কংক্রিটের কার্বন ফুটপ্রিন্ট কমানোয় সাফল্য
২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩সুইজারল্যান্ডের লোসান শহরের প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কংক্রিট গবেষক কারেন স্ক্রিভেনার ও তাঁর টিম বহু বছর ধরে এই উপাদানের আদর্শ গঠনের সন্ধান করছেন৷ নির্মাণের এই উপকরণের কার্বন-ডাই-অক্সাইড ফুটপ্রিন্ট কমানোই তাঁদের মূল লক্ষ্য৷ কারেন বলেন, ‘‘গোটা বিশ্বে আবাসন গড়ার ক্ষেত্রে কংক্রিটই সেরা উপাদান৷ কিন্তু সেটার উন্নতির প্রয়োজন৷ আমরা সেটা করতে পারি৷''
কারেন ও তার টিম সিমেন্ট, পানি, বালু ও পাথর দিয়ে নতুন ধরনের কংক্রিট তৈরি করছেন৷ সিওটু ফুটপ্রিন্ট কমাতে সিমেন্টের গঠনের মধ্যে আসল রহস্যের প্রতি মনোযোগ দিতে হবে৷
চুনই সিমেন্টের মূল উপাদান৷ ১,৪০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় সেটি জ্বালাতে হয়৷ ফলে বিশাল পরিমাণ কার্বন-ডাই-অক্সাইড নির্গমন ঘটে৷ শুধু জ্বালানি নয়, চুনের নিজস্ব উত্তাপও সিওটু সৃষ্টি করে৷ কারেন স্ক্রিভেনার জানান, ‘‘কংক্রিটের ৯০ শতাংশ নির্গমনের উৎসই হলো ক্লিংকার, যা বড় সিমেন্টের মধ্যে উৎপাদিত হয়৷ সেই ক্লিংকার যতটা সম্ভব বার করে নিলে সিওটু-র মাত্রাও কমবে৷''
গবেষণাগারে পরীক্ষা চালিয়ে একটি পথ বার করা গেছে৷ পোড়া মাটি ও অক্ষত চুন সিমেন্টকে অনেক বেশি পরিবেশবান্ধব করে তোলে৷ সে ক্ষেত্রে চুন পোড়ানোর প্রয়োজন নেই৷ ১,৪৫০ ডিগ্রি তাপমাত্রায় চুন পোড়ানো হয়৷ মাটির ক্ষেত্রে ৮০০ ডিগ্রিই যথেষ্ট৷ ফলে জ্বালানি সাশ্রয় হয়৷ তাছাড়া মাটি চুনের মতো বাড়তি সিওটু নির্গমন করে না৷ ফলে ৩০ শতাংশ সিওটু সাশ্রয় করা যায়৷ কারেন বলেন, ‘‘আমার মতে, এর বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে, কারণ কাদামাটির কোনো অভাব নেই৷ অর্থাৎ বিকল্প উপাদানের মাত্রা গড়ে ২০ শতাংশ থেকে আমরা আজ ৪০ শতাংশ বাড়াতে পারি৷ তখন বছরে ৪০ কোটি টন সিওটু সাশ্রয় করা সম্ভব হবে, যা গোটা সুইজারল্যান্ডের সিওটু নির্গমনের দশ গুণের সমান৷’’
অসংখ্য পরীক্ষার মাধ্যমে দেখা গেছে যে ইকো কংক্রিটের গুণাগুণ হুবহু প্রচলিত কংক্রিটের সমান এবং সেটিও একই রকম স্থিতিশীল৷ নির্মাণের নতুন উপকরণের ক্ষেত্রে সবার আগে ভারতের উপর নজর রাখা হচ্ছে৷ কারেন স্ক্রিভেনার মনে করিয়ে দেন, ‘‘ভারত আজ বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম কংক্রিট ব্যাবহারকারী দেশ৷ কিন্তু তালিকার শীর্ষ দেশ চীনের সঙ্গে তুলনা করলে দেখা যাবে, জনপ্রতি ব্যবহারের নিরিখে ভারতে কংক্রিটের ব্যবহার পাঁচ থেকে ছয় গুণ কম৷ ফলে ভবিষ্যৎ প্রবণতা সম্পর্কে আমরা একটা ধারণা পেতে পারি৷ চীনে কংক্রিট ব্যবহার কমবে, ভারতে বেড়ে যাবে৷ আমরা সত্যি পরিবর্তন দেখতে চাইলে নির্মাণের আগেই আমাদের সেখানে প্রবেশ করতে হবে৷''
ভারতের গবেষকরা শিল্পজগতের সঙ্গে সহযোগিতার মাধ্যমে এলসিথ্রি সিমেন্টের প্রাথমিক নমুনা সৃষ্টি করেছেন৷ পরীক্ষামূলক প্রকল্প হিসেবে সুইজারল্যান্ডের দূতাবাস ভবন নির্মাণ করা হয়েছে৷ তার ফল দেখে ভারতের গবেযকরা খুব উৎসাহ পেয়েছেন৷ আইআইটি দিল্লির শশাঙ্ক বিষ্ণোই বলেন, ‘‘এই সিমেন্টের বড় গুণ হলো উৎপাদনের পর সেটি সাধারণ পোর্টল্যান্ড সিমেন্টের মতোই ব্যবহার করা যায়৷ সেটির বৈশিষ্ট্যও একেবারে এক৷ ফলে আমরা এমন সমাধানসূত্র সৃষ্টি করেছি, যা একই সঙ্গে বাণিজ্যিকভাবে কার্যকর এবং পরিবেশের জন্য ভালো৷''
লোসান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাবের ছোট পরিসরে যে সূচনা ঘটেছে, ভবিষ্যতে জলবায়ু সংকটের মোকাবিলা করতে সেটি বড় অবদান রাখতে পারে৷
পেটার হ্যোলরিগল/এসবি