‘ঝরাপাতার জীবন আমাদের’
১০ অক্টোবর ২০১৪
এরই মধ্যে তিন শিশুসহ মারা গেছেন সাতজন৷ তাই জীবনের তাগিদে, বেঁচে থাকার শেষ চেষ্টা হিসেকে তাঁরা খুব তাড়াতাড়ি আন্দোলনে নামবেন বলে ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন যৌনকর্মীদের সংগঠন ‘নারীমুক্তি'-র সভানেত্রী আকলিমা বেগম আঁখি৷
গত ১২ই জুলাই একরাতেই উচ্ছেদ করা হয়েছে ২০০ বছরের পুরনো টাঙ্গাইলের কান্দাপড়া যৌনপল্লি৷ পল্লির ৯০০ যৌনকর্মীসহ ২,০০০ নারী ও শিশু তাঁদের আবাসন এবং পেশা হারিয়ে পথে নামতে বাধ্য হয়েছেন৷ এই যৌনপল্লি উচ্ছেদ করা হয়েছে স্থানীয় কিছু ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নেতার নেপথ্য ষড়যন্ত্রে৷ কারণ তাঁরা পল্লির সাড়ে তিন একর জমি দখল করতে চান৷
‘নারীমুক্তি'-র সভানেত্রী আকলিমা বেগম আঁখি বলেন, ‘‘আমরা উচ্ছেদের একমাস পর আবারো অবস্থান নিয়েছিলাম কান্দাপড়ায় আমাদের বসতি এবং জমি ফিরে পাওয়ার জন্য৷ কিন্তু দু'দিনের বেশি অবস্থান করতে পারিনি৷ পুলিশ প্রশাসন আমাদের আবার হটিয়ে দেয়৷ এখন আমাদের কেউ কেউ রাস্তায়, কেউ মানিকগঞ্জ, কেউ দৌলতদিয়া বা অন্য কোথাও অবস্থান করছেন৷ কাজ নেই, খাবার নেই৷ এক ঝরাপতার জীবন আমাদের৷''
যৌনকর্মী হাসি বেগম জানান, ‘‘আমরা আমাদের সারা জীবনের সঞ্চয়, আমাদের সম্পদ কিছুই রক্ষা করতে পারিনি৷ এককাপড়ে জীবন নিয়ে পালিয়েছি৷ আমাদের উচ্ছেদের সময় সশন্ত্র হামলাকারীরা ভাঙচুর করে, আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মারার হুমকি দেয়৷ অথচ আমাদের রক্ষায় সমাজের কেউ এগিয়ে আসেনি৷''
কান্দাপড়া যৌনপল্লিতে মোট ৫৯টি বাড়ি ছিল, যার সবই গুঁড়িয়ে দেয়া হয়েছে৷ এই সব বাড়ি এবং জমির মালিক যৌনকর্মীরা৷ যৌনকর্মীদের নেত্রী আনোয়ারা বেগম ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘৫৯টির মধ্যে ৪২টি বাড়ির মালিক আমরা৷ কিন্তু আমাদের ‘সমাজবিরোধী' অপবাদ দিয়ে উচ্ছেদ করা হলো৷ স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা জমি গ্রাস করার জন্য প্রশাসনের সহায়তায় বেআইনি কাজ করেছে৷ আমরা কিন্তু আইন মেনেই নিজেদের জমিতে ব্যবসা করতাম৷''
উচ্ছেদের সময় যৌমকর্মীদের ২০০ কোটি টাকার সম্পদের ক্ষতি হয়েছে৷ এ নিয়ে মামলা করতে গেলেও থানা মামলা নেয়নি৷ আর প্রশাসন তাদের জমির দলিলপত্র চাওয়ার পর, দলিলপত্র দেয়া হয়েছে বলে জানান আকলিমা বেগম আঁখি৷ কিন্তু প্রাশাসন নানা টালবাহানা করছে৷ ৩০ জন যৌনকর্মী এখন প্রশাসনের হেফাজতে আছেন৷ তাঁদের দিয়ে নতুন কোনো ষড়যন্ত্র করা হতে পারে বলেও আশঙ্কা করছেন তিনি৷
এর আগেও ২০০৬ এবং ২০১০ সালে যৌনপল্লিটি উচ্ছেদের চেষ্টা করা হয়েছিল৷ তখন মানবাধিকার সংগঠনের প্রতিরোধের কারণে উচ্ছেদ করা সম্ভব হয়নি৷ তবে এবার প্রভাবশালীরা জড়িত থাকায় আর থামানো যায়নি৷
টাঙ্গাইলের সাংবাদিক বদরুল হাসান লিটন ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘উচ্ছেদকরা যৌনপল্লির জমি টিন দিয়ে ঘিরে রেখেছে৷ সেখানে পুলিশ পাহারাও আছে৷ উচ্ছেদের পর অন্তত দু'বার যৌনকর্মীরা ফিরে আসার চেষ্টা করলে, তাঁদের হটিয়ে দেয় পুলিশ৷'' তিনি জানান, ‘‘এই জমির মালিক যে যৌনকর্মীরা, এটা সবাই জানেন৷ তবে একটি মহল এখন একে খাস জমি হিসেবে দেখিয়ে দখলের চেষ্টা করছে৷''
‘নারীমুক্তি'-র সভানেত্রী আকলিমা বেগম আঁখি বলেন, ‘‘আমরা আবার সংগঠিত হচ্ছি৷ যোগাযোগ করছি৷ ঈদের জন্য চুপচাপ ছিলাম৷ শিগগিরই আমরা আন্দোলনে যাব৷ আমরা আমাদের জমি ও ভবন ফেরত চাই৷ আমাদেরও সম্পদ নষ্টের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে৷ আমাদের জমিতেই আমাদের পুনর্বাসন করতে হবে৷ আমরা না খেয়ে মরতে চাই না৷''