1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

কৃত্রিম প্রাগৈতিহাসিক গুহা

২৬ আগস্ট ২০২২

ফ্রান্সের মার্শেই শহরে বানানো হয়েছে এক কৃত্রিম গুহা৷ আসল গুহাটি লুকিয়ে আছে পানির নীচে৷ প্রাগৈতিহাসিক যুগের গুহাটির ভেতরে রয়েছে শত শত পাথরচিত্র৷ কিন্তু সেটি আজ ক্ষয়ে যাচ্ছে৷

https://p.dw.com/p/4G4tO
ফ্রান্সের অঁরি কুসকে গুহা
ফ্রান্সের অঁরি কুসকে গুহাছবি: MC DRAC/SRA PACA/Luc Vanrell

ফ্রান্সের দক্ষিণ উপকূলে, মার্শেই শহর থেকে মাত্র কয়েক কিলোমিটার দূরে এক অপূর্ব স্থাপত্য লুকিয়ে আছে৷ ১৯৮৫ সালে অঁরি কুসকে নামের এক ডাইভার হঠাৎ করেই পানির নীচে একটি গুহা আবিষ্কার করে ফেলেন, যা নিয়ে হৈচৈ পড়ে যায়৷  

অঁরি কুসকের ভাষায়, ‘‘আমি ভাসতে বা নতুন জায়গা খুঁজতে পছন্দ করি৷ আর আমার আগ্রহের কারণেই ৩৭ মিটার গভীরে একটা পাথরে গর্ত খুঁজে পাই৷ মাত্র চার ফুট প্রশস্ত একটি রাস্তা দিয়ে ১৭৫ মিটার সাঁতরানোর পর আমি গুহাতে পৌঁছাই৷ এর মাত্র এক তৃতীয়াংশ দেখা যায়, বাকিটা পানির নীচে৷ সেখানে রয়েছে ক্যালসিয়াম লবণের কলাম ও ঝুলে থাকা দণ্ড৷ দেখতে গ্রিক মন্দিরের মতো৷ এক অসাধারণ উপস্থাপনা৷’’

তার নামানুসারে গুহাটির নাম এখন অঁরি কুসকে গুহা৷ এটিই পানির নীচে পাওয়া একমাত্র গুহা, যেখানে প্রাগৈতিহাসিক যুগের পাথরচিত্র আছে৷ এখানে প্রায় পাঁচশ চিত্র রয়েছে৷ এগুলো ৩৩ হাজার বছর পুরোনো৷ তখন গুহার প্রবেশ পথ সমুদ্র থেকে অনেক ওপরে ছিল৷

ইতিহাস সংরক্ষণে এখন মার্শেইয়ের ভিলা মেডিটেরানেতে এই গুহাটি পুনর্নিমাণ করা হয়েছে৷

‘‘অনেক চ্যালেঞ্জ ছিল৷ প্রথমত, একটা প্রাগৈতিহাসিক গুহাকে ভবনে রূপান্তর করা৷ ভূতাত্ত্বিকভাবে এটি খুবই জটিল স্ট্যালাকটাইট গুহা, যেখানে ক্যালসিয়াম লবণের কলাম ও দণ্ড রয়েছে, তাও সিলিং খুব নীচে৷ আমরা একটা গোলাকার চলার পথ বানিয়েছি, যেন সবাই এখানে ঢুকতে পারেন,’’ বলেন কুসকে মেডিটারেনে মিউজিয়ামের পরিচালক ফ্রেদেরিক প্রাদ৷ 

ফ্রান্সের পানির নীচে পাওয়া যাওয়া গুহা

দুই বছর ধরে গুহাটি কৃত্রিমভাবে তৈরি করা হয়েছে এবং এতে প্রায় আড়াইশ কোটি টাকা খরচ হয়েছে৷ এতে বিজ্ঞান, শিল্পকলা ও কারুশিল্পের প্রায় আড়াইশ লোক কাজ করেছেন৷ সবচেয়ে কঠিন ছিল পাথরচিত্রগুলো নকল করা৷

পাথরযুগের এত এত খোদাই ও আঁকাচিত্র দেখে গবেষকরা খুবই খুশি৷ এর অনেকগুলোতেই পশুর ছবি তুলে ধরা হয়েছে, যেমন ঘোড়া, বাইসন আর বিশেষ করে সামুদ্রিক অক পাখি, যা এরইমধ্যে  বিলুপ্ত হয়ে গেছে৷ একটা বিষয় বিশেষভাবে চোখে পড়ে, তা হলো হাত৷ অনেক জায়গায় আঙ্গুলগুলো যুক্ত আলাদা৷

প্রাগৈতিহাসিক গাব্রিয়েল বেরাহা বলেন, ‘‘এর অনেকগুলো কারণ হতে পারে৷ হতে পারে আঙ্গুলবিহীন হাত দিয়ে করা ইশারা ভাষা এটি৷ ভুলে গেলে চলবে না, তারা ছিল মূলত শিকারি ও সংগ্রহকারী৷ শিকারের সময় চিৎকার বা জোরে কথা বলার চেয়ে ইশারায় কথা বলা সহজ ও নিরাপদ ছিল, যাতে শিকারগুলো পালিয়ে না যায়৷’’

সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়ার ফলে হয়তো অঁরি কুসকে গুহার মুরালগুলো ধ্বংস হয়ে গেছে৷ কৃত্রিমভাবে তৈরি গুহাতে প্রায় ১৭০০ বর্গমিটার এলাকায়, যা মূল গুহার তিনভাগের দুই ভাগ, এই সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যগুলোকে তুলে ধরা হয়েছে৷

ফ্রেদেরিক প্রাদ বলেন, ‘‘এটা একটা প্রাগৈতিহাসিক স্থান৷ একটা মিরাকল৷ বিজ্ঞানীরা বলছেন, লবণাক্ততা, প্লাস্টিক দূষণ ও সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতার কারণে এটা অনেক আগেই নষ্ট হয়ে যাবার কথা৷ তাই এটা অবিশ্বাস্য৷ তবে সম্ভবত শীঘ্রই অন্যান্য উপকূলীয় অঞ্চলগুলিও এই সমস্যার দ্বারা প্রভাবিত হবে৷’’

আসল অঁরি কুসকে গুহাটি এখন একটি প্রাকৃতিক সংরক্ষিত এলাকা৷ হয়তো আর ঢোকা যাবে না৷ জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকিতে এটি৷ বিজ্ঞানীদের আশঙ্কা, এই গুপ্তধনটিকে একুশ শতকের শেষ নাগাদ হয়তো পানি পুরোপুরি গিলে খেয়ে ফেলবে৷ 

গ্যুন্থার ইয়োসেফিন/জেডএ

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য