ভেনেজুয়েলায় রাজনৈতিক সংকট

ঘরে-বাইরে কোণঠাসা হয়ে পড়লেও এখনো হার মানতে রাজি নন বিতর্কিত নির্বাচনে জয়ী ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো৷ দেশের সামরিক বাহিনী তাঁর প্রতি প্রকাশ্যে সমর্থন জানানোর ফলে তিনি কড়া হাতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে চাইছেন৷ প্রতিরক্ষামন্ত্রী জেনারেল ভ্লাদিমির পাদ্রিনো এবং ৮ জন জেনারেল মাদুরোর প্রতি পূর্ণ আনুগত্য দেখিয়েছেন৷ তবে সেনাবাহিনীর নীচের স্তরে সরকারের প্রতি সমর্থন নিয়ে সংশয় রয়েছে৷

অন্যদিকে বিরোধী নেতা ও স্বঘোষিত অন্তর্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্ট হুয়ান গুয়াইদো নিজের কর্তৃত্ব কায়েম করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন৷ অ্যামেরিকাসহ একাধিক আন্তর্জাতিক শক্তির সমর্থন নিয়ে তিনি মাদুরোকে সরাসরি চ্যালেঞ্জ করে চলেছেন৷ রাজপথে এই দুই নেতার সমর্থকদের প্রতিবাদ বিক্ষোভের জের ধরে নিহতের সংখ্যা আপাতত ২৬৷

মার্কিন প্রশাসন বিরোধী শক্তির প্রতি জোরালো সমর্থন দেখানোয় এবং প্রয়োজনে সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত দেওয়ায় বেজায় ক্ষুব্ধ মাদুরো৷ তিনি রাজধানী ও অন্যান্য শহরে মার্কিন দূতাবাসের সব দফতর বন্ধ করার ঘোষণা করেন৷ মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দূতাবাসের বেশিরভাগ কর্মীকে ভেনেজুয়েলা ছাড়ার নির্দেশ দিলেও ৭২ ঘণ্টার মধ্যে তাঁদের বহিষ্কারের নির্দেশ পালন করতে প্রস্তুত নয়৷ ট্রাম্প প্রশাসন জানিয়েছে, অন্তর্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্ট গুয়াইদোর প্রশাসনের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখতে কূটনীতিকরা ভেনেজুয়েলায় থাকবেন৷ ভেনেজুয়েলার পেট্রোলিয়াম বিক্রির অর্থ থেকে মাদুরোকে বিচ্ছিন্ন করার উদ্যোগও নিচ্ছে ওয়াশিংটন৷ সেই অর্থ গুয়াইদোর প্রশাসনের হাতে তুলে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন মার্কিন জাতীয় উপদেষ্টা জন বোল্টন৷ তবে তিনি স্বীকার করেছেন, এমন প্রক্রিয়া অত্যন্ত জটিল৷

রাশিয়া ও চীন মাদুরো প্রশাসনের প্রতি তাদের সমর্থন ব্যক্ত করেছে৷ রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিন টেলিফোনে মাদুরোর সঙ্গে কথা বলেন৷ বাইরে থেকে ভেনেজুয়েলায় সংকট সৃষ্টি করা হয়েছে বলে তিনি অভিযোগ করেন৷ চীনও ভেনেজুয়েলার অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের অভিযোগ জানিয়েছে৷ উল্লেখ্য, রাশিয়া ও চীন অর্থনৈতিকভাবে বিপর্যস্ত ভেনেজুয়েলাকে প্রয়োজনীয় ঋণ ও অস্ত্র সরবরাহ করে৷ বিশেষ করে চীন সে দেশে বিশাল মাত্রায় বিনিয়োগ করে এসেছে৷ সে দেশের পেট্রোলিয়াম শিল্পেও চীনের বড় অবদান রয়েছে৷  মেক্সিকো, কিউবা ও বলিভিয়ার বামপন্থি প্রশাসনও মাদুরোর প্রতি সমর্থন জানিয়েছে৷ তুরস্কের সঙ্গেও মাদুরো প্রশাসনের ঘনিষ্ঠ বাণিজ্যিক সম্পর্ক রয়েছে৷

এমন পরিস্থিতিতে ভেনেজুয়েলার সংকটের শান্তিপূর্ণ সমাধানের লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না৷ ট্রাম্প প্রশাসনের সমর্থন পাওয়ায় দেশের মধ্যে অনেকে বিরোধী নেতা হুয়ান গুয়াইদোকে অ্যামেরিকার চর হিসেবে তুলে ধরছে৷ অন্তর্কলহ বন্ধ করে তিনি বিরোধী শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ করতে সমর্থ হলেও সামরিক বাহিনীর সমর্থন আদায় করতে ব্যর্থ হয়েছেন তিনি৷ তবে মাদুরোর প্রতি তিনি কিছুটা সহযোগিতার হাতও বাড়িয়ে দিয়েছেন৷ মাদুরো স্বেচ্ছায় ক্ষমতা ছাড়লে তাঁর জন্য ‘অ্যামনেস্টি' বা সাধারণ ক্ষমার ব্যবস্থার চেষ্টা করবেন বলে জানিয়েছেন গুয়াইদো৷

এসবি/এসিবি (এএফপি, রয়টার্স)