বিচারের মুখোমুখি হচ্ছেন ফরহাদ মজহার!
৮ ডিসেম্বর ২০১৭গত ৩ জুলাই ভোররাতে মোহাম্মদপুর লিংক রোডের হক গার্ডেনের নিজ বাসা থেকে বের হন ফরহাদ মজহার৷ এরপর ভোর ৫টা ২৯ মিনিটে তিনি তাঁর স্ত্রী-কে ফোন করে বলেন, ‘‘ফরিদা, ওরা আমাকে নিয়ে যাচ্ছে৷ ওরা আমাকে মেরে ফেলবে৷’’ পরে তাঁর স্ত্রী ফরিদা আক্তার আদাবর থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন৷ পুলিশ জিডিটি মামলায় পরিণত করে৷ ওই দিন রাত ১১টার দিকে র্যাব যশোরের নওয়াপাড়া থেকে ফরহাদ মজহারকে উদ্ধার করে৷
উদ্ধারের পর ফরহাদ মজহার বা তাঁর পরিবারের সদস্যরা তাঁর নিখোঁজ হওয়ার ব্যাপারে সংবাদ মাধ্যমকে আর কোনো তথ্য দেননি৷ তবে তিনি পুলিশ হেফাজতে থাকা অবস্থায় ‘ভিকটিম’ হিসেবে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিও দেন৷ পুলিশ তখন জানায়, ‘‘জবানবন্তিতে ফরহাদ মজহার নিজেই ব্যক্তিগত প্রয়োজনে বাসা থেকে বের হয়ে যাওয়ার কথা বলেছেন৷’’
গত ৩১ অক্টোবর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের পরিদর্শক মাহবুবুল ইসলাম আদালতে ওই মামলার চূড়ান্ত রিপোর্ট দেন৷ তাতে তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, ‘‘ফরহাদ মজহারকে অপহরণ করে চাঁদা দাবি করার অভিযোগ তদন্তে সত্য প্রমাণিত হয়নি৷’’
একইসঙ্গে তদন্ত কর্মকর্তা মিথ্যা অপহরণের মামলা করে বিভ্রান্ত ও হয়রানি করার অভিযোগে দণ্ডবিধির ২১১ ধারায় ফরহাদ মজহার ও ১০৯ ধারায় তাঁর স্ত্রী ফরিদা আক্তারের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের অনুমতি চান৷
বৃহস্পতিবার ফরিদা আক্তার ঢাকা মহানগর হাকিম খুরশিদ আলমের আদালতে হাজির হয়ে ফাইনাল রিপোর্টের বিরুদ্ধে নারাজির আবেদন জানাতে ৯ জানুয়ারি পর্যন্ত সময় চান৷
একই দিন বিকেলে ফরহাদ মজহার ও তাঁর স্ত্রী ফরিদা আক্তারের বিরুদ্ধে আদাবর থানায় প্রসিকিউশন মামলারও আদেশ দেন আদালত৷
আদালতের সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা (জিআরও) আদাবর থানার এসআই নিজাম উদ্দীন ডয়চে ভেলেকে বলেনন, ‘‘মিথ্যা তথ্য দিয়ে মামলা এবং হয়রানির অভিযোগে দণ্ডবিধির ২১১ এবং ১০৯ ধারায় ফরহাদ মজহার ও তাঁর স্ত্রী ফরিদা আক্তারের বিরুদ্ধে প্রসিকিউশন মামলা দায়েরের অনুমতি দিয়েছে৷ এখন থানা আদালতের আদেশ অনুযায়ী প্রসিকিউশন পাঠাবে৷ আদালত তার ভিত্তিতে বিচার করবেন৷ তাঁরা মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর তথ্য দেয়ার অভিযোগে অভিযুক্ত হবেন৷ তবে এখনো থানা প্রসিকিউশনের প্রক্রিয়া শুরু করেনি৷’’
মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করার জন্য দণ্ডবিধির ২১১ ধারায় ২ বছরের সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদণ্ড বা জরিমানা বা উভয় প্রকারের শাস্তির বিধান রয়েছে৷ ১০৯ ধারা সহায়তার অভিযোগ৷ এটা প্রমাণিত হলে ২১১ ধারার সমান শাস্তি৷
ফরহাদ মজহারের স্ত্রী মানবাধিকার কর্মী ফরিদা আক্তার ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমরা নারাজি আবদেনের জন্য সময় চেয়েছি৷ আদালত আমাদের ৯ জানুয়ারি পর্যন্ত সময় দিয়েছে৷ পুলিশ তাদের ফাইনাল রিপোর্টে বলেছে, ফরহাদ মহজার অপহরণ হননি৷ আমরা মিথ্যা তথ্য দিয়েছি৷ কিন্তু পুলিশ তো এটাও বলছে না যে, তাহলে কী ঘটেছিল৷ আমরা এ কারণেই নারাজি দিচ্ছি৷ আমাদের কাছে সব রিপোর্ট নাই৷ তবে সময় আছে৷ এরমধ্যে আমরা নারাজি দিতে পারব৷’’
আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘মামলা তো আমি করিনি৷ আমি পুলিশের কাজে সহায়তার জন্যই জিডি করেছি৷ যেসব তথ্য পুলিশ চেয়েছে সব তথ্য দিয়েছি৷ পুলিশই জিডি-কে মামলায় রূপান্তর করেছে৷ আমরা এখন আইনি প্রক্রিয়ার মধ্যে আছি। আমাদের রক্ষার জন্য আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই চেষ্টা করব৷’’
এদিকে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ কমিশনার(মিডিয়া) মাসুদুর রহমান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এটি অধর্তব্য অপরাধ৷ এ কারণে থানায় কোনো আলাদা এজাহার হবে না৷ এ ধরনের মামলাকে বলে নন এফআইআর মামলা৷ থানা থেকে প্রসিকিউশন পাঠানো হবে৷ ওই প্রসিকিউশনের ভিত্তিতে আদালত বিচার কার্যক্রম পরিচাললানা করবেন৷’’
তিনি আরেক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘‘ফরহাদ মজহার ও তাঁর স্ত্রী'র বিরুদ্ধে আইনগত প্রক্রিয়া অনুসরণ করেই পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে৷ থানা পুলিশ কোনো মামলার করেনি৷ ফরিদা আক্তার যে জিডি করেছেন, তা-ই মামলায় রূপান্তরিত হয়েছে আইন অনুসরণ করে৷ এখানে আইনের বাইরে কিছু করা হয়নি৷’’
প্রিয় পাঠক, আপনি কিছু বলতে চাইলে লিখুন নীচে মন্তব্যের ঘরে...