কার্টুনিস্টদের দৃষ্টিতে ইউক্রেন যুদ্ধ ও পুটিন
ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব সারা বিশ্বেই পড়েছে৷ বিভিন্ন দেশের কার্টুনিস্টরা এই যুদ্ধ নিয়েই বেশ কিছু কার্টুন এঁকেছেন এবং তা নিয়ে প্রদর্শনীও হয়েছে জার্মানির ডর্টমুন্ড শহরে৷ দেখুন ছবিঘরে...
মাদার ওয়ার
ইটালির কার্টুনিস্ট পাওলো লাম্বার্ডি ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে তার কার্টুনটির নাম দিয়েছেন ‘মাদার ওয়ার’৷ সেখানে ইউক্রেনে হামলা শুরু করা রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিনকে দেখানো হয়েছে যমদূত গ্রিম রিপারের কোলে৷ পুটিনকে ফিডারে দুধ খাওয়াচ্ছেন মৃত্যুদূত৷ চার পাশে মাছি এমনভাবে উড়ছে যেন পুটিন হয় মরে গেছেন, নয়তো অচিরেই মরবেন!
দ্য নেভিগেটর
ডাচ কার্টুনিস্ট জিয়ার্ড রয়ার্ডসের কার্টুনেও পুটিন ভিলেন৷ এখানে রুশ প্রেসিডেন্টকে দেখানো হয়েছে অদ্ভুত এক বাহন রূপে৷ একমাত্র যাত্রী শয়তানকে পাশে নিয়ে বাহনটি চালাচ্ছেন যমদূত গ্রিম রিপার৷ চলন্ত যানে বসে পত্রিকা পড়ছেন শয়তান৷ পত্রিকার নাম ‘রোড টু থার্ড ওয়ার্ল্ড ওয়ার’৷ ইঙ্গিতটা খুব স্পষ্ট – বিশ্বকে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের দিকে নিয়ে যাচ্ছেন যুদ্ধবাজ পুটিন৷
অস্ত্রের রূপান্তর
উজবেকিস্তানের মাখমুদ এশনকুলভের ইউক্রেন যুদ্ধ দেখে মনে হয়েছে মানুষ সৃষ্টির আদিকাল থেকে অনেক এগিয়েছে ঠিকই, তবে সেই অগ্রগতির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে মানবজাতির বড় একটা অংশের মধ্যে যুদ্ধপ্রীতিও বেড়েছে৷ তাই তার কার্টুনে বানর নিরস্ত্র, নিয়ান্দারথালের হাতে মুগুর, তারপর মানুষের হাতে আধুনিক অস্ত্র৷ মানুষের অগ্রগতি আর অস্ত্রের ক্ষমতা বৃদ্ধি যেন সমার্থক!
অস্ত্রের নাম সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, পাসওয়ার্ড ফেক.নিউজ
কিউবার মিগুয়েল মোরালেস এ যুগের যুদ্ধে প্রপাগান্ডার গুরুত্ব কতটা তা ফুটিয়ে তুলেছেন৷ তার মতে, যুদ্ধের সবচেয়ে বড় অস্ত্রাগারের নাম প্রপাগান্ডা আর সবচেয়ে ভয়ঙ্কর অস্ত্র এখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, অর্থাৎ টুইটার, ফেসবুক আর ইন্সটাগ্রাম৷ ঘরে বসে শুধু এই তিন অস্ত্রের বোতামে টিপুন, ব্যস যুদ্ধে অনেক এগিয়ে যাবেন৷ চলমান যুদ্ধেও যে প্রপাগান্ডার লড়াই চলছে কার্টুনের মাধ্যমে তা-ই জানাতে চেয়েছেন কিউবান শিল্পী৷
