কলকাতায় নিয়ম না মেনে বহুতলের নির্মাণ
গার্ডেনরিচে বাড়ি ভেঙে ১১ জনের মৃত্যুর পর বেআইনি নির্মাণ নিয়ে হইচই শুরু হয়েছে। পুরসভা বলছে, অনেক বাড়ি আইন মেনে হয়নি।
নিয়ম আছে, তা মানা হয় কি?
আছে অনেক নিয়মই। কিন্তু আদৌ কী সে সব মেনে গড়া হয় বহুতল? শহরের অনেক বাসিন্দার দাবি, নকশা অনুমোদনের পরেও বহুতলের উচ্চতা বাড়ানো হয়। একের পর এক ‘ফ্লোর’ নির্মাণ করা হয়। তারপর কোনো বাড়ির একাংশ ভেঙে পড়লে শুরু হয় হইচই।
দ্রুত নির্মাণ হয়
পুরসভার নিয়ম হলো, নতুন বাড়ির ক্ষেত্রে গায়ে গায়ে বাড়ি করা যায় না। ফাঁক রাখতে হয়। অনেক সময় তা রাখা হয় না। অভিযোগ ওঠে, রাতারাতি ছাদ করা হয়। খুব দ্রুত নির্মাণ করা হয়। বাড়ি তৈরির মূল নিয়ম অনেক সময় না মানার অভিযোগ ওঠে।
হেলে যায় বহুতল
কোথাও আবার এমন ভাবে দু’টি বহুতল পাশাপাশি উঠেছে যে, পুরসভার নিয়ম মেনে জায়গা ছাড়ার ব্যাপারই নেই। একাধিক এমন বহুতলও আছে, যা হেলে পড়েছে পাশের বহুতলের দিকে। গার্ডেনরিচে বাড়ি ভেঙে পড়ার পর পুরসভার নজর সেদিকে গেছে।
আদালতের নির্দেশ
গার্ডেনরিচের পাঁচ তলা বহুতল প্রশাসনের নজর এড়িয়ে গড়ে উঠেছে বলে মনে হয় না। এমনটাই মন্তব্য করল কলকাতা হাই কোর্ট। নির্মীয়মাণ বহুতল ভেঙে পড়ার ঘটনায় কী কী পদক্ষেপ করা হয়েছে, রাজ্য সরকারের কাছ থেকে তার রিপোর্টও চেয়েছে আদালত।
জনস্বার্থ মামলা
গার্ডেনরিচ এলাকায় বেআইনি নির্মাণ নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টে জনস্বার্থ মামলা করেন রাকেশ সিং। তার বক্তব্য, ওই এলাকায় এমন আরও প্রায় ৫০টি বেআইনি নির্মাণ আছে। এ নিয়ে আদালতের হস্তক্ষেপ চেয়েছেন মামলাকারী।
আদালতের পর্যবেক্ষণ
এই মামলায় প্রধান বিচারপতির পর্যবেক্ষণ, ‘‘দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদকে অসীম ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু দেখা যায়, তারা যখন স্কুটার বা জিপে করে কোনও এলাকা পরিদর্শনে যায়, তাদের মারধর করা হয়। অনেক জায়গায় অপরিসর রাস্তা ও তাতে স্কুটার ও অন্য যানবাহন রাখা থাকে। আবর্জনার স্তূপও থাকে। যেমন আছে চৌবাগা অঞ্চলে এই জায়গায়।
সরু গলির মধ্যে বহুতল
নিয়ম বলে, বহুতলের উচ্চতা নির্ধারণে সামনের রাস্তার মাপ খুব জরুরি। দুইয়ের মাপে মিল না থাকলে বিশেষ অনুমতিও নিতে হয়। কিন্তু পুরনো অনেক শহরেই সরু গলির পাশে গজিয়ে উঠছে বহুতল। কলকাতারা চৌবাগা অঞ্চলের চিত্র।
পুকুর বুজিয়ে
গত রোববার মধ্যরাতে গার্ডেনরিচে ভেঙে পড়া নির্মীয়মাণ বহুতলটি পুকুর বুজিয়ে তৈরি করা হয়েছিল বলে স্বীকার করেছেন স্থানীয় ১৫ নম্বর বরোর চেয়ারম্যান রঞ্জিত শীল। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের জলসম্পদ বিভাগ ও রাজ্য সরকারের তথ্যপ্রযুক্তি দপ্তরের যৌথ উদ্যোগে কলকাতা শহরে পুকুর-সমীক্ষার কাজ শেষ হয়েছে। রিপোর্ট অনুসারে, কলকাতার বন্দর এলাকায় পুকুর ভরাটের সংখ্যা সর্বাধিক।
মেয়রের আক্ষেপ
কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম এ প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘‘চেষ্টা করেও এমন বেআইনি নির্মাণ আটকাতে পারছি না।’