কক্সবাজারে বাহারি শামুক-ঝিনুকের বেচাকেনা
কক্সবাজারের রূপময়ী সমুদ্র সৈকতে ঢেউয়ের মূর্ছনা উপভোগের পাশাপাশি ভ্রমণপ্রেমীদের মন কাড়ে শামুক-ঝিনুকের বাহারি পণ্য। ছবিঘরে দেখুন কক্সবাজারে এমন কিছু পণ্যের বেচাকেনা।
ভ্রমণের সুখস্মৃতি
সমুদ্রপ্রেমী কমবেশি সবাই ভ্রমণের স্মৃতি হিসাবে কিংবা প্রিয়জনদের উপহার দিতে পছন্দমাফিক কিনে নিয়ে যান পর্যটন নগরীর ঐতিহ্য শামুক, ঝিনুক ও কড়ি দিয়ে তৈরি হরেক রকমের পণ্য। অনেকের কাছে আবার এটি শখ। এই শখ মেটাতে দেশের বিভিন্ন জেলার পর্যটকেরা ভিড় করেন সাগরপাড়ের দোকানগুলোতে।
নাম খোদাই
শামুক, ঝিনুক ও কড়িতে রং দিয়ে কিংবা খোদাই করে পছন্দমতো যেকোনো নাম লেখানো যায়। অনেকে স্বজনদের নাম ও জন্মদিনের তারিখ লিখিয়ে নেন। এক্ষেত্রে সময় বেশিক্ষণ লাগে না। কারিগর দিয়ে শামুক, ঝিনুক ও কড়ির ওপর নাম লেখাতে খরচ পড়ে ৬০ টাকা থেকে ২০০ টাকা।
শত শত দোকান
সৈকতের লাবণী, সুগন্ধা ও কলাতলী পয়েন্ট, টেকপাড়া বার্মিজ মার্কেট এবং হোটেল-মোটেল জোনে শামুক-ঝিনুকের পণ্য বিক্রির শত শত দোকান রয়েছে। লাবণী পয়েন্টের মার্কেটটি সবচেয়ে বড়। সকাল ৯টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত রকমারি পণ্যের পসরা সাজিয়ে ক্রেতাদের আকৃষ্ট করেন দোকানিরা।
শামুকের পণ্য
হরেক রকম শামুক দিয়ে তৈরি ঝাড়বাতি পাঁচশ থেকে তিন হাজার টাকা, রাজমুকুট ছয়শ থেকে আড়াই হাজার টাকা, হাতের বালা একশ থেকে দুইশ টাকা, ব্যাগ আটশ থেকে আড়াই হাজার টাকা ও ল্যাম্পশেড একজারা তেকে ১২শ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া শামুকের দুল, মালা, চুলের কাঁটা, আংটি আর চুড়ির দাম ৫০ থেকে ৩৫০ টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে।
ঝিনুকের পণ্য
ঝিনুকের মালা পাওয়া যায় ১০ থেকে দুইশ টাকায়। তুলনামূলক সস্তা হলেও দেখতে বেশ দারুণ। কেউ কেউ ঘর সাজাতে ঝিনুকের ঝাড়বাতি কেনেন। সৈকতে মেইকা ঝাড়বাতি পাঁচশ থেকে একহাজার টাকা, ডুলা ঝাড়বাতি দুইশ থেকে আটশ টাকা, ঝরনা বাতি দুইশ থকে সাতশ টাকা এবং ঝিনুকের ল্যাম্পশেড পাঁচশ থেকে এক হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
মুক্তার মালা
ঝিনুক থেকে পাওয়া যায় মূল্যবান মুক্তা। একসময় টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ ও মহেশখালী উপকূল থেকে আহরণ করা হতো বিপুল পরিমাণ মুক্তা। এখন বিদেশ থেকে আমদানি করে মুক্তা বেচাকেনা চলছে। কক্সবাজার সৈকতের এই বাজারে মুক্তার মালা একশ থেকে আড়াই হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে৷
