1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

কক্সবাজার সৈকতে ধর্ষণ, নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন

সমীর কুমার দে ঢাকা
২৩ ডিসেম্বর ২০২১

রাজধানী ঢাকা থেকে কক্সবাজারে বেড়াতে গিয়ে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছেন এক নারী। সুরক্ষিত লাবনী পয়েন্টে স্বামী ও ৮ মাসের সন্তানসহ বেড়াতে গিয়েছিলেন তিনি। সুরক্ষিত সৈকতে এই ঘটনায় তোলপাড় শুরু হয়েছে।

https://p.dw.com/p/44lfB
আগেও বিদেশি পর্যটক ধর্ষিত হয়েছেন, চেষ্টাও হয়েছেছবি: picture-alliance/Pacific Press/E. McGregor

সেখান থেকেই তাকে তুলে নিয়ে একটি চায়ের দোকানের পেছনের ঝোপে নিয়ে ধর্ষণ করে তিনজন। এরপর স্বামী ও সন্তানকে জিম্মি রেখে একটি গেস্ট হাউজে নিয়ে ওই নারীকে ধর্ষণ করা হয়। 

এর আগে ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে একজন অস্ট্রেলীয় নারীকে ধর্ষণের চেষ্টা করে একটি রিসোর্টের দুইজন কর্মচারী। আর ২০০৫ সালে বিদেশি এক নারীকে ধর্ষণ করা হয়। আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যাপক তৎপরতার মধ্যে কক্সবাজারের সুরক্ষিত একটি সৈকতে এই ধরনের ঘটনাগুলো নানা প্রশ্নের জন্ম দিচ্ছে।

কেন পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যাচ্ছে না জানতে চাইলে কক্সবাজার হোটেল মোটেল গেস্ট হাউজ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম সিকদার ডয়চে ভেলেকে বলেন, "আমরা তো দেখি, কখনও কখনও কক্সবাজারে পর্যটকদের চেয়ে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য বেশি। তারপরও কেন বারবার এই ধরনের ঘটনা ঘটে যাচ্ছে আমরা বুঝতে পারছি না। আমরা চাই, এখানে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হোক।”

ধর্ষণকারীরা সনাক্ত, গ্রেফতার একজন

কক্সবাজার র‌্যাব-১৫-এর সিপিসি কমান্ডার মেজর মেহেদী হাসান জানান, গত মঙ্গলবার ঢাকার যাত্রাবাড়ী থেকে স্বামী-সন্তানসহ কক্সবাজার বেড়াতে যান ওই নারী পর্যটক। তারা শহরের হলিডে মোড়ের একটি হোটেলে রুম নিয়ে ওঠেন। ওই হোটেল থেকে তারা বিকেলে যান লাবনী পয়েন্টের সৈকতে। সেখানে অপরিচিত এক যুবকের সঙ্গে তার স্বামীর ধাক্কা লাগা নিয়ে দু'জনের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। এর জের ধরে সন্ধ্যার পর পর্যটন গলফ মাঠের সামনে থেকে তার আট মাসের সন্তান ও স্বামীকে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় করে কয়েকজন মিলে তুলে নিয়ে যায়। এ সময় আরেকটি অটোরিকশায় ওই নারীকে তুলে নেয় তিন যুবক।

পর্যটন গলফ মাঠের পেছনে ঝাউবীথির একটি ঝুপড়ি চায়ের দোকানের পেছনে নিয়ে তাকে ধর্ষণ করে তিনজন। এরপর তাকে নিয়ে যাওয়া হয় জিয়া গেস্ট ইন নামে একটি হোটেলে। সেখানে আরেক দফা ধর্ষণ করে দুর্বৃত্তরা। ঘটনা কাউকে জানালে সন্তান ও স্বামীকে হত্যা করা হবে বলেও তাকে হুমকি দেয় বলে জানানো হয়। পরে ওই নারীর স্বামীর কাছ থেকে খবর পেয়ে বুধবার সকালে সেখান থেকে নারীকে উদ্ধার করে র‌্যাব।

আবুল কাশেম সিকদার

র‌্যাব কীভাবে ঘটনাটি জানতে পেরেছে? জানতে চাইলে র‌্যাব-১৫ এর কমান্ডিং অফিসার লে. কর্ণেল মো. খায়রুল ইসলাম ডয়চে ভেলেকে বলেন, "ওই নারীর স্বামী প্রথমে পুলিশের জরুরি সেবা ৯৯৯-এ ফোন করার চেষ্টা করেন। কিন্তু সেখানে না পেয়ে শহরের মোড়ে বিলবোর্ডে থাকা র‌্যাবের নম্বরে ফোন করেন। এরপর র‌্যাব দ্রুত অভিযান চালিয়ে ওই নারীকে গেস্ট হাউজ থেকে উদ্ধার করে।” তিনি বলেন, "আমরা গেস্ট হাউজের ম্যানেজার গিয়াস উদ্দিন ছোটনকে গ্রেফতার করেছি। যে অপরাধী ওই নারীকে গেস্ট হাউজে নিয়ে গিয়েছিল, তার সঙ্গে ছোটনের বন্ধুত্ব আছে। টাকার বিনিময়ে তিনি রুম দিয়েছিলেন। এই অপরাধের সঙ্গে যে তিনজন জড়িত তাদের আমরা সনাক্ত করতে পেরেছি, শিগগিরই তারা গ্রেফতার হবে বলে আশা করছি।”

