কালের বিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং
কৃষ্ণগহ্বর ও আপেক্ষিকতা নিয়ে তাঁর গবেষণার জন্য বিজ্ঞানে অমর হয়ে থাকবেন স্টিফেন হকিং৷ তাঁর জীবন ও কাজের কিছু অংশ তুলে ধরা হলো এই ছবিঘরে৷
কে ছিলেন তিনি?
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ডে হকিংয়ের জন্ম৷ বাবা ফ্র্যাংক ও মা ইসোবেল হকিং দু’জনেই ছিলেন গবেষক৷ উত্তর লন্ডনে ছিল তাঁদের নিবাস৷ কিন্তু তখন লন্ডনে বোমাবর্ষণ হবার কারণে স্টিফেনকে নিরাপদে জন্ম দেবার জন্য অক্সফোর্ডে চলে যান ফ্র্যাংক ও ইসোবেল৷ সেখানেই ১৯৪২ সালের ৮ জানুয়ারি জন্ম নেন কালের অন্যতম সেরা বিজ্ঞানী হকিং৷
মন বসে না স্কুলের পড়ায়
শিক্ষাজীবনের শুরুতে ছাত্র হিসেবে খুব একটা নাম ছিল না তাঁর৷ ক্লাসে শেষের দিক থেকে তৃতীয় ছিলেন৷ বোর্ড গেম পছন্দ ছিল৷ পড়া বাদ দিয়ে বন্ধুদের সঙ্গে মিলে বরং কয়েকটি বোর্ড গেম তৈরি করেন৷ গণিতে অবশ্য ছিল ব্যাপক আগ্রহ৷ টিনএজ বয়সে ফেলে দেয়া জিনিসপত্র দিয়ে একটি কম্পিউটার তৈরি করেন, যা দিয়ে গণিতের প্রাথমিক সমস্যাগুলো সমাধান করা যেতো৷
কেমব্রিজের জীবন
১৯৬৮ সালে হকিং কেমব্রিজের মহাকাশবিজ্ঞান ইন্সটিটিউটের সদস্য হন৷ এরপরের কয়েকবছর তাঁর ও তাঁর গবেষণার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল৷ ১৯৭৩ সালে তিনি তাঁর প্রথম গবেষণা গ্রন্থ ‘দ্য লার্জ স্কেল স্ট্রাকচার অফ স্পেস-টাইম’ প্রকাশ করেন৷ ১৯৭৯ সালে ফিরে আসেন কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে, যেখানে তাঁকে গনিতের সবচেয়ে সম্মানিত পদ ‘লুকাসিয়ান প্রফেসর অফ ম্যাথমেটিক্স’ উপাধি দেয়া হয়৷
গণিত পড়ার সুযোগ পাননি
১৭ বছর বয়সে অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি কলেজে পড়ার সুযোগ পেলেও পছন্দের বিষয় গণিতে তাঁকে ভর্তি করতে রাজি হয়নি কর্তৃপক্ষ৷ তাই পদার্থবিদ্যাতেই ঝুঁকে পড়েন হকিং৷ আরো নির্দিষ্ট করে বললে, মহাকাশবিজ্ঞানে আগ্রহী হয়ে ওঠেন৷ ১৯৬২ সালে শুরু হয় তাঁর কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের জীবন৷ পিএইচডি শুরু করেন মহাকাশতত্ত্বে৷
আ ব্রিফ হিস্টোরি অফ টাইম
হকিংয়ের প্রকাশিত বইগুলোর মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় বইটি হলো ‘আ ব্রিফ হিস্টোরি অফ টাইম’৷ বইটি প্রকাশিত হয় ১৯৮৮ সালে৷ বইটিতে তিনি মহাকাশ, কাল, ঈশ্বরের অস্তিত্ব ও কালের ভবিষ্যৎ নিয়ে সার্বিক এক চিত্র তুলে ধরেন৷ প্রকাশিত হবার পর বইটি ব্যাপক সাড়া ফেলে৷ চার বছরেরও বেশি সময় লন্ডন টাইমসের সর্বোচ্চ বিক্রি হওয়া বইয়ের তালিকায় শীর্ষস্থানটি ধরে রাখে বইটি৷ এ পর্যন্ত অন্তত ৪০টি ভাষায় এটি অনূদিত হয়েছে৷
অন্যান্য বই
হকিংয়ের অন্য বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ বইগুলো হলো ‘দ্য ইউনিভার্স ইন আ নাটশেল’ (২০০১), ‘আ ব্রিফার হিস্টোরি অফ টাইম’ (২০০৫) এবং ‘দ্য গ্র্যান্ড ডিজাইন’ (২০১০)৷ প্রথম তিনটি বইয়ে একত্রে মহাবিশ্ব কিভাবে শুরু হলো তার ব্যাখ্যা পাওয়া যায়৷
ঈশ্বরের অস্তিত্ব
হকিংয়ের তত্ত্বের একটি বিশেষ দিক হলো, তিনি মনে করতেন যে সৃষ্টিকর্তা এই বিশ্ব তৈরি করেছেন৷ মহাকাশ বিজ্ঞানের সঙ্গে একজন সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব সম্ভব বলে তাঁর বিশ্বাস ছিল৷ কিন্তু পরবর্তীতে তাঁর ‘গ্র্যান্ড ডিজাইন’ গ্রন্থে তিনি নিজের তত্ত্বেরই বিরোধিতা করেন৷
হকিংয়ের রোগ
২১ বছর বয়সেই হকিংয়ের জটিল এক রোগ ধরা পড়ে৷ রোগের নাম অ্যামিয়োট্রফিক ল্যাটারাল ক্লেরোসিস৷ সহজ ভাষায়, যেসব স্নায়ু মানুষের মাংসপেশি নিয়ন্ত্রণ করে তা আস্তে আস্তে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়া৷ সারাজীবন তিনি এই রোগে ভোগেন৷
পরিবার
হকিং চার ভাই-বোনের মধ্যে বড় ছিলেন৷ দু’টি বিয়ে করেন তিনি৷ প্রথম স্ত্রী জেন হকিংয়ের সঙ্গে ২৫ বছরের বিবাহিত জীবনে তিন সন্তান জন্ম দেন৷ ১৯৯৫ সালে এ বিয়ে ভেঙে যায়৷ পরে নার্স এলাইন মেসনকে বিয়ে করেন হকিং৷
হলিউডে হকিং
হলিউডে তাঁকে নিয়ে আরো কাজ হলেও ২০১৪ সালের নভেম্বরে মুক্তি পাওয়া ‘দ্য থিওরি অফ এভরিথিং’ ছবিটি এখন পর্যন্ত তাঁর জীবন নিয়ে নির্মিত সেরা ছবি৷ ছবিটি ব্যাপক জনপ্রিয় হয়৷
মৃত্যু
অবশেষে রোগের সঙ্গে হকিংয়ের যুদ্ধ সাঙ্গ হয় ২০১৮ সালের ১৪ মার্চ৷ কালের অন্যতম সেরা এই বিজ্ঞানী মারা যান ৭৬ বছর বয়সে৷