‘‘এঞ্জেল অফ করাচি’’
৭ সেপ্টেম্বর ২০১৪আজ যাকে ‘‘করাচির দেবদূত'' কিংবা ‘‘পাকিস্তানের মাদার টেরেসা'' বলা হয়ে থাকে, সেই রুট ফাও-কে এই মুসলিম প্রধান দেশে রাষ্ট্রমন্ত্রীর মর্যাদাধারী সরকারি উপদেষ্টার পর্যায়ে উন্নীত করা হয়েছে – ১৯৭৯ সালে৷ তার ৩৫ বছর পরেও রুট ফাও রোগী দেখছেন; কুষ্ঠ, যক্ষ্মা ও দৃষ্টিহীনতার বিরুদ্ধে সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন৷ আগামী মঙ্গলবার (৯ সেপ্টেম্বর) তিনি ৮৫ পূর্ণ করবেন৷
রুট ফাও আসলে করাচিতে এসেছিলেন শুধু ভারতে যাবার ভিসা করানোর জন্য৷ কুষ্ঠরোগের সেই প্রথম অভিজ্ঞতা তিনি তাঁর একটি বইতে বর্ণনা করেছেন: ‘‘চিকিৎসা নেই, ওষুধপত্র নেই৷ শেষ অবধি পঙ্গু, অঙ্গহীন, বীভৎস অবস্থায় কোনো বড় শহরের পথে ভিক্ষা করে, কুষ্ঠরোগীদের বস্তিতে অবর্ণনীয় পরিস্থিতিতে বাস করা৷'' এই দুর্ভাগা মানুষদের কল্যাণে নিজের জীবন উৎসর্গ করেছেন রুট ফাও, যাঁর সম্পর্কে কাপ আনামুর ত্রাণ সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা রুপ্যার্ট নয়ডেক বলেছেন, ‘‘বাস্তবে উনি আমার আদর্শ৷ ওঁর চেয়ে বড় কেউ নেই৷''
রুট ফাও-এর জন্ম ১৯২৯ সালে, জার্মানির লাইপসিগ শহরে৷ ডাক্তারি পড়ার সময়েই তিনি একটি খ্রিষ্টীয় মঠে ‘নান' হিসেবে যোগদান করেন৷ তাঁর ৮৫তম জন্মদিন উপলক্ষ্যে জার্মান সংবাদ সংস্থা ডিপিএ তাঁকে টেলিফোন করলে পর রুট বলেছেন, ধর্মবিশ্বাসই তাঁকে সব হতাশার হাত থেকে বাঁচিয়ে রেখেছে: ‘‘সেই কারণেই আমি আজও বেঁচে রয়েছি৷''
করাচিতে গোড়ায় বস্তির একটি টিনের ঘরেই রোগী দেখতেন রুট৷ পরে ইউরোপ থেকে অর্থসাহায্য আসতে শুরু করলে পর কুষ্ঠরোগীদের জন্য একটি হাসপাতাল তৈরি করেন৷ সেই হাসপাতালই পাকিস্তানে কুষ্ঠ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির প্রাণ ও প্রেরণা হয়ে দাঁড়ায়৷ আনন্দের কথা: ১৯৯৬ সাল যাবৎ এই বিভীষণ রোগের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়েছে৷
দেশে-বিদেশে বহু সম্মানে ভূষিত হয়েছেন রুট৷ পাকিস্তান তাঁকে সাম্মানিক নাগরিকত্ব দিয়েছে, জার্মানি দিয়েছে সর্বোচ্চ নাগরিক সম্মান৷ সম্প্রতি ‘দেশে' ফিরে রুট ফাও-কে বলতে শোনা গেছে: ‘‘যা প্রয়োজন ছিল, আমি শুধু তা-ই করেছি৷'' ৮৫তম জন্মদিনে তাঁর কোনো বিশেষ ইচ্ছা কিংবা অভিলাষ আছে কি?
‘‘আমার যতজন রোগী, ঠিক ত-তগুলো ইচ্ছে,'' বলেছেন রুট৷
এসি/ডিজি (ডিপিএ)