কুমোরটুলির শিল্পীরা
কুমোরটুলি। উত্তর কলকাতায় গঙ্গার পাশে প্রতিমা শিল্পীদের পাড়া। দুর্গাপুজোর আগে সেখানে এখন ব্যস্ততার শেষ নেই।
কুমোরটুলি
সেই ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির আমল থেকে রয়েছে কুমোরটুলি। গঙ্গার পাশে। শিল্পীরা একসময় এসেছিলেন মূলত কৃষ্ণনগর থেকে। পশ্চিমবঙ্গের পুজোর সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িয়ে গেছে কুমোরটুলি। এখানে প্রবল দারিদ্র্য আছে, নানান সমস্যা আছে, কিন্তু সেসব ছাপিয়ে আছে শিল্পীদের লড়াই ও তাদের অসাধারণ প্রতিমা শিল্প। তাই কুমোরটুলি অনন্য।
উৎসবকে কেন্দ্র করে
বলা হয়, পশ্চিমবঙ্গের অর্থনীতি আবর্তিত হয় এই পুজোকে কেন্দ্র করে। উৎসবের মরসুমে যে আর্থিক কর্মকাণ্ড হয়, তার মূল্য প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা। আর এই পুজোর কর্মকাণ্ডে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ জায়গা হলো কুমোরটুলি। শুধু প্রতিমাশিল্পী ও তাদের সহকারীরাই নন, তার সঙ্গে জড়িয়ে আছে অসংখ্য মানুষের রুটিরুজি। জড়িয়ে আছে, তাদের সারা বছরের রোজগার।
পুজোর মুখে
আর দিন কয়েক পরেই ষষ্ঠী। তাই কুমোরটুলি এখন চরম ব্যস্ত। প্রতিমার চক্ষুদান চলছে। দ্রুত প্রতিমা তৈরির কাজ শেষ করতে চাইছেন শিল্পীরা।
সারা দিন ধরে
এখন সারা দিন ধরে কাজ। প্রতিমা রঙ করা, শাড়ি পরানো, সাজানোর কাজ। আর এক-দুই দিনের মধ্যে সব কাজ শেষ করতে হবে। নাওয়া-খাওয়া ভুলে কাজ করছেন শিল্পীরা।
করোনার থাবা
কুমোরটুলিতে করোনার প্রভাব খুব বড় হয়ে দেখা দিয়েছে। গতবছর করোনার কারণে পুজো ঘিরে চরম অনিশ্চয়তা ছিল। এবার তুলনায় কম হলেও অনিশ্চয়তা ছিল। ফলে প্রতিমার বরাত কম হয়েছে। অনেকে আবার ফাইবারগ্লাসের প্রতিমার দিকে ঝুঁকেছেন। ফলে কুমোরটুলির চিরাচরিত মাটির প্রতিমাশিল্পের সামনেও একটা সংকট দেখা দিয়েছে।
শিল্পীর সংখ্যা কমেছে
করোনা তো আছেই, তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে আরো নানা সমস্যা। ব্যাঙ্ক ঋণ দেয় না। ফলে শিল্পীকেই ১০ থেকে ১৫ লাখ টাকা বিনিয়োগ করতে হয়। সেই টাকা আটকে থাকে প্রায় আটমাস। চারমাসের বেচাকেনার উপর চলে তাদের পুরো বছরের সংসার। তাই চাহিদা কমে গেলে তাদের মুখে অন্ধকার নেমে আসে। গত কয়েক বছরে তাই শিল্পীর সংখ্যা কমেছে।
ছোট প্রতিমা
কুমোরটুলি মানে শুধু বারোয়ারি পুজোর বিশাল প্রতিমা নয়, অসংখ্য বাড়ির পুজোর জন্য ছোট প্রতিমাও। ফলে শিল্পীরা নানা আকারের প্রতিমা তৈরি করেন। দামও ঠিক হয় তার উপর। একটি ছয় ফুটের প্রতিমার দাম যদি ৩০ হাজার টাকা হয়, তা হলে দশ ফুটের প্রতিমার দাম দুই লাখ থেকে দশ লাখ পর্যন্ত।
পরিযায়ী শ্রমিকের দল
প্রতিমা তৈরি তো হলো। সেটা তো তুলতে হবে ম্যাটাডোর, ট্রাক, ট্রলিতে। তার জন্য আছেন পরিযায়ী শ্রমিকরা। এই সময় তারা কুমোরটুলিতে ভিড় করেন। তারা প্রতিমা তুলে দেন গাড়িতে।
প্রতিমা নেয়ার নানা পন্থা
প্রতিমা নিয়ে যাওয়ার নানান পন্থা আছে। কখনো বাঁশের মধ্যে বেঁধে জনা বারো শ্রমিক কাঁধে করে নিয়ে যান প্রতিমা।
টেনে নিয়ে যাওয়া
ভারী প্রতিমা হলে তা টেনে নিয়ে যাওয়া হয় এইভাবে। তারপর তা তোলা হয় ট্রাক বা ট্রলিতে।
বৃষ্টির হাত থেকে বাঁচতে
কলকাতায় এখন প্রায় রোজই বৃষ্টি হচ্ছে। বৃষ্টির হাত থেকে বাঁচতে প্লাস্টিকের শিট দিয়ে ঢেকে নেয়া হয়েছে প্রতিমা।
পুজোর সাজ
প্রতিমার সঙ্গে লাগবে নানান সাজসজ্জা। চাঁদমালা থেকে শুরু করে হরেক রকম জিনিস। কুমোরটুলি সেসবও তৈরি ও বিক্রি করে।
অপূর্ব শিল্পকলা
অনেকে পছন্দ করেন শোলার কাজ। কুমোরটুলির প্রতিমা ও মণ্ডপের সজ্জার ক্ষেত্রে তাই শোলার কাজের চাহিদা রয়েছে। চাহিদা রয়েছে অন্য ধরনের সাজেরও।
শিল্পীর প্রস্তুতি
এই সাজসজ্জার সঙ্গে যুক্ত শিল্পীরাও এখন চরম ব্যস্ত। তাদের হাতের কাজের তুলনা পাওয়া ভার।
কুমোরটুলির আলো-অন্ধকার
উৎসবের মরসুমের পরে ব্যস্ততা শেষ হবে। শুরু হবে লাভ-লোকসানের হিসাব। লোকসান হলে সারা বছর কীভাবে চলবে তার চিন্তা। শুরু হবে পরের বছরের প্রস্তুতি। এই আলো-অন্ধকার, দারিদ্র্য, হতাশা, আশা নিয়েই বছরের পর বছর ধরে চলছে কুমোরটুলি।