কঙ্গোর হাতে তৈরি চকোলেট!
কঙ্গো নামটি শুনলেই সবার মনে সহিংসতা, গৃহযুদ্ধ, শান্তিরক্ষা বাহিনীর কর্মকাণ্ডের কথাই ভেসে ওঠে৷ এই যুদ্ধবিধ্বস্ত কঙ্গোতে প্রথম স্থাপিত হয়েছে চকোলেট ফ্যাক্টরি৷ কোম্পানির নাম ‘কোকোয়া কঙ্গো’৷
বেনির কোকো বীজ
বিশ্বে কোকো বিন রপ্তানির জন্য কঙ্গোর বেনি টাউন অনেক আগে থেকেই সুপরিচিত৷ কোকোয়া কঙ্গো’র প্রতিষ্ঠাতা অ্যাডেলে গেউইট ও ম্যাথিউ চেম্বার সিদ্ধান্ত নেন তাঁরা বেনির এই কোকো বিনকে রপ্তানির পরিবর্তে দেশেই জনপ্রিয় করবেন৷ সেই ভাবনা থেকেই দেশের প্রথম চকোলেট ফ্যাক্টরি নির্মিত দেশে উৎপাদিত কোকো বীজ থেকে৷
বীজের জন্য অপেক্ষা
কোকো বীজের জন্য রীতিমতো সংগ্রাম করতে হয়৷ বনে-জঙ্গলে লুকিয়ে থাকা সন্ত্রাসীদের চোখ এড়িয়ে দুর্গম পথ দিয়ে কোকো বীজ আসে ম্যাথিউদের কারখানায়৷ তাঁদের নিজস্ব চাষীদের প্রায় সবাই নারী৷ এর ওপর রয়েছে রপ্তানিকারকদের দৌড়াত্ম্য৷
নিজে নিজে শেখা
অ্যাডেলে গেউইট বড় হয়েছেন ক্যামেরুনে, ফিন্যান্স নিয়ে পড়াশোনা করেছেন কেনিয়াতে৷ কঙ্গোর নারীদের সাবলম্বী হতে সহায়তা করতেই এসেছিলেন এখানে৷ নিজে নিজে কোকো, দুধ, মাখন মিশিয়ে চকোলেট বানাতে শেখেন তিনি৷
সম্পূর্ণ হাতে তৈরি
কোকোয়া কঙ্গো প্রতিষ্ঠার তিন মাসে যত চকোলেট-বার উৎপাদিত হয়েছে তার সবই খুব সাবধানে স্টোভে জ্বালিয়ে প্রস্তুত করা৷ কয়েক হাজার বার তৈরি হয়েছে এখানে৷ ২০১৯ সাল থেকে প্রতি মাসে ২০ হাজার চকোলেট-বার তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে তাদের৷
১০০ ভাগ দেশি
কোকোয়া কঙ্গো-তে কাজ করেন মেমি সিমিয়ার৷ পাঁচ সন্তানের মা এই কর্মী এখানে চকোলেট-বার প্যাকেজিংয়ের কাজ করেন৷ তিনি জানান, টিভিতে চকোলেট খেতে দেখেছেন৷ এ যে সত্যিই তৈরি করা যায়, এর স্বাদ নেওয়া যায় এমন ভাবনাও ছিল না৷ এখন শতভাগ দেশে তৈরি চকোলেটের স্বাদ দিতে পারছেন নিজের সন্তানদের৷
দৃ্ষ্টিনন্দন প্যাকেট
আর সব চকোলেট কোম্পানির মতো রঙিন জরি কাগজে, কোম্পানির লেবেল সাঁটা ও গুণগান বর্ণনা করা প্যাকেট নয় কোকোয়া কঙ্গোর৷ স্থানীয় শিল্পীদের আঁকা ছবি দিয়ে মলাট করা হয় কোকোয়া কঙ্গো’র চকোলেট-বারের৷ ৩টি ৫০ গ্রামের বারের এই চকোলেট প্যাকেটের দাম পড়ে ১৭ ইউরো৷
পদে পদে বিপদ
বেনির কোকো উৎপাদনকারী নারীদের জন্য কাজ করেন সিলভিয়া৷ তিনি জানান, এখানে নারীরা ভীষণ অনিরাপদ৷ মাঠে কাজ করার সময় ধর্ষিত হওয়া, অপহৃত কিংবা খুন হয়ে যাওয়া খুবই স্বাভাবিক ঘটনা৷ কোনো প্রতিষ্ঠানে কাজ করলে নিরাপত্তা পাওয়া যায়, কিন্তু কৃষকদের এখানে নিরাপত্তা নেই৷ চকোলেট শিল্পকে রক্ষা করতে সরকারকেও দৃঢ় পদক্ষেপ নিতে হবে বলে মনে করেন সিলভিয়া৷