অন্তর্বর্তীকালীন পরমাণু চুক্তি!
১৭ জানুয়ারি ২০১৪২০১৪ সালের ২০শে জানুয়ারি থেকে এই চুক্তি কার্যকর হতে যাচ্ছে৷ চুক্তি অনুযায়ী, ইরান তার পরমাণু কর্মসূচির কিছু কার্যকলাপ সীমিত করবে৷ যেমন পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির উপযোগী ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের মাত্রা কমিয়ে আনবে, যা পাঁচ শতাংশের বেশি হবে না৷ সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের মজুদও কমাবে৷ এর বিনিময়ে ইরানের উপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা শিথিল করা হবে৷ যেমন সোনা, মূল্যবান ধাতু, মোটরগাড়ি ও পেট্রোকেমিকেল রপ্তানির ওপর থেকে কিছু নিষেধাজ্ঞা স্থগিত করা হবে৷ বিদেশে আটকে থাকা ৪.২ বিলিয়ন ডলার রাজস্ব কয়েক দফায় ফিরিয়ে আনতে পারবে ইরান৷ আগামী ছয় মাসে নতুন নিষেধাজ্ঞাও জারি করা হবে না৷
শান্তির আভাস
তেহরান ব্রাসেলস ও ওয়াশিংটনকে নতুন আণবিকনীতি বাস্তবায়নের ব্যাপারে সবুজ সংকেত দিয়েছে৷ বাড়িয়ে দিয়েছে আপোস মীমাংসার হাত৷
প্রশ্ন জাগতে পারে, এই চুক্তি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইরান ও বিশ্ব সমাজের জন্য কতটা জরুরি? উত্তরে বলা যায়, এই চুক্তির মাধ্যমে অ্যামেরিকা ইরানের সাথে আণবিক সংকটের একটা শান্তিপূর্ণ নিষ্পত্তি করতে পারবে৷ প্রেসিডেন্ট ওবামার সামনে এসেছে ইরানের সঙ্গে যুদ্ধের ঝুঁকি রোধ করার এক ঐতিহাসিক সুযোগ৷ আর বিশ্ব সমাজ এই চুক্তির মাধ্যমে কিছুটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে পারবে৷
ইরানের জন্য এই চুক্তি বয়ে আনবে শান্তির বাতাবরণ৷ এনে দেবে অর্থহীন আণবিক কর্মসূচি থেকে সরে আসা ও আন্তর্জাতিক সমাজে সম্পৃক্ত হওয়ার সুযোগ৷
প্রতিরোধের সম্মুখীন
তা সত্ত্বেও দু'পক্ষই প্রতিরোধের সম্মুখীন হতে পারে৷ ইরানের ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনেই-এর অনুমোদন ছাড়া পশ্চিমা বিশ্বের সঙ্গে এই চুক্তি করা সম্ভবই হতো না৷ কিন্তু ইরানের কট্টর রক্ষণশীলদের মধ্যেও রয়েছে নানা মতভেদ৷
বিপ্লবী গার্ডদের একাংশ পশ্চিমের সঙ্গে বিরোধিতার পক্ষপাতী৷ প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট আহমেদিনেজাদের আণবিক নীতি কয়েকজন উচ্চপদস্থ অফিসারের কাছে ছিল খুব আকর্ষণীয়৷এই গোষ্ঠীটি আণবিক নীতির ব্যাপারে নতুন ধারাটি খুব সহজে মেনে নেবে না৷
অ্যামেরিকাতেও সবাই যে এই চুক্তি ব্যাপারে সন্তুষ্ট তা বলা যায় না৷ ওয়াশিংটনের ১০০ জনের মধ্যে ৫৯ জন সিনেটর ইরানের ওপর নিষেধাজ্ঞার ব্যাপারে আরো কড়াকড়ি করা পক্ষপাতী৷ তাঁদের মতে ইরানের বিরুদ্ধে নতুন করে শাস্তিমূলক পদক্ষেপ নেওয়া না হলে, যা অর্জন হয়েছিল তাও বিনষ্ট হবে৷
শান্তির সূচনা
এই অন্তর্বর্তীকালীন চুক্তির মাধ্যমে শান্তির সূচনা সবে শুরু হলো ৷ তবে দীর্ঘস্থায়ী ও আশাপ্রদ ফলাফলের জন্য প্রয়োজন সুচিন্তিত পদক্ষেপ ও ধৈর্য্য৷ রাজনৈতিক অল্পদর্শিতা ও দ্রুত সিদ্ধান্তে দেখা দিতে পারে উল্টো ফল৷ তাই বলা যায় যে, দু'পক্ষের হার্ডলাইনারদের চাপের কাছে নতি স্বীকার করা ঠিক হবে না৷ নিকট ও মধ্যপ্রাচ্যে ভুল করার মতো কোনো সুযোগ আর নেই৷
সংবাদভাষ্য: জামশেদ ফারুকি
অনুবাদ: রায়হানা বেগম
সম্পাদনা: দেবারতি গুহ