এরাই কি এ গ্রহের ‘অপদার্থ’ প্রাণী?
পৃথিবীর প্রতিটি প্রজাতির প্রাণী সৃষ্টির পেছনে একটা লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য আছে—এটা মানুষের চিরায়ত ধারণা৷ আসলেও কি তাই? বাস্তুতন্ত্রে মশার মতো কীটপতঙ্গের অবস্থান কি খুব যৌক্তিক? পান্ডা, কোয়ালা কিংবা মানুষের অবস্থানটা আসলে কী?
‘কেন আমি এখানে?’
পান্ডাপ্রেমীদের জন্য বিষয়টি সুখকর নয়৷ কিন্তু বাস্তবতা তো মানতে হবে৷ সাদা-কালো রঙে আবৃত এই আদুরে প্রাণীটি বাস্তুসংস্থানে কোনো কাজে আসে না৷ খাদ্যশৃঙ্খলের কোনো উপাদান পান্ডার ওপর নির্ভরশীল নয়, আবার কোনো প্রাণীও পান্ডা খায় না৷ কদাচিৎ অন্য প্রাণীর সঙ্গে তাদের যোগাযোগ হয়৷ আর প্রজনন প্রক্রিয়া নিয়েও বেগ পোহাতে হয় পান্ডাকে৷ তবে বাঁশের বংশ বিস্তারে ভূমিকা রাখে এরা৷
খাই-দাই, ঘুমাই
নরম লোমের আরেকটি আদুরে প্রাণী কোয়ালা৷ শাবকবাহী এই জীবকে বলা হয় ‘অস্ট্রেলিয়ার আইকন৷’ প্রতিটি কোয়ালা তার জীবদ্দশার ৮০ শতাংশ সময় ঘুমিয়ে কাটায়৷ বাকিটা? ইউক্যালিপটাস খেতে খেতে বেলা বয়ে যায়৷ যেন এর বাইরে জীবনের কোনো লক্ষ্য উদ্দেশ্য নেই কোয়ালার৷ খাচ্ছে ভালো কথা, কিন্তু ইউক্যালিপটাসের বংশ বিস্তারেও রাখছে না কোনো ভূমিকা৷ খাদ্যশৃঙ্খলের কোনো প্রাণী কোয়ালার ওপর নির্ভর করে না৷ তবে প্রাণীটি বেশ সুন্দর আর আদুরে৷
বন্ধ করো ভোঁ ভোঁ
স্ট্রবেরি জ্যাম দিয়ে পতঙ্গের নৈশভোজে প্রধান অতিথি হতে পারে মাছি! কিন্তু অন্য কোথাও নেই তার গ্রহণযোগ্যতা৷ অপরদিকে, তাদের ভোঁ ভোঁ শব্দ, মলের জন্য ছোটাছুটি আর রোগ ছড়ানোতে সিদ্ধহস্ত বলে মানুষও চরম বিরক্ত৷ উড়ন্ত প্রজাতির এই প্রাণিটির কিছু অবদানও আছে৷ নিজেদের মাকড়সা পাকস্থলিকে সঁপে দেয়া ছাড়াও, ভূমিকা রাখে ফুলের পরাগায়নে৷
বিরক্তিকর রক্তচোষক
ধরুন, কোথাও বসে গ্রীষ্মের মনোরম সূর্যাস্ত দেখছেন আপনি৷ আর ঝাঁক বেধে মশা এলো আপনার রক্ত খেতে৷ কেমন লাগে বলুন তো? মশামুক্ত বিশ্বে বাস করতে পারলে সবাই খুব খুশি হতো৷ মশার কামড় মানেই তো নানা রোগের ঝুঁকি৷ মশাবাহিত রোগ খুব ভয়ঙ্করও হতে পারে, অনেক সময় প্রাণঘাতি৷ তবে মশা আবার পাখি আর মাছের খাদ্যের প্রধানতম উৎস৷ বিজ্ঞানীরা বিশ্বাস করেন, সব মশাকে মেরে ফেলার অল্প সময়ের মধ্যে আবারো নতুন প্রজাতি এসে হাজির হবে৷
ভিমরুল তবে মূল্যবান?
মৌমাছির ক্রুব্ধ খালাতো বা মামাতো ভাই হিসেবে পরিচিত ভিমরুলকে অদরকারি পতঙ্গ হিসেবে দেখা হয়৷ কিন্তু সেটা প্রকৃত সত্য নয়৷ পোকামাকড় আর পরজীবী খেয়ে, তাড়িয়ে সর্বনাশের হাত থেকে ফসল রক্ষা করে ভ ভিমরুল৷ ফুলের রেণু খেয়ে গাছের পরাগায়নে দারুণ ভূমিকা রাখে এই পতঙ্গ৷
খাও আর খাও
এঁটেল পোকা নিয়ে ভাবনা কি? রক্ত শুষে নেয়া ছাড়া, আর কোনো কাজ তারা করে? কিছু সরীসৃপ প্রাণী আর পাখি এই পোকাটি খায়৷ আর বড় প্রাণির রক্ত খেয়ে নিজেকে প্রস্তুত করে এঁটেল পোকা৷ তবে সংকট হলো, এই পোকার মাধ্যমে রোগ ছড়ায়৷ যদিও বন্যপ্রাণী নিয়ন্ত্রণে পোকাটির অবদান আছে৷ অবশ্য তাদের উপকার খুব একটা কাজে না আসলেও, তবুও জীবনের একটা লক্ষ্য তো আছে৷
আমরাই কি তবে সবচেয়ে অপদার্থ প্রজাতি?
সবচেয়ে বিরক্তিকর প্রাণি থেকে শুরু করে মোটামুটি সব প্রজাতির আবাস, অবস্থান আছে এই গ্রহে৷ কিন্তু প্রাণীকূলের মধ্যে আরো একটি প্রাণী আছে যাদের কথা আমরা ভুলতে বসেছি৷ তারা আর কেউ নয়, মানুষ৷ অপদার্থ বা অপ্রয়োজনীয় প্রাণীর জন্য কোনো পুরস্কারের ব্যবস্থা থাকলে, মানুষ সে দৌড়ে এগিয়ে থাকতো৷ কারণ একটা কাজ মানুষ পারে, যে কাজে প্রকৃতির আরো কোনো প্রাণী মানুষকে ডিঙিয়ে যেতে পারবে না৷ সেটা হলো, প্রকৃতি ধ্বংস করা৷