কনকর্ডের কথা মনে আছে?
কনকর্ড৷ নামটি উড়োজাহাজের ইতিহাসে গ্ল্যামার, মর্যাদা আর সর্বোপরি অবিশ্বাস্য গতির প্রতীক হয়ে আছে৷ বহু বছর আকাশে ডানা মেলেনি সুপারসনিক উড়োজাহাজটি৷ তবুও তার খ্যাতি একটুও কমেনি৷
দর্শনীয় এবং গতিময়
মসৃণ গড়ন, ত্রিভুজ ডানা আর অনেকটা মানুষের নাকের আকৃতির মতো দেখতে কনকর্ড বর্তমানেই ভবিষ্যতের উড়োজাহাজের ধারণা নিয়ে আসে৷ তবে অভাবনীয় গতিই ছিল কনকর্ডের খ্যাতির সবচেয়ে বড় কারণ৷ ঘণ্টায় ২,০০০ কিলোমিটার পর্যন্ত ছুটতে পারত এটি৷
অস্বাভাবিক জ্বালানি খরচ
অতিরিক্ত দাম, উচ্চ শব্দ আর ব্যাপক জ্বালানি খরচ উড়োজাহাজটি পরিচালনায় সবচেয়ে বড় সমস্যা হয়ে ওঠে৷ প্রতি ঘণ্টায় এটি ২৫,৬০০ লিটার জ্বালানি খরচ করত, যেখানে যাত্রী ধারণক্ষমতা ছিল মাত্র ১২৮ জন৷ এর কোনো বাণিজ্যিক সম্ভাবনাই আসলে ছিল না৷
৩.৫ ঘণ্টায় প্যারিস থেকে নিউইয়র্ক
ফরাসি পাইলট আন্দ্রে টুরকা ১৯৬৯ সালের ২ মার্চ কনকর্ডের প্রথম ফ্লাইট চালনা করেন৷ আট বছর পর এয়ার ফ্রান্স এবং ব্রিটিশ এয়ারওয়েজ উড়োজাহাজটিকে তাদের নিউইয়র্ক রুটে ব্যবহার করে৷ এখনকার চেয়ে অর্ধেক সময়ে এই পথ পাড়ি দিত কনকর্ড৷
তারকা ভ্রমণসঙ্গী
সিন্ডি ক্রফোর্ড, আন্দ্রে আগাসি, ক্লাউডিয়া শিফারের মত ধনী আর তারকা ব্যক্তিরা ছিলেন ব্যয়বহুল কনকর্ডের নিয়মিত যাত্রী৷ যার ভাড়া ছিল কয়েক হাজার ডলার৷
ককপিটে এক নজর
এটি সত্যিকারের একটি কনকর্ড উড়োজাহাজের ককপিটের ছবি৷ যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের ইন্ট্রপিড সি, এয়ার অ্যান্ড স্পেস মিউজিয়ামে প্রদর্শনীর জন্য রাখা আছে এটি৷
গাদাগাদি আসন
কনকর্ডে যাত্রীদের জন্য জায়গা ছিল খুবই সীমিত, যেমনটি ১৯৬৮ সালের এই ছবিতে দেখা যাচ্ছে৷ তবে স্বল্প সময়ের ফ্লাইটের জন্য যাত্রীরা এই পরিস্থিতি সানন্দেই গ্রহণ করতে রাজি ছিলেন৷
রাশিয়ার সাথে প্রতিযোগিতা
১৯৫৪ সালে ব্রিটেন যাত্রীবাহী সুপারসনিক উড়োজাহাজ নির্মাণ শুরু করে৷ ফ্রান্স, যুক্তরাষ্ট্র আর সোভিয়েত ইউনিয়নও তাদের অনুসরণ করে৷ ১৯৬৮ সালে নতুন বছরের আগেই রুশ সুপারসনিক এয়ারক্রাফট তুপোলেভ টিইউ ১৪৪ তার প্রথম ফ্লাইট পরিচালনা করে৷ দুই মাস পরই কনকর্ড যাত্রা করে৷ যা তৈরি হয়েছিল ব্রিটিশ ও ফরাসীদের যৌথ উদ্যোগে৷
বিপর্যয়
২০০০ সালে ২৫ জুলাই এয়ার ফ্রান্সের ফ্লাইট ৪৫৯০-এর দুর্ঘটনা কনকর্ডের জন্য প্রথম বিপর্যয়ের কারণ হয়ে দাড়ায়৷ উড্ডয়নের সময় এয়ারক্রাফটি রানওয়েতে কিছুর সাথে ধাক্বা খায়৷ এতে উড়োজাহাজের টায়ারে আগুন ধরে যায় এবং তা ছড়িয়ে পড়ে জ্বালানি ট্যাংকে৷ উড্ডয়নের দুই মিনিটের মধ্যে একটি হোটেলে আছড়ে পড়ে কনকর্ড৷
শেষ যাত্রা
হোটেলে উড়োজাহাজ বিদ্ধস্ত হওয়ার ঘটনায় বিমানের ১০৯ জনের সবাই নিহত হন৷ সেই সাথে হোটেলে থাকা আরো চারজন মারা যান৷ এই দুর্ঘটনা কনকর্ডের ভবিষ্যতকে প্রশ্নের মুখে ফেলে৷ ২০০৩ সালে কনকর্ড শেষবারের মতো আকাশে উড়ে৷
নতুন সুপারসনিক এক্স প্লেন
২০১৮ সালে নাসা লকারহিড মার্টিনকে এক্স প্লেন নামের একটি নতুন সুপারসনিক এয়ারক্রাফটের নকশা তৈরি ও নির্মাণের দায়িত্ব দেয়৷ শিল্পীর কল্পনায় যা অনেকটা পুরনো কনকর্ডেরই আদল পেয়েছে৷
সুপারসনিকের ভবিষ্যৎ?
২০২৪ সালে নাসা ও লকারহিড মার্টিনের এক্স-৫৯ এর পরীক্ষামূলক উড্ডয়নের কথা রয়েছে, যা কনকর্ডের গতিকেও হার মানাতে পারে৷ এতে সুপারসনিক সময়ে ভ্রমণের যে ধারণার মৃত্যু হয়েছিল বলে মনে করা হচ্ছিল, তা আবারও ফিরে আসতে পারে৷