চির ক্ষুধার্ত রাশিয়া
ইউক্রেনের মতো লিথুয়ানিয়াও এক সময় সোভিয়েত ইউনিয়নের অংশ ছিল৷ এখন ইউক্রেনে হামলা চালিয়েছে রাশিয়া৷ লিথুয়ানিয়ার কার্টুনিস্ট কাজিস কেস্তুতিস সিয়াউলিতিসের তাই ভয়- ভবিষ্যতে না তার দেশের দিকেও হাত বাড়ায় রাশিয়া৷ সিয়াউলিতিসের চোখে তাই রাশিয়া এমন এক মাছ যার ক্ষুধা মরে কঙ্কাল হয়ে যাওয়ার পরও মিটবে না, কঙ্কালও হাঁ করে গিলতে থাকবে একের পর এক দেশ৷
যুদ্ধকে ‘না’
যুদ্ধ একটা দেশকে কী ভয়ানক খারাপ অবস্থায় ফেলতে পারে তা আফগানিস্তারের কার্টুনিস্ট শহিদ আতিকুল্লার চেয়ে বেশি ক’জন বুঝবেন!তিনি তাই নরওয়েজিয়ান শিল্পী এডওয়ার্ড মুঞ্চ- এর ১৯৮৩ সালে আঁকা আইকনিক ছবি ‘দ্য স্ক্রিম’ ধার করে সৃষ্টি করেছেন যুদ্ধবিরোধী বার্তা দেয়া এক ক্যারিকেচার৷ ক্যারিকেচারে ব্যবহার করেছেন বোমায় বিধ্বস্ত ইউক্রেনের কোনো এক শহরের ছবি৷
যুদ্ধ করো না, ভালোবাসো
রাশিয়া ইউক্রেনে হামলা চালানোর পর থেকেই বিশ্ব জুড়ে চলছে যুদ্ধবিরোধী বিক্ষোভ৷ কিন্তু পুটিন যুদ্ধ থামাননি৷ তুরস্কের মেনেকসে চাম তার কার্টুনে তুলে ধরেছেন শান্তির বাণী৷ ‘নো ওয়ার’ শীর্ষক কার্টুনে তাই গ্রিম রিপার কাঁটা দিয়ে গল্ফ খেলছেন আর চার পাশ থেকে শান্তিকামী মানুষরা তুলছেন ‘যুদ্ধ করো না, ভালোবাসো’ স্লোগান৷
ন্যাটোর প্রেমে
ইউক্রেন যুদ্ধের বড় কারণ ইউক্রেনের ন্যাটোর সদস্য হওয়ার সম্ভাবনা৷ পুটিন সে কথাই বলছেন বারবার৷ সংযুক্ত আরব আমিরাতের আমেরের কার্টুনেও তাই ইউক্রেন ন্যাটোর প্রেমে পড়া এক কিশোরী, সেই কিশোরী প্রেমভরা দৃষ্টিতে তাকাচ্ছে ন্যাটোর দিকে, কিন্তু তাকে উল্টো দিকে টানছে রাশিয়া৷
পুটিন যেমন
আলোচনার মাধ্যমে যুদ্ধ শেষ করার কোনো উদ্যোগই কাজে আসছে না৷ নিজের অবস্থানে ভ্লাদিমির পুটিন অনড়৷ তাই পুটিনের বহুল আলোচিত টেবিলে শুধু পুটিনকে বসিয়েই তার একরোখা মানসিকতা ফুটিয়ে তুলেছেন জার্মানির আগোস্টিনো টালে৷ দীর্ঘ টেবিলের এক প্রান্তে পুটিন অন্য প্রান্তে আয়নায় তারই প্রতিচ্ছবি৷ আগোস্টিনো আসলে মনে করেন, পুটিন শুধু নিজের দিকটাই দেখেন, অন্য কারো কথা তার কাছে গুরুত্বপূর্ণ নয়৷
ড. অক্টোপুটিন
রাশিয়ার বিরুদ্ধে যত নিষেধাজ্ঞাই আরোপ করা হোক না কেন, মাকাওয়ের কার্টুনিস্ট রডরিগো মনে করেন চলমান যুদ্ধে পুটিনই এখনো সুবিধাজনক অবস্থায় রয়েছেন৷ তার সুবিধাজনক অবস্থায় থাকার প্রধান কারণ ইউরোপের বেশ কিছু দেশের রাশিয়ার তেল ও গ্যাসের ওপর নির্ভরশীলতা৷