করোনার ‘শাটডাউন’ শুরু
১ জুলাই থেকে দেশব্যাপী শাটডাউন কার্যকর করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি মাঠে ছিল সেনাবাহিনী এবং বিজিবি। কেমন ছিল ঢাকার প্রথমদিনের শাটডাউন? চলুন দেখে নেওয়া যাক ছবিঘরে...
নেই কোন মুভমেন্ট পাস
গত এপ্রিলে সরকার কঠোর লকডাউন ঘোষণা দেওয়ায় জরুরি প্রয়োজনে যারা বের হবেন, তাদের জন্য মুভমেন্ট পাস এর ব্যবস্থা থাকলেও এবারের শাটডাউনের সেরকম কোন সুযোগ রাখা হয়নি। মানুষ যেন নিতান্ত প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হতে না পারে, সেজন্য এবার এ ব্যবস্থা রাখা হয়নি বলে জানায় সংশ্লিষ্ট সূত্র।
সেনাবাহিনী মোতায়েন
গতবছরের মার্চে ঘোষিত লকডাউনের ন্যায় এবারের শাটডাউনেও সাতদিনের জন্য সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। মন্ত্রীপরিষদের প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়, জনগণের স্বার্থে “ইন এইড টুঁ সিভিল পাওয়ার” বিধানের আওতায় মাঠ পর্যায়ে কার্যকর টহল নিশ্চিত করতে সশস্ত্র বাহিনী প্রয়োজনীয় সেনা মোতায়েন করবে।
খোলা আছে পোশাকশিল্প ও কলকারখানা
এবারের শাটডাউনে সরকারি, বেসরকারি এবং স্বায়ত্ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলেও খোলা রাখা হয়েছে তৈরি পোশাক শিল্পের কারখানা এবং অনান্য কারখানা। সেক্ষেত্রে তৈরি পোশাকশিল্পের মালিকেরা দাবি করেন, পোশাক শ্রমিকেরা আশেপাশেই থাকেন বলে এই লকডাউনে তাদের যাতায়াতের তেমন কোনো সমস্যা হবে না।
খেটে খাওয়া মানুষদের ক্ষোভ
ঢাকার আগারগাঁও এ “লেবার মার্কেট” এ শাটডাউনের সকালে দেখা গেল ৫০ জনের বেশি দিনমজুর কাজের অপেক্ষায় বসে আছেন। রং মিস্ত্রী অলি মিয়া ক্ষোভের সুরে বলেন, “আমরা খাইটা খাওয়া মানুষ। করোনার পর থেকা আমাগো প্যাটে ভাত নাই। সরকার আমাগো খাওয়ার ব্যবস্থা না কইরা দুইদিন পরপর এমনে লকডাউন দিলে আমাগের পরিবারসহ আমরা খাবো কী? সরকার আমাগের রুটিরুজির ব্যবস্থা কইরা যত মনে চায় লকডাউন দিক, আমাগো কোন আপত্তি নাই।”
রিক্সাভাড়া দ্বিগুণ, সাথে ভোগান্তি
জরুরি প্রয়োজনে বের হওয়া একাধিক ব্যক্তির সাথে কথা বলে জানা যায়, গত সোমবার থেকে রিক্সাওয়ালাদের যেন ঈদ লেগেছে। অন্যান্য সব গণপরিবহন বন্ধ থাকায় নিতান্ত বাধ্য হয়ে মানুষ রিক্সায় চড়ছে এবং এতেই ভাড়া বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ। একে তো রিক্সার সংখ্যা কম, তার উপর এই অতিরিক্ত ভাড়া সাধারণ মানুষের প্রতি মরার উপর খাঁড়ার ঘা হয়ে এসেছে বলে একমত প্রকাশ করেন অনেকেই।
মোটরবাইকে দুইজন নয়
ঢাকার বিজয়স্মরণিসহ পুলিশের একাধিক চেকপোস্টে গিয়ে দেখা গেল, সেখানে মোটরবাইকে ২ জন থাকলেই ১ জনকে নামিয়ে দেওয়া হচ্ছে। কেন এমন করা হচ্ছে জানতে চাইলে একজন কর্তব্যরত পুলিশ সদসে জানান, তাঁদেরকে এমন নির্দেশনা ই দেওয়া হয়েছে যেন ১ জনের বেশি মোটরবাইকে চলতে দেওয়া না হয়।
কাঁচাবাজার খোলা আট ঘণ্টা