সন্ধ্যার পর ভিড়
কক্সবাজারে সারা বছরই ক্রেতাদের মধ্যে শামুক-ঝিনুকের পণ্যের বেশ কদর। দিনের তুলনায় রাতে দোকানে বেচাকেনা বেশি হয়। সারাদিন সৈকতে বেড়ানোর পর সন্ধ্যা থেকে কেনাকাটা করেন বেশিরভাগ পর্যটক।
চাহিদা ব্যাপক
শামুক-ঝিনুকের চাবির রিং বিক্রি হয় বেশ। এছাড়া বিভিন্ন অলঙ্কার, বাহারি কড়ি ও প্রবাল পাথর পাওয়া যায়। শৈল্পিক কারুকার্যময় শামুক-ঝিনুকের পণ্যের চাহিদা রয়েছে সারাদেশে। অনেক ক্রেতায় ব্যভসার উদ্দেশ্যে কেনেন এসব পণ্য৷ এছাড়া দেশের বিভিন্ন স্থানেও ব্যবসার উদ্দেশ্যে শামুক-ঝিনুকের পণ্য সরবরাহ করা হয়।
কোটি কোটি টাকা
সৈকতে পর্যটক সমাগম যত বেশি হয়, শামুক-ঝিনুকের পণ্য বিক্রি ততই বাড়ে। ঈদের সময় কক্সবাজারে কোটি কোটি টাকার বেচাকেনা হয়। বিশেষ দিবসগুলোতেও বিপুলসংখ্যক পর্যটক আসেন। ফলে তখন শামুক-ঝিনুকের দোকানে বেশি ভিড় দেখা যায়।
চলতি বছর ব্যবসা মন্দা
এবার পর্যটনের ভরা মৌসুমে (ডিসেম্বর-ফেব্রুয়ারি) রাজনৈতিক অস্থিরতা ও নির্বাচনের কারণে ক্রেতা সংকটে পর্যটন নির্ভর এই ব্যবসায় চাঙা ভাব নেই। ব্যবসায়ী মো. শাহজাহান মিয়া নিজের দোকানে বসে ডয়চে ভেলের কাছে এ বিষয়ে হতাশা প্রকাশ করেন।
শামুক-ঝিনুক কুড়িয়ে জীবিকা নির্বাহ
কক্সবাজার সৈকত, টেকনাফ, শাহপরীর দ্বীপ, সেন্টমার্টিন, মহেশখালী, সোনাদিয়া, কুতুবদিয়াসহ বিভিন্ন উপকূলে জোয়ারের পানিতে ভেসে আসে অর্ধশতাধিক প্রজাতির শামুক-ঝিনুক। স্থানীয় বাসিন্দাদের অনেকে সেগুলো কুড়িয়ে ব্যবসায়ীদের কাছে কেজি দরে বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করেন।
লক্ষাধিক মানুষের কর্মসংস্থান
কক্সবাজার শহরে প্রক্রিয়াজাত করার পর শামুক-ঝিনুক দিয়ে জেলার বিভিন্ন এলাকায় তৈরি হয় রকমারি পণ্য। ঘরে ঘরে ক্ষুদ্র কারখানায় নারীরা মালা গাঁথেন। শামুক-ঝিনুক সংগ্রহ, প্রক্রিয়াজাতকরণ, উৎপাদন ও বেচাকেনার ওপর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে লক্ষাধিক মানুষের কর্মসংস্থান নির্ভরশীল।
ষাটের দশক থেকে শুরু
ষাটের দশকে কক্সবাজারে শামুক-ঝিনুকের পণ্য বাজারজাত শুরু হয়। এরপর দ্রুত এই শিল্পের প্রসার ঘটে। ছয় দশক পেরিয়ে বর্তমানে সাগরের অলঙ্কার শামুক-ঝিনুক দিয়ে তৈরি করা পণ্যের এই খাতে বিনিয়োগের পরিমাণ শত কোটি টাকা। মূলত পর্যটকদের ওপর নির্ভরশীল এখানকার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা।