1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ওয়াকফ আইনের প্রস্তাবিত সংশোধন নিয়ে প্রবল বিতর্ক

৫ আগস্ট ২০২৪

মোদী সরকার ওয়াকফ আইনে সংশোধন আনতে চলেছে বলে রিপোর্ট। তারপরই এনিয়ে রীতিমতো বিতর্ক শুরু হয়েছে।

https://p.dw.com/p/4j6yX
ভারতের নতুন সংসদ ভবন।
ভারতীয় সংসদে ওয়াকফ আইন সংশোধন বিল পেশ করতে পারে মোদী সরকার।ছবি: Arvind Yadav/Hindustan Times/Sipa USA/picture alliance

বিভিন্ন সংবাদপত্রের রিপোর্ট বলছে, ১৯৯৫ সালের ওয়াকফ আইনে ৪০টি সংশোধন আনতে চায় মোদী সরকার। তারা এমন একটি ব্যবস্থা করতে চায় যাতে, ওয়াকফ বোর্ডকে প্রতিটি সম্পত্তি বাধ্যতামূলকভাবে জেলা প্রশাসনের কাছে নথিভুক্ত করতে হয়। সারা দেশে ৩০টি ওয়াকফ বোর্ড আছে। গত শুক্রবার কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার বৈঠকে ৪০টি সংশোধনীর প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে।

সরকার চাইছে, প্রতিটি ওয়াকফ বোর্ডে নারীদের সদস্য করতে হবে। বর্তমানে নারীরা ওয়াকফ বোর্ড বা কাউন্সিলের সদস্য নন। সংশোধিত বিলে অন্ততপক্ষে দুইজন নারীকে বোর্ডে রাখার কথা বলা হয়েছে বলে রিপোর্ট জানাচ্ছে।

এই ওয়াকফ বোর্ডের কাজ হলো, মুসলিমরা যে সম্পত্তি ধর্মীয় কারণে দান করেন, তার দেখভাল করা। যে উদ্দেশ্য নিয়ে সেই দান করা হচ্ছে, তা কার্যকর করা।  বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের রিপোর্ট বলছে, ভারতে এখন ওয়াকফ বোর্ডের কাছে আট লাখ ৭২ হাজার ২৯২টি সম্পত্তি আছে, তার ফলে আট লাখ একরের বেশি জমি ওআকফ বোর্ডের হাতে রয়েছে। এখান থেকে যে অর্থ আয় হয়, তা শুধুমাত্র মুসলিম সম্প্রদায়ের উন্নয়নে খরচ হওয়ার কথা।

কেন এই সংশোধন?

সরকারি সূত্র জানাচ্ছে, সাচার কমিটি এবং কে রহমান খানের নেতৃত্বে যৌথ সংসদীয় কমিটি আইন সংশোধনের প্রস্তাব দিয়েছে।

এছাড়া মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে থেকেও এই দাবি উঠেছিল। এই আইনকে আরো স্বচ্ছ ও দায়বদ্ধ করার দাবি উঠেছে। ওয়াকফ বোর্ড যে সিদ্ধান্ত নেয়, তানিয়ে আদালতে বিচার করা যায় না। এর বিরুদ্ধেও সোচ্চার হয়েছিলেন কিছু মানুষ।

বিজেপি নেতা দীনেশ শর্মা জানিয়েছেন, বোহরা-সহ কিছু মুসলিম সম্প্রদায় এই আইনের সংশোধন দাবি করেছিল। কারণ, ওয়াকফ বোর্ডের বিরুদ্ধে বহু অভিযোগ উঠেছে।

কী আছে সংশোধনে?

রিপোর্ট বলছে, ওয়াকফ বোর্ডের সিদ্ধান্তকে আদালতে চ্যালেঞ্জ জানানোর বিষয়টি বিলে থাকছে। তাছাড়া যে সব সম্পত্তি নিয়ে বিরোধ আছে, সেগুলির নতুন করে যাচাই করে দেখার কথা রয়েছে।

ওয়াকফ বোর্ডের গঠনের পরিবর্তন করে, সেখানে নারী সদস্য রাখা বাধ্যতামূলক করার কথা বলা হয়েছে। কোনো সম্পত্তি ওয়াকফ বোর্ডের কাছে গেলে তা বাধ্যতামূলকভাবে যাচাই করার কথাও বলা হয়েছে।

কী বলছে মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ড?

মুসলিম পর্সোনাল ল বোর্ডের তরফ থেকে জানানো হয়েছে, ওয়াকফ বোর্ডের মূল চরিত্র বদল করা হলে তা তারা মানবে না।  ওয়াকফ বোর্ডের ক্ষমতা কমিয়ে দেয়া বা তার উপর বিধিনিষেধ চাপিয়ে দেয়াও তারা মানবেন না।

মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ডের মুখপাত্র এস কিউ আর ইলিয়াস সাংবাদিক সম্মেলন করে বলেছেন, সরকার ওআকফ বোর্ডের স্টেটাস পরিবর্তন করতে চায়। ইলিয়াস বলেছেন, ''আমরা সরকারকে মনে করিয়ে দিতে চাই, মুসলিমরা ধর্মীয় ও কল্যাণমূলক কারণে তাদের সম্পত্তি দান করে, সেগুলি নিয়ন্ত্রণ করার জন্য ওয়াকফ আইন করা হয়েছিল। এই ওয়াকফ বোর্ডগুলি ভারতের সংবিধান ও শরিয়ত অ্যাপ্লিকেশন আইন অনুসারে সুরক্ষিত।''

ইলিয়াসের দাবি, মুসলিমরা ওয়াকফ বোর্ড আইনে সংশোধন মানবেন না।

বিলের প্রতিক্রিয়া

সমাজবাদী পার্টির নেতা অখিলেশ যাদব বলেছেন, ''মুসলিুম ভাইদের কাছ থেকে অধিকার ছিনিয়ে নেয়া, হিন্দু-মুসলিম করা ছাড়া বিজেপি-র আর কোনো কাজ নেই। মুসলিমদের স্বাধীনভাবে তাদের ধর্মপালনের অধিকার আছে। তাদের নিজেদের ব্যবস্থা চালু রাখার অধিকার আছে।''

বিজেপি নেতা ও সাবেক মন্ত্রী মুখতার আব্বাস নাকভি বলেছেন, ওয়াকফ আইনে বদল করার জন্য কী প্রস্তাব করা হয়েছে তা আমি জানি না। তবে এই সংশোধন জরুরি। আমাদের ছোঁয়া যাবে না, এমন মনোভাব থেকে ওয়াকফ বোর্ডের বিষয়টি বিচার করা ঠিক নয়। এই ধরনের চিন্তা দেশ ও সম্প্রদায় কারোর পক্ষেই ভালো নয়। সামগ্রিক সংস্কারকে সাম্প্রদায়িক দৃষ্টিতে দেখা উচিত নয়।''

সিপিআইয়ের সাধারণ সম্পাদক ডি রাজা বলেছেন, মিডিয়া রিপোর্ট থেকে একটা আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। বিজেপি ও আরএসএস তাদের কর্মসূচি পালন করতে চাইছে। এটা দেশের অসাম্প্রদায়িক-গণতান্ত্রিক কাঠামোর পক্ষে ক্ষতিকর

বিজেপি নেতা শেহজাদ পুনাওয়ালা বলেছেন, ''ওয়াকফ এখন ১০-১৫টি অত্যন্ত প্রভাবশালী পরিবারের জমিদারিতে পরিণত হয়েছে। এখানে কোনো স্বচ্ছতা নেই, দায়বদ্ধতার বিষয় নেই। লাখ লাখ কোটি টাকার সম্পত্তি বোর্ডের হাতে আছে। অথচ তাদের আয় বছরে দুইশ কোটি টাকা।''

এআইএমআইএম নেতা আসাদুদ্দিন ওয়েইসির বক্তব্য, ''বিজেপি প্রথম থেকেই ওয়াকফ বোর্ডের বিরোধী। হিন্দুত্ববাদী কর্মসূচির অংশ হিসাবে তারা ওয়াকফকে শেষ করে দিতে চাইছে।''

জিএইচ/এসজি (পিটিআই, এএনআই)