ঢাকার কারওয়ান বাজারসহ অন্যান্য কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রায় সবগুলোতেই টুকটাক বেচাকেনা হচ্ছে। তবে এতে অসন্তুষ্ট বিক্রেতারা। কতক্ষণ বাজার খোলা রাখার অনুমতি আছে জানতে চাইলে একজন বিক্রেতা জানান, সকাল নয়টা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত তাঁদের ব্যবসা করার অনুমতি আছে।
জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নেওয়া হচ্ছে
ঢাকার বিজয়স্মরণি মোড়ে পুলিশের একটি চেকপোস্টে গিয়ে দেখা গেল সেখানে মোটরবাইক থেকে নামিয়ে দুইজনকে পুলিশ ভ্যানে তোলা হচ্ছে। কারণ জানতে চাওয়ায় একজন ট্রাফিক সার্জেন্ট জানালেন, তারা বাসা থেকে বের হওয়ার কোন উপযুক্ত কারণ দেখাতে পারেননি বিধায় থানায় নিয়ে তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। তবে এটিকে গ্রেপ্তার বলছেন না তিনি।
বন্ধ সবরকম যান্ত্রিক গণপরিবহন
সর্বাত্মক শাটডাউনে সরকার সড়ক, নৌ, রেল, এবং অভ্যন্তরীণ উড়োজাহাজসহ সবরকমের গণপরিবহন বন্ধ রেখেছে। এতে সাধারণ মানুষের চলাচলে কিছুটা সমস্যা হলেও করোনাভাইরাসের সংক্রমণরোধে এ পদ্ধতি অনেকটাই কার্যকর ভূমিকা পালন করবে বলে জানান সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
জরুরি পরিষেবা বিধিনিষেধের আওতামুক্ত
১ জুলাই থেকে চালু হওয়া শাটডাউনের ২১ দফায় বলা হয়েছে জরুরি পরিষেবা যেমন ত্রাণ, খাদ্যদ্রব্য পরিবহন, স্বাস্থ্যসেবা, চিকিৎসা সামগ্রী, গণমাধ্যম ইত্যাদি বিধিনিষেধের আওতামুক্ত থাকবে। তবে ঝামেলা এড়াতে সকলকে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের আইডি কার্ড সঙ্গে রাখতে বলা হয়েছে।
ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা
ঢাকার শাহবাগ মোড়ে র্যাব কর্তৃক ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার চিত্র পাওয়া গেল। র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পলাশ কুমার বসু জানান, জনগণকে সচেতন করাই তাঁদের মূল উদ্দেশ্য। বেলা ১২ টা পর্যন্ত স্বাস্থ্যবিধি না মেনে বাসা থেকে বের হওয়ায় চারজনকে মোট ১১০০ টাকা জরিমানা করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
ব্যাংক বন্ধ সপ্তাহে তিনদিন
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে সরকার প্রদত্ত ৭ দিনের শাটডাউনে ব্যাংকসমূহ সপ্তাহে দুইদিনের পরিবর্তে তিনদিন তথা শুক্রবার, শনিবার এবং রোববার বন্ধ থাকবে। যেসব দিনে ব্যাংক খোলা থাকবে, সেসব দিনে সকাল দশটা থেকে দুপুর দেড়টা পর্যন্ত ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা করা যাবে।
বিধিনিষেধ বাড়ানো হতে পারে আরও ৭ দিন
দেশব্যাপী করোনার ঊর্ধ্বমুখী সংক্রমণ রোধ করতে বৃহস্পতিবার ১ জুলাই থেকে কার্যকর হওয়া শাটডাউন আরও একসপ্তাহ বাড়ানো হতে পারে বলে জানিয়েছেন সরকারের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। এক্ষেত্রে দৈনিক মৃত্যু এবং সংক্রমণের হার দেখে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলেও জানান একাধিক সূত্র।