার ওয়াটামুর মিডা খাঁড়িতে গিয়ে কাদার মধ্যে কাঁকড়া ধরেন৷ গত ৩০ বছর ধরে প্রতিদিনই তিনি সেই কাজ করে চলেছেন৷ আগে দিনে দশটার মতো কাঁকড়া ধরা পড়তো৷ কিন্তু মাত্রাতিরিক্ত মাছ ধরার ফলে এখন ভালো দিনেও পাঁচটা কাঁকড়া ধরা কঠিন হয়ে পড়েছে৷ এ দিন মাত্র একটি প্রাণী ধরেই তাঁকে সন্তুষ্ট থাকতে হচ্ছে৷ জেলে হিসেবে সাইদি গুইয়ো মনে করেন, ‘‘জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আজ এই দুর্দশা৷ বেশিরভাগ সমস্যার মূলেই সেই সংকট৷ আগের তুলনায় শুকনা মরসুম বাড়ছে৷ কাঁকড়া বৃষ্টি পছন্দ করে৷''

সাইদির ধরা কাঁকড়ার সিংহভাগ চে শালে-র মতো রেস্তোরাঁয় পরিবেশন করা হয়৷ ১৯৯৯ সাল থেকে জাস্টিন আনিয়ের সেই রেস্তোরাঁ চালাচ্ছেন৷ কয়েক বছর ধরে তিনি লক্ষ্য করছেন, কাঁকড়ার আকার ও সংখ্যা কীভাবে কমে চলেছে৷ ফলে তিনি নিজেই কাঁকড়া প্রজনন শুরু করেছেন৷ জাস্টিন বলেন, ‘‘প্রথমেই লক্ষ্য করলাম যে ম্যানগ্রোভ ও কাঁকড়ার প্রাকৃতিক চারণক্ষেত্র কীভাবে ধীরে ধীরে কমে চলেছে৷ সেই সব জায়গায় কাঁকড়া আর নেই বললেই চলে৷ এমনকি আগে কাঁকড়ার বড় ভেড়ি থাকলেও এখন কাঁকড়া পাওয়া যায় না৷''

কাঁকড়ার সংখ্যা বাড়াতে এই রেস্তোরাঁর মালিক ২০১৭ সালে একটি হ্যাচারি বা কাঁকড়ার খামার চালু করেন৷ বিশ্বের বেশিরভাগ হ্যাচারি এশিয়া মহাদেশে অবস্থিত৷ আনিয়ের আফ্রিকা মহাদেশের অন্যতম প্রথম মৎস খামার খোলেন৷

সেই খামার জেলেদের বিকল্প আয়ের উৎস হয়ে উঠবে বলে তিনি বিশ্বাস করেন৷ তাঁর আশা, ম্যানগ্রোভ সংরক্ষণের উপরও এর প্রভাব পড়বে৷ জাস্টিন আনিয়ের বলেন, ‘‘এর মাধ্যমে কচি ও জংলি কাঁকড়া ধরা বন্ধ হচ্ছে৷ ফলে প্রাকৃতিক ম্যানগ্রোভ চারণক্ষেত্র আবার চাঙ্গা হতে পারছে৷''

কাঁকড়া পালন অত্যন্ত নাজুক প্রক্রিয়া৷ মাড ক্র্যাব জাতের কাঁকড়া প্রায় ৬০ লাখ ডিম পাড়লেও সেগুলির মধ্যে কয়েকটি তরুণ বয়স পর্যন্ত বাঁচে৷ সেই সম্ভাবনা বাড়াতে আনিয়ের বর্তমানে সমুদ্রের পানি নিয়ে পরীক্ষানিরীক্ষা করছেন৷ কাঁকড়ার স্বাভাবিক প্রজননের পরিবেশ সৃষ্টি করতে চান তিনি৷

এই কর্মসূচির সাফল্য নিশ্চিত করতে তিনি নিজের হ্যাচারিতে স্থানীয় চাষিদের জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেন৷ মাড ক্র্যাব সংরক্ষণ এবং ম্যানগ্রোভ জঙ্গলের সঙ্গে সেই প্রাণীর প্রতীকী সম্পর্কের বিষয়ে তাঁরা জানতে পারছেন৷ কর্মসূচি একবার শুরু হলে তারা আশেপাশের খাঁড়িতে শিকারের বদলে হ্যাচারি থেকে কাঁকড়া শাবক কিনবেন৷

আনিয়ের হ্যাচারি চাষিদের দুই ইউরো তিরিশ সেন্ট মূল্যে এক কিলো ডিম বিক্রি করতে চান৷ সেই ডিম থেকে কাঁকড়া শাবক বেরিয়ে এলে চাষিরা সেগুলির মধ্যে কিছু ম্যানগ্রোভ জঙ্গলে ছেড়ে দিতে আর কিছু রেস্তোরাঁয় বিক্রি করতে চান৷ সেইসঙ্গে ম্যানগ্রোভ জঙ্গল চাঙ্গা করে তুলতে হ্যাচারির বর্জ্যও ব্যবহার করা যাবে৷ জাস্টিন আনিয়ের বলেন, ‘‘যে ম্যানগ্রোভ বীজ আমাদের সৈকতে ভেসে আসে, সেগুলি সংগ্রহ করে আমরা এই মাটি বর্জ্য পানিতে পুঁতে দেই৷ কারণ তার মধ্যে ম্যানগ্রোভের জন্য অনেক উপকারি উপাদান রয়েছে, যা কিন্তু কাঁকড়ার জন্য ভালো নয়৷ ম্যানগ্রোভ এমন উপাদান পেলে ভালো বেড়ে ওঠে৷''

আনিয়েরের খামার হয়তো একক প্রচেষ্টায় কেনিয়ার উপকূলে ম্যানগ্রোভে মাত্রাতিরিক্ত মাছ ধরা বন্ধ করতে বা ম্যানগ্রোভ সংরক্ষণ করতে পারবে না৷ কিন্তু এই উদ্যোগ অবশ্যই সঠিক দিশায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ৷

ওয়াসেরা নিউনজিন/এসবি