একের পর এক গণপিটুনির ঘটনা পশ্চিমবঙ্গে
খাস কলকাতা শহরের ছাত্রাবাসে গণপিটুনির ঘটনা ঘটেছে। পুলিশ একাধিক ব্য়ক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে।
কলকাতায় গণপিটুনির ঘটনা
গণপিটুনির ঘটনা এবার খাস কলকাতায়। মধ্য কলকাতার বৌবাজারের ছাত্রাবাসে গণপিটুনিতে এক জনের মৃত্যু হয়েছে। মোবাইল চোর সন্দেহে তাঁকে মারধর করা হয়েছে বলে অভিযোগ। ঘটনায় ছাত্রাবাসের ভিতর থেকে ১৫-১৬ জনকে আটক করে পুলিশ। পরে তাদের মধ্যে থেকে ১৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানায় পুলিশ।
পুলিশের বয়ান
পুলিশের তরফে জানানো হয়েছে, মৃতের নাম ইরশাদ। তার বয়স ৩৭ বছর। চাঁদনি চক এলাকায় একটি টিভি মেরামতির দোকানে কাজ করতেন তিনি। শুক্রবার তাকে বৌবাজারের উদয়ন ছাত্রাবাসে ধরে নিয়ে গিয়ে মারধরের অভিযোগ উঠেছে।
মোবাইল ফোন চুরি
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার হস্টেলের এক আবাসিকের মোবাইল ফোন চুরি যায়। থানায় ফোন চুরির অভিযোগ করা হয়েছিল বলে খবর। শুক্রবার সকালে হস্টেলের বিপরীতে এক দোকান মালিক আবাসিকদের ইশারায় বলেন, ইরশাদ এলাকায় ঘুরঘুর করছে’। অভিযোগ, দোকানি বলার পরেই হস্টেলের সামনে ফুটপাথ থেকে ইরশাদকে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যায় ছাত্রেরা। সকাল সাড়ে ৮টা নাগাদ এই ঘটনা ঘটে।
পুলিশের খবর
ইরশাদ আলম চাঁদনি চক এলাকায় একটি টিভি সারাইয়ের দোকানে কাজ করতেন। হস্টেলে আটক থাকা অবস্থায় তিনি দোকানের মালিক মহম্মদ ইমরানকে ফোনে ব্যাপারটি জানান। দোকানের মালিকই পুলিশে খবর দেন বলে জানা যাচ্ছে।
হস্টেলে ঢুকতে বাধা
খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছয় বৌবাজার থানার পুলিশ। তারা হস্টেলে ঢুকতে চাইলে জুরিসডিকশনের যুক্তি দেখিয়ে প্রথমে গেট খোলা হয়নি বলে অভিযোগ। তার পর ঘটনাস্থলে পৌঁছয় মুচিপাড়া থানার পুলিশ। তাদের জন্যও দরজা খোলা হয়নি বলে অভিযোগ।
দোতলায় মারধর
অনুমান, দোতলায় মারধর করার পর সিঁড়ি দিয়ে নীচে নামিয়ে আনা হয় ইরশাদকে। এর পর তাকে উদ্ধার করে পাশেই মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায় পুলিশ। সেখানে চিকিৎসক তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।
প্রাথমিক তদন্ত
মৃতের স্ত্রী থানায় অভিযোগ করতে যান। পুলিশ তদন্তে নেমে হস্টেলে গিয়ে ১৫-১৬ জনকে আটক করে। প্রাথমিক তদন্তের পর পুলিশ জানায়, মৃতের পায়ে আঘাত লেগেছে। হস্টেলে তল্লাশি চালিয়ে একাধিক ব্যাট এবং লাঠি উদ্ধার করেছে পুলিশ। সেগুলি দিয়েই যুবককে মারধর করা হয়েছিল কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
আদালতে হাজির
শনিবার তাদের ব্যাঙ্কশাল আদালতে হাজির করানো হয়েছিল। পুলিশের তরফে ১৪ দিনের হেফাজতের আবেদন করা হয়। আদালত জানিয়েছে, আপাতত আগামী ৪ জুলাই পর্যন্ত ধৃতদের পুলিশি হেফাজতে থাকতে হবে।
গ্রেপ্তার ছাত্র
এই ঘটনায় যে ১৪ জনকে শুক্রবার গ্রেফতার করেছে মুচিপাড়া থানার পুলিশ, তারা সকলেই কোনও না কোনও কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক কিংবা বর্তমান ছাত্র। উদয়ন হস্টেলের আবাসিক তারা। পুলিশ জানিয়েছে, ধৃতদের বেশির ভাগের বয়স ২২ থেকে ২৪ বছর। দু’-এক জন ২৭- ২৮ বছরের যুবকও আছেন। তারা কেউ প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র, কেউ রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা সংস্কৃত কলেজের ছাত্র।
প্রেসিডেন্সির প্রাক্তনীও গ্রেপ্তার
প্রেসিডেন্সি এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তনীও রয়েছেন ধৃতদের তালিকায়। ধৃতেরা ঝাড়গ্রাম, নদিয়া, হুগলি, মুর্শিদাবাদ, জলপাইগুড়ি, দক্ষিণ দিনাজপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর এবং কোচবিহারের বাসিন্দা। সকলেই পড়াশোনার সূত্রে কলকাতায় এসেছিলেন।