কমেডিয়ান থেকে যুদ্ধকালীন নেতা জেলেনস্কি
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি একসময় অভিনেতা ও কমেডিয়ান ছিলেন৷ এখন যুদ্ধকালীন নেতা হিসেবে বিশ্বের মনোযোগ কেড়েছেন ৪৪ বছর বয়সি জেলেনস্কি৷
গুজবের উত্তর
ইউক্রেনে হামলা শুরুর পরদিন শুক্রবার প্রেসিডেন্ট ভবনের কাছে কয়েকজন উপদেষ্টাকে নিয়ে অন্ধকারে দাঁড়িয়ে ভিডিও বার্তা দিয়েছিলেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি৷ তিনি তার পদ ছেড়ে দিয়েছেন বলে ওঠা গুজব মিথ্যা প্রমাণ করতে ভিডিওটি করেন ৪৪ বছর বয়সি জেলেনস্কি৷
বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট নেই
রাশিয়া তাকে হত্যা করতে চায় - এমন সতর্কবাণী থাকার পরও জেলেনস্কি বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট বা হেলমেট ছাড়াই ভিডিওতে উপস্থিত হয়েছিলেন৷ তাকে দেখে মনে হচ্ছিল, তিনি ঠিকমতো ঘুমাননি৷ মাঝেমধ্যে তাকে হাসতেও দেখা গেছে৷ তিনি বলেন, ‘‘আমরা সবাই এখানে আছি৷ আমাদের সামরিক বাহিনী এখানে৷ সমাজের নাগরিকরা এখানে৷ আমরা সবাই আমাদের দেশের স্বাধীনতা রক্ষা করছি, এবং এটা এভাবেই থাকবে৷’’
মিশ্র বার্তা
এই ছবিটি শনিবারের ভিডিও থেকে নেয়া৷ সামরিক স্টাইলের খাকি টি-শার্টের ওপর হালকা সবুজ জ্যাকেট পরে জেলেনস্কি নাগরিকদের আশ্বস্ত করছেন যে, তিনি কিয়েভেই আছেন৷ এর বাইরে আনুষ্ঠানিক পোশাক পরেও সংবাদ সম্মেলন করেছেন৷ তার বক্তব্যের মাধ্যমে তিনি একইসঙ্গে নাগরিকদের চাঙা রাখার পাশাপাশি তাদের আসন্ন বিপদ সম্পর্কেও সচেতন করার চেষ্টা করেছেন৷ তিনি ইউক্রেনীয়দের ‘অদম্য’ বৈশিষ্ট্য নিয়েও কথা বলেছেন৷
বাইডেনকে সাফ জবাব
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন জেলেনস্কির কিয়েভ ছাড়ার প্রয়োজন হলে তাকে সহায়তার প্রস্তাব দিয়েছিলেন৷ কিন্তু জেলেনস্কি বাইডেনকে বলেন, ‘‘আমার অস্ত্র দরকার, উড়ান নয়৷’’ ব্রিটেনের ইউক্রেন দূতাবাসের টুইটে এই তথ্য জানানো হয়েছে৷
আবেগী বার্তা
ইউরোপীয় ইউনিয়নের নেতাদের সঙ্গে এক ভিডিও কলে জেলেনস্কি বলেন, ‘‘আমাকে হয়ত আপনারা শেষবারের মতো জীবন্ত দেখছেন৷’’ এরপর তিনি তাদের কাছে অস্ত্র সহায়তা কামনা করেন৷
চার্চিলের সঙ্গে মিল
জেলেনস্কির সঙ্গে ব্রিটেনের দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ সময়কালীন প্রধানমন্ত্রী উইনস্টন চার্চিলের মিল খুঁজে পেয়েছেন চার্চিলের জীবনী লেখক অ্যান্ড্রু রবার্টস৷ তিনি জেলেনস্কির ‘অভাবনীয় ব্যক্তিগত সাহসিকতা’, ‘মানুষের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগের দক্ষতা’ এবং ‘জয় সম্পর্কে তার অটল বিশ্বাসের’ প্রশংসা করেন৷ চার্চিল একসময় বলেছিলেন, মানুষের অনেকগুলো গুণের মধ্যে প্রথম হচ্ছে সাহস, কারণ এটা এমন একটা গুন, যা অন্যগুলো নিশ্চিত করে৷
অভিনেতা ও কমেডিয়ান
২০১৯ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার আগে জেলেনস্কি একজন প্রখ্যাত অভিনেতা ও কমেডিয়ান ছিলেন৷ একটি শোতে তিনি স্কুল শিক্ষকের ভূমিকায় ছিলেন৷ শোতে দেখা যায়, দুর্নীতির বিরুদ্ধে দেয়া তার জ্বালাময়ী এক বক্তব্য একজন শিক্ষার্থী রেকর্ড করে অনলাইনে ছেড়ে দেয়৷ পরে তিনি দেশের প্রেসিডেন্ট হয়েছিলেন বলে শোতে দেখানো হয়৷
পোরোশেঙ্কোর মন্তব্য
২০১৯ সালে যখন জেলেনস্কি প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হন তখন তার প্রতিদ্বন্দ্বী সাবেক প্রেসিডেন্ট পেট্রো পোরোশেঙ্কো (ছবি) তার ইউক্রেনিয়ান ভাষা নিয়ে হাসাহাসি করেছিলেন (কারণ জন্মসূত্রে জেলেনস্কির প্রাথমিক ভাষা হচ্ছে রুশ)৷ এছাড়া পুটিনের বিরুদ্ধে দাঁড়াবার মতো রাজনৈতিক মর্যাদা তার নেই বলেও মন্তব্য করেছিলেন৷ কিন্তু বাস্তবে দেখা যায় পোরোশেঙ্কোকে হারিয়ে প্রেসিডেন্ট হয়ে যান জেলেনস্কি৷
জেলেনস্কির উত্তর
নির্বাচনি প্রচারণার সময় জেলেনস্কির সমালোচকরা বলেছিলেন, প্রেসিডেন্ট হওয়ার জন্য যে ধরনের গাম্ভীর্য ভাব দরকার, সেটা তার নেই৷ এর উত্তরে জেলেনস্কি বলেছিলেন, ‘‘আমি রাজনীতিবিদ নই৷ আমি একজন সাধারণ মানুষ যে সিস্টেম ভাঙতে এসেছে৷’’
শপথ অনুষ্ঠানে অঙ্গীকার
শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে জেলেনস্কি বলেছিলেন, ‘‘এতদিন ইউক্রেনীয়দের হাসানোর সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি, আর এখন এমন চেষ্টা করবো যেন ইউক্রেনীয়দের কাঁদতে না হয়৷’’