কক্সবাজার হোটেল মোটেল গেস্ট হাউজ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম সিকদার বলেন, "এই গেস্ট হাউজটি কক্সবাজারের প্রথম দিকের একটা। তারা অত্যন্ত সুনামের সঙ্গে ব্যবসা করে। কিন্তু সেখানে এই ধরনের ঘটনা আমাদের বিশ্বাস করতেও কষ্ট হচ্ছে। যদি ম্যানেজার জড়িত থাকে আমরা তার কঠোর শাস্তি চাই।”

কক্সবাজারের একজন সিনিয়র সাংবাদিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে ডয়চে ভেলেকে বলেন, "সৈকতের পাশেই বাহারছড়া এলাকা। সেখানে আশিকুল ইসলামের নেতৃত্বে অন্তত ৩২ জনের একটি গ্রুপ সক্রিয়। তারা সন্ধ্যার পর ফাঁদ পাতে। এভাবেই হয় কারো সর্বস্ব লুট করে নেয়, কাউকে ধর্ষণ করে। এই আশিকুল চার মাস আগে জেল থেকে ছাড়া পেয়েছে। সে একজন পেশাদার ছিনতাইকারী।’’ মাদকসহ একাধিক মামলারও আসামি। এই ঘটনায় তার সঙ্গে থাকা আব্দুল জব্বারকে সনাক্ত করেছে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী।

ওই নারী প্রথমে পুলিশের সহযোগিতা চেয়েছিলেন, কিন্তু পাননি। এমন অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে কক্সবাজার জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রফিকুল ইসলাম ডয়চে ভেলেকে বলেন, "আমাদের কাছে কেউ কোন সহযোগিতা চায়নি। এখন আমরা বিষয়টি নিয়ে তদন্ত শুরু করেছি। দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

আগেও বিদেশি পর্যটক ধর্ষিত হয়েছেন

২০১৯ সালের ডিসেম্বরে কক্সবাজারে "গুড ভাইব কটেজ” নামের একটি রিসোর্টে অস্ট্রেলীয় এক নারী পর্যটককে ধর্ষণের চেষ্টার অভিযোগ উঠে। ওই ঘটনায় রিসোর্টের দুই কর্মচারীকে আটক করে পুলিশ। ১৫ ডিসেম্বর রাতে কক্সবাজারের রামুর পেঁচারদ্বীপ এলাকার "মারমেইড বিচ রিসোর্টের” পাশে অবস্থিত ওই কটেজ থেকে তাদের আটক করা হয়।

লে. কর্ণেল মো. খায়রুল ইসলাম

তখন পুলিশ জানিয়েছিল, রাতে কটেজে ঘুমানোর সময় অস্ট্রেলিয়ার ওই নারীকে ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়। এ সময় তিনি জরুরি নম্বর-৯৯৯'এ ফোন করে পুলিশকে জানান। এর পরিপ্রেক্ষিতে রামু থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে ওই নারী পর্যটককে উদ্ধার করে। ধর্ষণচেষ্টার সময় ধস্তাধস্তিতে ওই নারী আহত হন।

এর আগে ২০০৫ সালেও কক্সবাজারে বেড়াতে গিয়ে এক বিদেশি পর্যটক ধর্ষণের শিকার হন। ওই ঘটনায় ধর্ষক গ্রেফতার হয়। স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কক্সবাজার বিচে প্রথম ধর্ষণের ঘটনা ঘটে ১৯৮৭ সালে। প্রকাশ্য বিচে এক বিদেশি পর্যটককে ধর্ষণ করে কয়েকজন বখাটে। ওই ঘটনায় তিনজনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়েছে।

বাংলাদেশের পর্যটন নিয়ে খারাপ বার্তা যাচ্ছে

বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল হোটেল এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এইচ এম হাকিম আলী ডয়চে ভেলেকে বলেন, "গার্মেন্টস সেক্টর থেকে এখন সবচেয়ে বেশি বৈদেশিক মুদ্রা এলেও আমাদের ভবিষ্যত কিন্তু পর্যটন খাতে। উদীয়মান এই সেক্টরে এ ধরনের ঘটনাগুলো বিদেশিদের কাছে খুবই খারাপ বার্তা দিচ্ছে। সরকারের উচিৎ এদিকে বিশেষ মনোযোগ দেওয়া। পর্যটন এলাকায় আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতাও বাড়ানো দরকার।”

বাংলাদেশ রেস্তোঁরা মালিক সমিতির কক্সবাজার জেলা শাখার সভাপতি নাঈমুল হক চৌধুরী টুটুল ডয়চে ভেলেকে বলেন, "করোনার কারণে অনেকদিন পর্যটক ছিল না। এখন পরিস্থিতি একটু ভালো হওয়ায় পর্যটক বাড়ছে। তার মধ্যে এই ধরনের ধর্ষণের ঘটনা খুবই খারাপ সংবাদ। বিশ্বের সবচেয়ে বড় সৈকত হওয়ার পরও নিরপত্তা নিশ্চিত করতে না পারায় বিদেশিরা এখানে আসতে খুব একটা আগ্রহ দেখান না। আমাদের নিরাপত্তা আগে নিশ্চিত করা দরকার। তাহলে এই পর্যটন সেক্টরটা দেশের অর্থনীতিতে বড় ভূমিকা রাখবে বলে আমার বিশ্বাস।”