কলকাতার ধর্ম খাবারে
গোটা দেশ যখন পোশাক, খাবার নিয়ে ধর্মীয় বিতর্কে, কলকাতায় তখনো খাবারের বিচিত্র সম্ভার। কলকাতার খাবারে নানা সংস্কৃতির মেলবন্ধন ঘটেছে।
জগৎমাতা ভোজনালয়
উত্তর কলকাতা মানেই নস্টালজিয়া। পুরনো কলকাতার অলি-গলি জুড়ে এখনো দাঁড়িয়ে আছে প্রাচীন সব 'ভাতের হোটেল'। জগৎমাতা ভোজনালয় তেমনই এক রেস্তোরাঁ। পশ্চিমবঙ্গ এবং পূর্ববঙ্গের বাঙালি খাবারের স্বাদ চেটেপুটে নেওয়া যায় উত্তর কলকাতার এমন একাধিক প্রাচীন রেস্তোরাঁয়।
অ্যাংলো খাবার
ব্রিটিশ ভারতের রাজধানী ছিল কলকাতা। সেই সময় থেকেই বহু ইউরোপীয় কলকাতায় বসবাস করেছেন। বিয়ে করেছেন ভারতীয় মেয়েকে। কলকাতার বুকে এমন অ্যাংলো ইন্ডিয়ান কমিউনিটি এখনো যথেষ্ট। আর তাদের হাত ধরেই কলকাতায় পৌঁছেছে কন্টিনেন্টাল খাবারের রকমারি রেসিপি। পার্কস্ট্রিটের পিটার ক্যাট, মুলারুশ, মোক্যাম্বো এখনো সেই ঐতিহ্য বহন করে চলেছে। কন্টিনেন্টাল স্টেক শুধু রসনাতৃপ্তি করে না, ঐতিহ্য চিনিয়ে দেয়।
নবাবী কলকাতা
নবাব ওয়াজেদ আলি শাহের হাত ধরে কলকাতায় পৌঁছেছিল বিরিয়ানি এবং মুঘল খাবার। জাকারিয়া স্ট্রিটের গলি কিংবা টিপু সুলতান মসজিদের গলি অথবা মেটিয়াবুরুজের রাস্তা-- কলকতা মানে শাহি মুঘলাই। রাস্তার ধারে তৈরি হওয়া বিফ সুতি কাবাব নিয়ে এখনো রাজনীতি করার সুযোগ পায়নি কোনো রাজনৈতিক অথবা ধর্মীয় দল।
নিজামের কাঠি রোল
নিজামের কাঠি রোল এক কথায় এপিক। গানে কবিতায় বার বার উঠে এসেছে বিফ কাঠি রোলের কথা। গত ১৩ বছর নানা কারণে নিজাম বিফ কাঠি রোল তৈরি বন্ধ রেখেছিল। অক্টোবর থেকে ফের তারা তা শুরু করেছে। লাইনও পড়ছে বিশাল।
টেরিটি বাজারের চীনা
বিশ্বযুদ্ধের সময় থেকে কলকাতায় বসবাস করে বিশাল এক চীনা কমিউনিটি। তাদের নামেই একটি জায়গার নাম চায়না টাউন। চীনা পট্টির টেরিটি বাজারে প্রতিদিন সকালে চীনা ব্রেকফাস্ট মেলে। পর্ক মোমো, ফিস মোমো ছাড়াও বাড়িতে তৈরি আরো নানা ধরনের চীনা খাবার পাওয়া যায় সেখানে। আর চীনা পাড়ায় আছে অসংখ্য চীনা রেস্তোরাঁ।
রয়্যালের চাপ
নাখোদা মসজিদের উল্টো দিকে রয়্যাল হোটেল। শতাব্দীপ্রাচীন এই রেস্তোরাঁ দাবি করে, ওয়াজেদ আলির রেসিপিতে তারা চাপ এবং বিরিয়ানি বানায়। বড় বড় খানেওয়ালারা এক কথায় মেনে নেন, রয়্যালের চাপ পৃথিবী বিখ্যাত।
পার্ক সার্কাসের মুঘলাই
মুঘলাইয়ের আরেক ঠেক পার্ক সার্কাস। বড় বড় রেস্তোরাঁর পাশে নাম না জানা ছোট রেস্তোরাঁতেও জিভে জল আনা খাবার পাওয়া যায়।
রাস্তার কাবাব-রোল
ভারতের কোনো কোনো রাজ্য়ে যখন আমিশ-নিরামিশ খাওয়া নিয়ে বিতর্ক চলছে। কলকাতার তখন শুধু খাবার দিয়ে নিজের স্টেটমেন্ট তৈরি করছে। বড় রেস্তোরাঁয় যাওয়ার দরকার নেই, ফুটপাথের দোকানে কাবাব-রোল জিভে জল এনে দেয়।
এটাই কলকাতা
গরুর মাংস ফ্রিজে রাখার অপরাধে আকলাখকে হত্যা করা হয়েছিল উত্তরপ্রদেশে। কলকাতায় এখনো বাজারে পাশাপাশি বিক্রি হয় গরুর মাংস এবং শুয়োরের মাংস। যার ভালো লাগে পাশাপাশি বসে খান। প্রতিবাদ নয়, কলকাতা ধর্ম মেলবন্ধনের। কলকাতার ধর্ম খাদ্যরসিকতায়।